Site icon The Bangladesh Chronicle

ডলারের দাম বাজারের ওপর ছাড়া হবে না, গভর্নরের ঘোষণা

বিআইডিএসের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিনের একটি অধিবেশনে (বাঁ থেকে) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন ও সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। আজ ঢাকার একটি হোটেলে
বিআইডিএসের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিনের একটি অধিবেশনে (বাঁ থেকে) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন ও সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। আজ ঢাকার একটি হোটেলেছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ‘ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হবে না। তবে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম বাজারের প্রকৃত দামের কাছাকাছি রাখার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। ডলারের দাম যাতে একটা সীমার মধ্যে ওঠানামা করে, এ জন্য একটা পদ্ধতি বের করতে কাজ চলছে। দেশীয় অর্থনীতিবিদের পাশাপাশি এতে বিদেশি অর্থনীতিবিদদেরও সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, দু-তিন মাসের মধ্যে এই পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হবে।’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তিন দিনব্যাপী উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলনের শেষ দিনে আজ শনিবার অর্থনৈতিক নীতিসংক্রান্ত এক অধিবেশনে তিনি এই মন্তব্য করেন। অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।

অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, চলতি হিসাবে আগে ঘাটতি থাকলেও ইতিমধ্যে এই হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে। মূল সমস্যা এখন আর্থিক হিসাব নিয়ে। এই সমস্যা এসেছে বহিঃস্থ খাত থেকে। বিদেশি বিনিয়োগ ও স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমে যাওয়ায় এবং ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ এটা উদ্বৃত্ত হলে ডলারের দামের ওপর চাপ কমে আসবে।

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। সুদের হার বিবেচনায় নিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ৫২ বছর পর মুদ্রানীতি কমিটির পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার ঠিক করা ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা।

আর্থিক খাত ঠিক করতে সরকারের সায় আছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘আমি দেখছি, আর্থিক খাত ঠিক করতে শক্ত রাজনৈতিক অঙ্গীকার আছে। এটা ব্যাংক কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে দেখা গেছে। সরকারি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এখন এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ তিনজন পরিচালক হতে পারবেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি, কোনো ঘাটতি দেখছি না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার প্রশ্নে গভর্নর বলেন, ‘জাতীয় সংসদ আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, সেটার ব্যবহার আমি করছি কি না, সেটাই বড় বিষয়। যে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি, সেটা নিয়ে চিৎকার করে লাভ নেই। আমাকে আইনে যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছে। এটা প্রয়োগ করছি কি না, সেটা পর্যালোচনা করা যেতে পারে।’

আর্থিক খাতের সমস্যা নিয়েও কথা বলেন আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, আর্থিক খাতে যেসব ইস্যু আছে, সেগুলোর মধ্যে সুশাসন একটি বড় সমস্যা। পাশাপাশি বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ ও অপর্যাপ্ত মূলধন। খেলাপি ঋণ তৈরি হয় সুশাসন না থাকায়। এ ছাড়া পুরোনো ঋণ টেনে আনা হচ্ছে। রাষ্ট্র খাতের ব্যাংক কিছু সরকারি সেবা দিতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে। এর সঙ্গে তৈরি হয়েছে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি। ফলে ঋণ খেলাপি হচ্ছে। বছরের পর বছর নানা ছাড় দেওয়া হলেও খেলাপি ঋণ শুধু বাড়ছে। এখন মনে হচ্ছে এসব ছাড় কোনো কাজে আসেনি। এখন শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে শিগগির রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।

গভর্নর বলেন, ঋণের সুদহারকে বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত করা হয়েছে। সুদের হার গত পাঁচ মাসে আড়াই শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে আমানতের সুদহার বেড়েছে। এতে ৫ মাসে বাজার থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে চলে এসেছে। গত আগস্ট থেকে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। নীতি সুদহার ধারাবাহিক বাড়ানো হয়েছে। ঋণের সুদ ৯ শতাংশ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ হয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন সতর্কতার সঙ্গে ঋণ দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, আগের মতো আর নীতি ছাড় দেওয়া হবে না।

মূল্যস্ফীতির পেছনে অর্থনীতির পাশাপাশি অ-অর্থনৈতিক বিষয়ও আছে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘প্রতিদিন সাত-আট কোটি ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ৭০০-৮০০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে চলে আসছে। সুদের হার বাড়ানো ও টাকা ছাপানো বন্ধের মাধ্যমে টাকাকে ইতিমধ্যে মূল্যবান করা হয়েছে। এর প্রভাব আমরা মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে দেখেছি। এই হার আরও কমবে। মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বরে ৮ শতাংশের ঘরে ও আগামী বছরের জুনে ৬ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।’

প্রথম আলো

Exit mobile version