আট বছরের আবদুল্লাহ আয়াত ঘুমাচ্ছে। একই বিছানায় ১৩ বছরের হেলালুর রহমান সজাগ থাকলেও চোখে–মুখে দুর্বলতার ছাপ। দুজনের হাতেই ক্যানুলা লাগানো, স্যালাইন চলছে। এই দুই শিশু প্রতিবেশী। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত দুজনের ঠাঁইও হয়েছে একই হাসপাতালের মেঝেতে। একই বিছানায়।
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অষ্টম তলায় শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে হেলাল ও আয়াত। গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হয় আয়াত। হেলাল ভর্তি হয় তিন দিন আগে। আজ শুক্রবার সকালে দেখা হয় তাদের সঙ্গে।
আয়াতের মা বৃষ্টি প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন জ্বর ছিল। পরে পেটে পানি চলে আসায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। হেলালেরও পেট ফুলে গেছে বলে জানালেন তার মা আইরিন।
হেলাল ও আয়াতের মতো ৭৬ শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি আছে। ওয়ার্ড ছাড়িয়ে অষ্টম তলার বিভিন্ন জায়গায় রোগী ভর্তি। শিশু ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্নারের পাশেই ডায়রিয়া ও জেনারেল কর্নার। সেখানে সকালে ভর্তি হয়েছে এক বছরের সোইয়বা। ডেঙ্গু হয়েছে কি না, তা জানার জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে।
মেঝেতে একটি বিছানায় রয়েছে সোইয়বা। শিশুটি অনবরত কাঁদছে। জ্বর কমছে না কিছু্তেই। বারবার শরীর মুছে দিচ্ছে বাবা-মা। বিকেলে রিপোর্ট আসবে। তাই সাধারণ কর্নারে ভর্তি রাখা হয়েছে সোইায়বাকে।
ডেঙ্গু থেকে রেহাই পায়নি ২ মাসের শিশু উম্মে হাবিবাও। যাত্রাবাড়ী থেকে আসা শিশুটির মা আলেয়া বলেন, দুদিন আগে শিশুটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। জ্বর ছাড়া আর কোনো উপসর্গ নেই।
সাড়ে চার বছরের সামরিন আক্তারকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এনে ভর্তি করা হয়। ঈদের দিন সামরিনের উপসর্গ দেখা দেয়। যাত্রাবাড়ীতে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসক দেখানো হয়। সামরিনের নানি প্রথম আলোকে বলেন, ওষুধ খাওয়ানোর পর কিছুটা সুস্থও দেখাচ্ছিল। খেলাধুলা করত। কিন্তু গতকাল থেকে জ্বর, বমি ও পেটব্যথা শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় এই শিশুকে।
মুগদা হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক চিকিৎসক মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, আজ সকাল পর্যন্ত ৩৪৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) আছে। এই হাসপাতালে এ বছর ২৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে তিন শিশু রয়েছে।
এবারের রোগীদের নানা রকমের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে বলে জানান এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, বেশির ভাগই হাসপাতালে দেরি করে আসছে। হাসপাতালে তৃতীয়, অষ্টম ও দশম তলায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ১১ তলাও প্রস্তুত করা হয়েছে।