এইতো সেদিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুদি দোকানে গেলাম সদাইপাতি আনতে। গিয়ে বিবিসিতে শুনলাম প্রেসিডেন্ট জিয়াকে চিটাগং সার্কিট হাউজে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। হাত পা অবশ হয়ে এলো। আমার বয়স তখন নয়। তিনবার মানুষটাকে সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। দুবার কুমিল্লা গুলবাগিচা স্কুলের কাব হিসেবে কেন্দ্রীয় ঈদগাহে রিসিভ করেছিলাম। আরেকবার ঢাকা শিশু একাডেমীতে নাটক প্রতিযোগীতায় তিনি দেখা করতে এসেছিলেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে, সেখানে আমিও ছিলাম। আমার ছোট্ট মনে গভীর দাগ কেটে গেল শহীদ জিয়ার মৃত্যু। জ্ঞান বুদ্ধি হবার পর থেকেই উনার নেতৃত্বের অনুগত সৈনিক হিসেবে নিজেক উৎস্বর্গ করেছি।
ক্ষনজন্মা নেতা হিসেবে মাত্র তিন বছরের শাসনামলে তিনি জাতিকে দিয়েছিলেন অসাধারন কর্মযঁজ্ঞের অনুপ্রেরনা। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আপামর জনসাধারনের মাঝে। এক অদ্ভূত জাগরণের দাবানলে তলাবিহীন ঝুঁড়ির গ্লানি থেকে দেশের সম্মান নিয়ে গেলেন আন্তর্জাতিক দরবারে। ইরাক ইরান ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্ততাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তিনি পৌঁছে গেলেন বিশ্বনেতার কাতারে। দেশকে স্বনির্ভর করার প্রানান্ত চেষ্টা করে গেছেন আমাদের রাখালরাজা। সাধারন মানুষের আবেগের কেন্দ্রবিন্দুতে। নিজের জায়গা করে নিলেন শহীদ জিয়া। দেশের প্রায় সবধরনের জাতীয় পুরষ্কারের প্রবর্তক তিনি। রাষ্ট্রে প্রতিটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ফিরে পেয়েছিল কর্মমুখর প্রানচাঞ্চল্য। শহীদ জিয়া হয়ে উঠলেন বাংলাদেশ তথা বিশ্বের একজন অবিসংবাদিত নেতা।
ঠিক চল্লিশ বছর আগের এই দিনে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের স্বীকার হন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। উনার তৈরী রাজনৈতিক দল বিএনপি এখনো দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভরসার সংগঠন। যদিও শহীদ জিয়ার আদর্শ গতি আর লক্ষ্য থেকে বর্তমান বিএনপি বহু ক্রোশ দূরে সরে গেছে আরো আগেই। লীডার জিয়ার উনিশ দফা হতে পারতো এই জাতির ভাগ্যন্নোয়নের মূল সনদ। বিএনপি এখন প্রধান রাজনৈতিক দল থেকে মোটামুটি একটা ক্লাবে পরিনত হয়েছে। তৃণমূলের ভালবাসার উত্তাপ টের পায়না ব্যবসা বানিজ্যে ফুলে ফেঁপে ওঠা উপরের দিকের পদধারী কেন্দ্রীয় নেতারা। তরুন প্রজন্মের মধ্যে শহীদ জিয়ার কর্মমূখর দেশপ্রেম তুলে ধরতে তারা সম্পূর্ন ব্যর্থ। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বাঁচিয়ে রাখতে তারুণ্যের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠতে হবে বিএনপিকে, ঢেলে সাজাতে হবে দল, সরাতে হবে অকর্মন্য অথর্বদের। জনগনের সাথে সম্পৃক্ত তৃনমূল সংগঠকদের বসাতে হবে চালকের আসনে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেতনা আর শহীদ জিয়ার দেশপ্রেমের আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে পড়ুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। আজ আমার নেতার মহাপ্রয়ান দিবস। আজ আমার মন ভারাক্রান্ত। আজ আমি কাঁদবোনা, আজ আমার চোখের প্রতিটি অশ্রুবিন্দু রক্তবিন্দুতে রুপান্তরিত হোক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ রক্ষার শপথে। রাখালরাজার দেশপ্রেম বুকে ধারন করেই কাটিয়ে দিতে চাই একটা জীবন। আপনাকে সশ্রদ্ধ স্যালুট হে মহান নেতা। আপনার সমর্থক হিসেবে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি, গর্ব করে বলতে পারি আমাদের একজন জিয়া ছিলেন। কোটি মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসা পাঠিয়ে দিলাম আকাশের ঠিকানায়। যে জিয়া জনতার সেই জিয়া মরে নাই। প্রয়াত সকল জাতীয় নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। শহীদ জিয়া অমর হউন, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
ভালবাসা অবিরাম…
কপিঃ
কণ্ঠশিল্পী-আসিফ আকবর।