- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২২ জুন ২০২১
দেশে দ্রুত গতিতে বাড়ছে করোনার বিস্তার। এত দ্রুত ছড়ানোর পেছনে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টকে (ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট) দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এসব কারণে রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে ঢাকার বাইরের সাত জেলায় আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। ওই সাত জেলায় জরুরি সেবা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কার্যক্রম ছাড়া অন্য সব ধরনের কর্মকাণ্ড এ সময় বন্ধ থাকবে। মূলত বিপজ্জনক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতেই ঢাকার সাথে এই সাত জেলার যোগাযোগ ‘ব্লকড’ রাখার উদ্দেশ্য বলছেন চিকিৎসকরা। যদিও সরকার এই ভয়াবহ ভ্যারিয়েন্টের পরিস্থিতি সম্বন্ধে কিছু বলছে না। নতুন লকডাউনের আওতায় থাকবে মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ জেলা।
রাজধানীতেও অস্বাভাবিক দ্রুত গতির ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে মনে করছেন চিকিৎসকরা। এই ভ্যারিয়েন্টটি কাউকে আক্রান্ত করলে খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে আক্রান্তের ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলে। আইসিডিডিআর,বি’র জিনোম সিকোয়েন্স অনুসারে, বর্তমানে রাজধানীর করোনা আক্রান্তের ৬৮ শতাংশই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত।
গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে চার হাজার ৬৩৬ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছরের ২০ এপ্রিলের পর গতকালই সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হলো। গত ঈদুল ফিতরের পরদিন (১৫ মে) দেশব্যাপী করোনা শনাক্ত ২৬১ জনে নেমে আসে। গতকালের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণের হার ছিল ১৯.২৭ শতাংশ।
সাত জেলায় নতুন করে লকডাউন নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকার বাইরের সাত জেলায় লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। এই সাত জেলায় সবকিছু বন্ধ থাকবে। মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না। শুধু মালবাহী ট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কিছু চলবে না। জেলাগুলো ব্লকড থাকবে। কেউ ঢুকতে পারবে না।’ এসব জেলায় সরকারি অফিস কিভাবে চলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছুই বন্ধ থাকবে।
জানা গেছে, চার পাশের সাত জেলায় লকডাউন করে ঢাকাকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার থেকে ওই সাত জেলায় জরুরি সেবা ও আইনশৃঙ্খলা ছাড়া সবকিছুই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা থাকবে। লকডাউনে বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবে, কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (নদীবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, যদি কোনো লোকাল অথরিটি (স্থানীয় কর্তৃপক্ষ) মনে করে তাদের এলাকায় লকডাউন করা দরকার সেটি তারা করতে পারবেন। সেই অনুমোদন তাদের দেয়া হয়েছে। তবে ঢাকা জেলা নিয়ে শিগগিরই কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না বলে তিনি জানান।
এ দিকে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক বলেন, দেখে-শুনে মনে হচ্ছে বর্তমানকার সংক্রমণের পেছনে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টই দায়ী বলে মনে হচ্ছে। আইসিডিডিআর,বি’র সিকোয়েন্স থেকে এটা বেরিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, টিকা কার্যক্রমকে জোরদার করতে পারলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেয়া যেত।
এ ব্যাপারে ব্রিটেনের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম নয়া দিগন্তকে বলেন, পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড অতি সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়েছে গত এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ১৪ হাজার রোগীর ওপর। এই গবেষণার একটি প্রি-প্রিন্ট তারা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে ১৪ জুন। ফলাফলে দেখা গেছে, যারা অক্সফোর্ডের দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাদের ভেতরে ৯২ শতাংশ কোনো ধরনের মারাত্মক কোভিডে আক্রান্ত হননি বা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। আর যারা টিকাটির এক ডোজ নিয়েছেন, তাদের ৭১ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন। একই ধরনের ফলাফল দেখা গেছে ফাইজারের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও। যারা ফাইজারের দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৯৬ শতাংশ মারাত্মক কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন। আর যারা এক ডোজ নিয়েছিলেন, তাদের ৯৪ শতাংশ মারাত্মক কোভিড থেকে মুক্ত ছিলেন। ড. মেহেদী আকরাম এ ব্যাপারে বলেন, টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে পারলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থেকে বাংলাদেশের মানুষ নিরাপদ থাকতে পারত।