ঢাকা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কারের ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবার একটি সুনির্দিষ্ট সময় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইনটি সংশোধন করার চেষ্টা করা হবে। তবে কোনোভাবেই আইনটি বাতিল করা হবে না। তিনি উল্লেখ করেছেন, এই আইনের সমস্যা দূর করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে।
আজ বুধবার বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ইউনেসকো ঢাকা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং আর্টিকেল নাইনটিন এই সভার আয়োজন করে। প্রতিবছর ৩ মে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সকল প্রকার মানবাধিকারের চালিকা শক্তি’।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অপব্যবহার হয়েছে স্বীকার করে নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের শুরুর দিকে ‘মিসইউজ’ ও ‘অ্যাবিউজ’ হয়েছে, এটি সরকার স্বীকার করে। সরকার উদ্যোগ নেওয়ায় এর অপপ্রয়োগ আগের থেকে হ্রাস পেয়েছে। এর অপপ্রয়োগ আরও কমাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিশুদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবার জন্য গ্রহণযোগ্য আইন করা হবে।
আনিসুল হক বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের সংসদ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি ২–৩ বার বসেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে একটি ‘টেকনিক্যাল নোট’ দিয়েছে। সেটির পর্যালোচনাও প্রায় শেষ। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের চেষ্টা করা হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়নি দাবি করে আইনমন্ত্রী বলেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করতেই আইনটি করা হয়েছে। আইনটির অপব্যবহার কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই আইনে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তা একটি সেলে পাঠানো হয়। সেল পর্যালোচনা করে যদি মামলা করার মতো উপাদান পায়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর আগে সাংবাদিকসহ কাউকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
প্রথম আলোর সম্পাদক ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা করার অধিকার সবার আছে। তবে সত্য তুলে ধরতে হবে। সাত বছরের ছেলের হাতে প্ল্যাকার্ড দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া হলো। তা-ও স্বাধীনতা দিবসের দিনে। এটি যদি অন্যায় না হয়, তাহলে কোনটি অন্যায়? একটি ঘটনার দুটি সাইড (দিক) থাকে। আপনারা দুই সাইডই তুলে ধরবেন। জনগণ ঠিক করবে কোনটি সত্য, কোনটা মিথ্যা, কোনটা ঠিক।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি যেভাবেই ঢেলে সাজানো হোক, তা জনগণের জন্য ভালো হবে না। তাই এটির সংশোধন আমরা মানতে পারব না। আইনটি বাতিলের দাবি জানাই।’
আলোচনায় আরও অংশ নেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্গ ফন লিন্ডে, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুইন লুইস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ।