ঢাকায় গণপরিবহনের নতুন ব্যবস্থাপনা হয়নি ৫ বছরেও

ঢাকায় গণপরিবহনের নতুন ব্যবস্থাপনা হয়নি ৫ বছরেও – ছবি – সংগৃহীত

রাজধানীর যানজট নিরসনে প্রায় পাঁচ বছর আগে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক গণপরিবহন পরিচালনার কথা জানানো হয়েছিল। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক এ সময় পরবর্তী এক বছরের মধ্যে নগরীর মধ্যে থাকা বিদ্যামান রুট কমিয়ে পাঁচ রঙের বাস পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছিলেন; কিন্তু এখনো আলোর মুখ দেখেনি সে প্রকল্প। তবে সম্প্রতি কাজের গতি বেড়েছে। ঢাকার দুই মেয়র দ্রুততম সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এতে নগরবাসীর মনেও আশার সঞ্চার হয়েছে।

আনিসুল হক ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র নির্বাচিত হন। এর মাত্র আট মাস পরই ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি ঢাকার যানজট নিরসনে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক গণপরিবহন পরিচালনার ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি নতুন তিন হাজার বাস নামানোর কথা জানিয়ে বলেন, ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যেই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু এরপর দীর্ঘ সময় চলে গেছে; কিন্তু সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর আনিসুল হকের মৃত্যুর পর এ প্রকল্প ঢিমেতালে চলতে থাকে। মাঝে দু-তিনটি এলাকায় বিআরটিসির কিছু নতুন বাস নামানো হলেও তা রাজধানীর যানজট কমাতে পারেনি।

তবে সম্প্রতি ঢাকার দুই মেয়র এ কার্যক্রমে গতি আনার চেষ্টা করছেন। গত ৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ নগরভবনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ১৪তম সভা শেষে জানানো হয়, আগামী বছরের পয়লা এপ্রিল থেকে ঘাটারচর-মতিঝিল রুটে পাইলট আকারে ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। এ ছাড়া ২২টি কোম্পানি গঠন ও ৪২টি রুটও নির্ধারণ করা হয়। সভা থেকে ঢাকার মধ্যে থাকা মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল রাজধানীর বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। এর পরিবর্তে প্রথমে ১০টির কথা বলা হলেও পরে ঢাকার বাইরে চারটি স্থানে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুসারে গতকাল দুই মেয়রসহ বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে মেয়ররা জানান, নগরীর মধ্যে থাকা তিনটি বাস টার্মিনাল সরিয়ে আপাতত ঢাকার বাইরের চারটি স্থানে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। সম্ভাব্য এসব স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সাভারের হেমায়েতপুর, কেরানিগঞ্জের তেঘরিয়া, কাঁচপুর ও উত্তরার বাটুলিয়া। এ সময় তারা জানান, ঢাকার বাইরে টার্মিনালগুলো নির্মিত হলে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা পরিবহন আর ঢাকায় ঢুকতে পারবে না।

গতকাল উত্তরার বাটুলিয়া এলাকা পরিদর্শন শেষে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বাস রুট রেশনালাইজেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা পুরো গণপরিবহন ব্যবস্থাকে এটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাই। আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। সে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের জন্য যে দশটি স্থানকে নির্বাচন করা হয়েছিল, সেখান থেকে আমরা তালিকা ছোট করে এনেছি। আমরা মনে করেছি, সার্বিকভাবে চারটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। সে পরিপ্রেক্ষিতে আজকে (বুধবার) আমরা বাটুলিয়ায় সরেজমিন পরিদর্শনে এসেছি। সরেজমিন পরিদর্শনের কারণ স্থানগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, বাটুলিয়ার পর আমরা সাভারের হেমায়েতপুর, কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ও কাঁচপুর পরিদর্শনে যাবো। এই চারটি স্থান পরিদর্শনের পর আমরা আগামী জানুয়ারি মাসে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভা দিয়েছি। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। সিদ্ধান্তের পর আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠাব যে, কোনগুলোতে টার্মিনাল স্থাপন করা যাবে। আমাদের লক্ষ্য হলো ঢাকা শহরের ওপর থেকে চাপটা কমিয়ে আনা।

বহির্বিশ্বে আন্তঃজেলা গণপরিবহন শহরের মধ্যে ঢোকে না উল্লেখ করে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, কিন্তু আমরা লক্ষ করি শহরের মধ্যে যে বাস টার্মিনালগুলো আছে, যেমন মহাখালী, সায়েদাবাদ, গাবতলী- আন্তঃজেলা বাসগুলো সেসব টার্মিনাল ব্যবহার করে থাকে। সিটি বাস টার্মিনাল আমাদের কার্যকর নেই। তার মানে যত্রতত্রভাবে সিটি বাসগুলো রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে যানজট সৃষ্টি করে এবং একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে। সবকিছু মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে গণপরিবহনে একটি শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে আমাদের এই কার্যক্রম। আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে, যাতে আগামী বছরের মধ্যে আমরা একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখার আওতায় আসতে পারি।

এ সময় বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম বলেন, বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস্তবায়ন হলে বাইরের বাসগুলো ঢাকা শহরের মধ্যে ঢুকতে পারবে না। শহরের বাস শহরের ভেতরে চলবে এবং শহরের বাইরের বাস অর্থাৎ আন্তঃজেলা বাস একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এসে থেমে যাবে। তিনি বলেন, এখন শহরের বাসের সাথে আন্তঃজেলা বাসের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এতে আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে এবং যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য শহরের বাসকে শহরের ভেতরে চলতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট রুটের মধ্যে চলতে হবে। এ সময় ডিএনসিসি মেয়র আরো জানান, ঘাটারচর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেখানে ১৬০টির বেশি বাস ও ২৯ জনের বেশি মালিকের বাস চলাচল করে। সেটিকে আমরা একটি কোম্পানির মধ্যে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী এপ্রিল থেকে এ রুটে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বাস চলবে।