Site icon The Bangladesh Chronicle

ড. ইউনূসের ওপর অবিলম্বে বিচারিক হয়রানি বন্ধের আহ্বান

BOLOGNA, ITALY - JULY 08: Bangladeshi economist Muhammad Yunus Nobel Prize in 2006 for Peace receives the honorary cityzenship of Bologna at Bologna's City Hall on July 8, 2015 in Bologna, Italy. (Photo by Roberto Serra - Iguana Press/Getty Images)

মানবজমিন ডিজিটাল

১৭ জুলাই ২০২৪, বুধবার

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর  চলমান বিচারিক হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য  বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে  সিভিকাস  গ্লোবাল সিভিল সোসাইটি অ্যালায়েন্স (CIVICUS) এবং এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (AHRC) ।

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং সিভিকাসের যৌথ বিবৃতিতে আহ্বান করা হয়েছে- এই মাসে নোবেল বিজয়ী তথা সমাজকর্মী  ইউনূসের আসন্ন বিচারের আগে তার ওপর ওঠা  সমস্ত অভিযোগ  নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করা হোক । মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের  প্রতিষ্ঠাতা।  ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন ইউনূস।  দীর্ঘদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে শত্রু বলে মনে করেন।

বেশ কয়েকবার  তার মৌখিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন  ইউনূস। দুর্নীতি ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। যদিও ইউনূস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,  তার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় হয়রানির পেছনে সরকার জড়িত রয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইউনূসকে ক্রমাগত ভয় দেখানো এবং তার  বিরুদ্ধে প্রায় এক দশক ধরে চলতে থাকা হয়রানির  বিষয়ে  উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘ। তাকে আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ন্যায্য বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পেছনে সরকারের উচ্চস্তরের হাত রয়েছে। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি ইউনূস বাংলাদেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন। প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠনে ব্যর্থতার জন্য তাকে এবং তার তিন গ্রামীণ টেলিকম সহকর্মীকে  ছয়মাসের জন্য জেলে পাঠানো হয়। আপিলের শর্তে  বিচারাধীন অবস্থায় তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয়।

১২জুন ২০২৪  টেলিকম কোম্পানি থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আবারো ইউনূসসহ  আরও ১৩ জনকে  দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ড. ইউনূস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তার বিচার প্রক্রিয়া ১৫ জুলাই থেকে শুরু হবার কথা।  CIVICUS এবং AHRC – এর অভিযোগ  ‘নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারিক হয়রানি  প্রতিশোধমূলক এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।  শেখ হাসিনা সরকারের দ্বারা সুশীল সমাজ ও সমালোচকদের টার্গেটের আরো একটি উদাহরণ। ইউনূসের ওপর  বিচার ব্যবস্থার এই অপব্যবহার  এবং ন্যায়বিচারের নামে এই প্রহসন কর্তৃপক্ষকেঅবিলম্বে  বন্ধ করতে হবে।’

২০২৩  সালের ডিসেম্বরে সিভিকাস মনিটর  বাংলাদেশের ‘নাগরিক স্থানকে’  ( civic space ) সবচেয়ে খারাপ রেটিং দিয়েছে। ২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে সুশীল সমাজ , স্বাধীন সমালোচক এবং বিরোধী রাজনীতিবিদদের ওপর একটি বিশাল সরকারি ক্র্যাকডাউনের ফলে এই অবনমন।  সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিভিকাস মনিটর আদিলুর রহমান খান এবং নাসিরউদ্দিন এলানের মতো অধিকার রক্ষাকর্মীদের  লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত  এক দশকের পুরনো রিপোর্টের জন্য ২০২৩  সালের সেপ্টেম্বরে তাদের দুজনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রের সমালোচনাকারী  সাংবাদিকদের টার্গেট করেছে এবং  মিডিয়া আউটলেটগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। অনলাইনে  হাজার হাজার সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে একটি নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।  বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে তাদের বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে।

সকল প্রকার ভিন্নমতকে দমন  করার জন্য আইনের অপব্যবহার রুখতে হবে। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা মেনে  নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা  এবং  একটি সুশীল সমাজ গঠনের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

Exit mobile version