Site icon The Bangladesh Chronicle

ঢাবিতে রমজানের আলোচনা নিয়ে বিতর্ক, প্রশাসনের ব্যাখ্যা

পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে একাধিক ঘটনায় আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও ছাত্রলীগের হামলায় আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কর্তৃক ইস্যুকৃত একটি চিঠির কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন। যদিও প্রশাসন বলছে ইস্যুকৃত চিঠির অপব্যাখ্যা করা হয়েছে।

রমজানের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের নামাজ ঘরে আইন বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী প্রোডাক্টিভ রমাদান নামক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গেলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৫ই মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মাকসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন, হলের প্রভোস্ট, বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের নির্দেশনা দেয়া হয়- তারা যেন এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠানের আর অনুমতি না দেন।

চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী পূর্ব অনুমতি না নিয়ে ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ শিরোনামে একটি সেমিনার আয়োজনের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়স্থ বঙ্গবন্ধু টাওয়ার ভবনে জমায়েত হয়। ফলে সেখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে এবং আইন অনুষদের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেছে। পরবর্তীতে কিছু রাজনৈতিক সংগঠন ও রাজনৈতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি তদন্ত করে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করছে।

চিঠিটি প্রকাশ্যে আসার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন প্রকারান্তরে ক্যাম্পাসে মুসলিম ধর্মের আচার অনুষ্ঠান বন্ধের পাঁয়তারা করছে প্রশাসন। যদিও প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মাকসুদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা শুধু ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ বা এ ধরনের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি আয়োজনের ক্ষেত্রে দেয়া হয়েছে। কোনো ছাত্র সংগঠনই এ ধরনের ব্যানারে কোনো আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে করতে পারবে না। বিশৃঙ্খলা এড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

কিন্তু চিঠিটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে ও সমালোচনা তীব্র হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, সমপ্রতি কয়েকটি পত্রিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রমজানের অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রমজানের আলোচনা সম্পর্কিত অনুষ্ঠান আয়োজনে কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন। প্রকৃতপক্ষে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কখনো রমজানে শান্তিপূর্ণ ও ইতিবাচক অনুষ্ঠান আয়োজনে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বলা বাহুল্য, প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আসছেন। কতিপয় রাজনৈতিক সংগঠনের অনুসারীরা পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দু-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে, ফলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে প্রক্টর অফিস থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে রমজানের অনুষ্ঠান আয়োজনে ‘নিষেধাজ্ঞা’ শব্দটি কোথাও উল্লেখ নেই। পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে এ রকম অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে, যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়।
ব্যাখ্যায় কতিপয় রাজনৈতিক সংগঠনের অনুসারী বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে জানতে চাইলে জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলম বলেন, কতিপয় ছাত্র সংগঠন দ্বারা ছাত্রদল, ছাত্রলীগ কিংবা অন্য কোনো নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনের নাম বোঝানো হয়েছে তা আমরা বলবো না। তবে এর মাধ্যমে অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ওইসব সংগঠনের কথা বলা হয়েছে।

এর আগে প্রথম রমজানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মিলিত ইফতারে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে গণইফতারের আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। এর পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু টাওয়ার’ ভবনের মসজিদে রমজান নিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পূর্ব নির্ধারিত আলোচনা সভায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এতে অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। শিক্ষার্থীদের ওপর  ছাত্রলীগের হামলায় ক্যাম্পাসের সমালোচনার ঝড় ওঠে, প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দেয়। কিন্তু প্রশাসন বিচার না করে উল্টো এ ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি না দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়।

এ ব্যাপারে আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর এহসানুল হক জোবায়ের মানবজমিনকে বলেন, প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেবে এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে মাননীয় ডিন মহোদয়ের এই চিঠির জবাব দেয়ার জন্য আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষ নই। বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক, সামাজিক, এলাকাভিত্তিক অনেক অনুষ্ঠানেই অংশগ্রহণ করে। যেহেতু সেগুলোর সঙ্গে সরাসরি বিভাগের সংশ্লিষ্টতা নেই, তাই এ ব্যাপারে তথ্য দেয়াটা আমার কিংবা বিভাগের এখতিয়ারে পড়ে না।

manabzamin

Exit mobile version