যে কোনো সুযোগে তারা রাশিয়া ছাড়া অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোকেও তারা সম্পর্ক বাড়ানোর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। এটা তাদের এই মুহূর্তের অগ্রাধিকার। সমালোচকরা এটাকে যুদ্ধকালীন কৌশল বলছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও বাংলাদেশ প্রশ্নে ইউক্রেনের কোনো রিজার্ভেশন নেই। বরং এ ধরনের ইতিবাচক মনোভাবই রয়েছে কিয়েভের। পেশাদাররা বলছেন- যুদ্ধের কারণে বিপাকে থাকলেও ইউরোপের শস্যভাণ্ডার খ্যাত ইউক্রেন দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না। ক্ষয়-ক্ষতি যাই হোক অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধ বন্ধ হবেই। এটার আভাস ইতিমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। তাই ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশ বা এ অঞ্চলের দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক কমেনি। বরং তা সাম্প্রতিক সময়ে আরও বাড়ছে।
শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইউক্রেন ভুখণ্ডের কমপক্ষে পাঁচশ’ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে উল্লেখ করে এক কূটনীতিক বলেন, দেশটিতে বহু পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল বর্তমান। যেখানে এশিয়া অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে দেশটিতে প্রায় ৩ শতাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ইউরোপের রুটি ঝুড়ি নামে পরিচিত ইউক্রেনের গমসহ দানাদার খাদ্যশস্যের ওপর এশিয়ার বহু দেশের নির্ভরশীলতা রয়েছে। ভবিষ্যতে ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে সঙ্গে যুক্ত হলে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে নতুন ডায়মেনশন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বিবেচনায় এই ক’দিনে ইউক্রেনের শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশের দিকে যেভাবে এগিয়ে এসেছে, ঢাকার তরফেও রেসপন্সে কমতি করা হয়নি।
সে কারণেই জার্মানি সফরকালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন-২০২৪ এর ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ চাওয়ামাত্রই তা বাস্তবায়ন হয়েছে। দুই নেতার সেই বৈঠক নিয়ে মস্কোর অবজারভেশন ছিল। সেগুলো বিবেচনায় নিয়েই বৈঠকটি হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় বের করার আহ্বান রেখেছেন। জেলেনস্কির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন- আমরা সব ধরনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে তিনি যুদ্ধ বন্ধের উপায় খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন। গত শনিবারের ওই বৈঠকে শেখ হাসিনা গাজার নিরপরাধ নারী-পুরুষের ওপর হামলা কীভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের মাধ্যমে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। কিন্তু যুদ্ধে লিপ্ত দেশগুলোর জন্য তা কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না এবং তাদের জনগণকে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হতেই হয়।