Site icon The Bangladesh Chronicle

তত্ত্বাবধায়কেই সমাধান দেখছেন আইনজ্ঞরা

তত্ত্বাবধায়কেই সমাধান দেখছেন আইনজ্ঞরা। – ছবি : সংগৃহীত

নির্বাচনকালীন সরকার সর্ম্পকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের একটি বক্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দেশের শীর্ষ আইনবিদরা। তারা মনে করেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ চায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দেশে শান্তির জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন প্রয়োজন। বর্তমান অবস্থায় একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারেই সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে হবে। এছাড়া যারা ভোটদাতা তাদের মধ্যেও একটা জরিপ করা যেতে পারে। তা হলে বোঝা যাবে মেজরিটি ভোটার কী চায়।

নির্বাচনকালীন সরকার সর্ম্পকে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন কখন নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন। তিনি যখন মনে করবেন নির্বাচনের আগে একটি ছোট সরকার করতে চান এবং তারপর তিনি তার সরকার গঠন করবেন। গত ৪ জুন রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তবে প্রধানমন্ত্রী যা করবেন সেটাই দেশের জন্য একমাত্র আইনগত অবস্থান না বলে মনে করেন ১৯৮৩-৮৪ সালের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় দেশে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয়েছে। কারণ একপক্ষ চাচ্ছে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যা করবেন সেটাই একমাত্র আইনগত অবস্থান না। দেশের জন্য উত্তম অবস্থান হল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেটা তুলে দেয়া হয়েছে, দেশের বেশিরভাগ লোক চায় যে এটা আবার আনা হোক। এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা হোক দেশের শান্তির জন্য। অন্যথায় দেশে রক্তপাত হবে। হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে। তার জন্য দায়ী থাকবেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারই একমাত্র সমাধান।

একদিকে সরকার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলছে, অন্যদিকে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে এ অবস্থায় সমাধানের পথ কী ? কোন প্রক্রিয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, এখানে যারা ভোটদাতা তাদের মধ্যে একটা জরিপ করা যায় কি না, তা হলে বোঝা যাবে মেজরিটি কী চায়। তিনি বলেন, জরিপটা করা দরকার, যারা ভোটার তারা কী চাইছে তা জানতে। সেই জরিপের জন্য একটি টিম তৈরি করা দরকার।

অন্যর এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সেভাবে স্বচ্ছ নাও হতে পারে। প্রশ্নবোধক থেকে যায়। সম্ভব-অসম্ভবের বিষয় সেখানে প্রশ্নবোধক থেকে যায়।

তিনি বলেন, প্রশ্নবোধক থাকতে পারে, সেখানে আমাদের জনগণ যদি পাবলিক অপিনিয়ন সৃষ্টি করে, এই আলোচনা সেখানে সম্ভব হতে পারে। সেজন্য কমিশনকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বার এডহক কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহসিন রশিদ বলেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হলে এসব চালবাজিতে সমাধান হবে না। সমাধানের সব পথ আছে। প্রয়োজন আন্তরিকতা।

তিনি বলেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেও পথ আছে। পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতাকে প্রধানমন্ত্রী করে, তিনি যারা ইন্ডিপেন্ডেন্ট মাইন্ডের তাদের নিয়ে একটি নির্বাচনকালীন ক্যাবিনেট করতে পারেন। সেখানে সরকারি দল, বিরোধী দলের প্রতিনিধি থাকবে। বিএনপি থেকে মন্ত্রিসভায় নয়, উপদেষ্টা করতে পারবেন। করলে তো করা যায়। সংবিধানের মধ্য থেকেই করা যায়।

গত ৪ জুন রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন কখন নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন। তিনি যখন মনে করবেন নির্বাচনকালীন একটি ছোট সরকার করতে চান তখন তিনি তার সরকার গঠন করবেন। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে কোনো অস্পষ্টতা নেই। কারণ প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই বলে দিয়েছেন নির্বাচনকালীন সরকারের কথা। ওই সরকারে কারা কারা থাকতে পারেন এই রূপরেখাও তিনি দিয়েছেন।

Exit mobile version