প্রকাশ : বৃহস্পতিবার ২১ আগস্ট ২০২৫, ২১:৪৫
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের আধিপত্য সবসময় বিদ্যমান ছিল। কিন্তু চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান সেই আধিপত্য তছনছ করে দিয়েছে। ভারতের চাওয়া ছিল ঢাকাকে দিল্লির কথামতো চলতে হবে। ওই চিন্তাকাঠামো থেকে দেশটি এখনো বেরুতে পারেনি। তাই বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তন মেনে নিতে নারাজ ভারত। এখনো ঢাকায় নিজের পছন্দের সরকার চায় দিল্লি।
বাংলাদেশে হারোনো আধিপত্য ফিরে পেতে ভারত বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এর প্রমাণ সংবাদমাধ্যমে বুধবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন। তাতে দেখা যায়, দিল্লিতে শেখ হাসিনার জন্য রাজনৈতিক কার্যালয় খোলা হয়েছে। তিনি সে অফিস থেকে নিয়মিত দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি কয়েক নেতার সাথে সশরীরে বৈঠক করছেন। ইতঃপূর্বে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, কলকাতায় আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় খুলে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এটি নিশ্চিত যে, দিল্লিতে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাবতীয় তৎপরতা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ছকে পরিচালিত হচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্র মতে, বিষয়টি সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। হাসিনা পালিয়ে দিল্লি যাওয়ার পর হিন্দল বিমানঘাঁটিতে তাকে স্বাগত জানান দোভাল। দিল্লিতে শেখ হাসিনার অভিভাবকের দায়িত্বও পালন করছেন এই ব্যক্তি। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত যে দায়িত্বে ছিলেন প্রণব মুখার্জি।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশে ভারত ও আওয়ামীবিরোধী জনমত তীব্র। এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে দীর্ঘমেয়াদে রাখতে হতে পারে। এ বিবেচনায় তার জন্য সচিবালয় স্থাপনসহ দালাইলামা মডেলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে নানা পরিকল্পনায় অগ্রসর হচ্ছে দিল্লি। ভারত যেকোনো পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের পাশে থাকবে- এমন বার্তা দিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের ঐক্য ও মনোবল ধরে রাখতে বিভিন্ন পক্ষকে মাঠে নামিয়েছে।
স্মরণযোগ্য যে, চব্বিশের বিপ্লবের পর থেকে নানাভাবে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক অপচেষ্টা চালায় দিল্লি। কখনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুয়া অভিযোগ, কখনো সীমান্তে হত্যার মাধ্যমে উত্তেজনা তৈরি, আবার শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের অডিও রেকর্ড ফাঁসের মাধ্যমে।
ভারতের নীতিনির্ধারকদের ধারণা ছিল, অব্যাহত চাপে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দিল্লির সাথে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হবে, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে সহজে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করা যাবে এবং দিল্লির প্রভাব পুনরুদ্ধার হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি; বরং ড. ইউনূসের সরকার দিল্লি-নিয়ন্ত্রিত পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসেছে দিল্লিøর নীতিনির্ধারকরা। দিল্লিতে শেখ হাসিনার জন্য রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপন সেই ভাবনা থেকেই। এ পদক্ষেপ ঢাকার প্রতি দেশটির চরম বৈরিতার প্রকাশ। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং অঘোষিত দ্বৈরথের শামিল। দিল্লির এই নতুন হস্তক্ষেপের মোকাবেলায় সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের ঐক্যের বিকল্প নেই। জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষায় অত্যন্ত জরুরি।