Site icon The Bangladesh Chronicle

ডলার সংকটের মধ্যে আদানির আরও ৩০০০ কোটি টাকা পরিশোধে চিঠি

দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বিপুল পরিমাণ দেনা নিয়ে বিপাকে পড়েছে। অর্থ সংকটে অভ্যন্তরীণ বেসরকারি কেন্দ্রগুলো বিদ্যুতের দাম যথাসময়ে পাচ্ছে না। আবার মার্কিন ডলারের অভাবে বকেয়া থেকে যাচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাওনা। এমন পরিস্থিতিতেই আদানি পাওয়ার লিমিটেডের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য তিন হাজার কোটি টাকা ছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই টাকায় আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেড এবং দেশীয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির অপরিশোধিত বিল মেটানো হবে।

অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বিদ্যুতের বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য ভর্তুকি হিসেবে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠি পেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এদিকে, ফ্রেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে মার্কিন ডলারে চরম সংকটের মধ্যেও বিদেশি কোম্পানির সাথে ক্রয়চুক্তির অধীনে জুন ২০২৩ থেকে মে ২০২৪ পর্ষন্ত ১২ মাসের বিদ্যুতের চার্জ বাবদ ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি পাওয়ার (ঝড়খন্ড) লিমিটেডের জন্য ১.১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা  ১,২২৯ কোটি ডলারেরও বেশি প্রদেয় অনুমোদন করেছে বাংলাদশে ব্যাংক।

মার্কিন ডলারের সংকট এতোই প্রকট যে, এক ডলারের দাম ধরা হয়েছে ১১০ টাকা । কিন্তু এখন ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খোলার জন্য ১৩০ টাকায় ডলার পাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এখন আকু পেমেন্টের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ান ডলারের নিচে নেমে গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব বাজেটের আওতায় অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয়ের ঘাটতি বাবদ ভর্তুকির অর্থ ছাড়ের জন্য অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ঋণের বিপরীতে ১০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বন্ডের মাধ্যমে দেওয়ার পর ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি এবং আদানিসহ ভারত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ মোট অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ ৪২ হাজার ৭০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি ও দেশীয় আমদানিনির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৯৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, আসন্ন পবিত্র রমজান, সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে জরুরিভিত্তিতে অপরিশোধিত বিল পরিশোধের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ভর্তুকির অবশিষ্ট অর্থ ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকা (৩৫,০০০-১৭,০০০) ছাড় করা প্রয়োজন বলে বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, জরুরিভিত্তিতে এই ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকার মধ্যে আগামী মার্চ মাসের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা, এপ্রিল মাসের জন্য ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, মে মাসের জন্য ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং জুন মাসের জন্য ৪ হাজার ৭০১ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।

সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের মার্চ মাসের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেডের পাওনা পরিশোধ করতে দেড় হাজার কোটি টাকা এবং দেশীয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির অপরিশোধিত বিল পরিশোধের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ মোট তিন হাজার কোটি টাকা জরুরিভিত্তিতে ভর্তুকি হিসাবে ছাড় করার জন্য চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বিপিডিবি। চুক্তি অনুসারে কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ।

নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের সিনক্রোনাইজিং থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে (সিওডি) যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ব্যয় বিপিডিবিকে দিতে হচ্ছে। তবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর আগেই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার যে দাম ধরা হয়েছিল, তা নিয়ে আপত্তি তোলে বিপিডিবি।

এ নিয়ে গত বছরের শুরুতেই আদানির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়। পরবর্তী সময়ে আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে বিপিডিবিকে জানানো হয়, পায়রা ও রামপাল কেন্দ্রের চেয়ে তাদের বিদ্যুতের দাম কম হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহেও দেখা গেছে, বাংলাদেশে আদানি যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে, তা স্থানীয় বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে ইউনিট প্রতি দাম কম পড়েছে। ঝড়খন্ডের গড্ডা থেকে প্রতিদিন ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে।

Bangla outlook

Exit mobile version