সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা অস্থিরতার মধ্যে গত শনিবার তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলের কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ, দলীয় এমপি, স্বতন্ত্র এমপি ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি, জেলা-উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ তিন হাজারের অধিক নেতা এতে অংশ নেন। সভায় স্বতন্ত্র বনাম দলীয় এমপিদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনসহ জেলা-উপজেলার সম্মেলন করার জোরালো তাগিদ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সৃষ্ট দূরত্ব ঘোচানোর তাগাদা দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, এবারের নির্বাচন স্বতন্ত্র ও দলীয়ভাবে করতে গিয়ে অনেকের মন কষাকষি, নানা রকম কিছু হয়ে গেছে। যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে, এখন ভুলে যেতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। যদি কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেটা সমাধানের জন্য আমরা আছি, কেন্দ্রীয় কমিটি করবে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোনো আত্মঘাতী সঙ্ঘাত যেন না হয়। উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এই নির্বাচনে কোনো সঙ্ঘাত চাই না। যিনি এর সাথে জড়িত থাকবেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। তা ছাড়া সরকারের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বকে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে দেখানোর একটা চাপও ছিল। ওই চাপ সামাল দিতে গিয়ে অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে দলের সকল প্রার্থীর জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া হয়। ওই নির্দেশানর আলোকে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে উন্মুক্তভাবে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে বেশির ভাগ আসনে দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়াই করেছে। এই কাজটি করতে গিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কয়েকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও নিজেদের মধ্যে সঙ্ঘাত সংঘর্ষ হয়েছে, হামলা মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। যদিও নির্বাচনে দলের ৬২ জন স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ মনকষাকষি এখনো রয়ে গেছে, তৃণমূল পর্যায়ে তৈরি হয়েছে দূরত্ব।
আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ (শেষ) ধাপের ভোট হবে ২৫ মে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন গতবার প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত হলেও এবার দলীয়ভাবে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। ওই নেতাদের মতে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশগ্রহণ না করার একটা আশঙ্কা রয়েছে। কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করেনি। এ জন্য দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলে সব দলেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। তখন নির্বাচন হবে প্রাণবন্ত। এ ছাড়াও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে ওই নির্বাচন কেন্দ্রিক যত সঙ্ঘাত সংঘর্ষ হবে তার দায়ভার বর্তাবে দলের ওপরে। সেই জায়গাতে দলীয় প্রতীক থেকে সরে এসে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়ে দল ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে। যদিও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব ও সঙ্ঘাতের জের আগামীতে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পড়ার বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। যার ফলে উন্মুক্তভাবে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের ওই নির্বাচনে যাতে জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব না পড়ে সেই জায়গা থেকে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাত নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য কেন্দ্র থেকে জোরালো তাগাদা দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিক ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়ে কিছুটা মনোমালিন্য, মনকষাকষি তৈরি হয়েছে। এসব দূরত্ব নিরসন করে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, গত নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। আগামীতেও যে যাই বলুক তার তোয়াক্কা না করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা যাতে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে- সেই নির্দেশনা দিয়েছেন।
নয়াদিগন্ত