Site icon The Bangladesh Chronicle

ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব মিটিয়ে ইউনূস দুদেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেবেন

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব মিটিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুদেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেবেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের প্রত্যাশা, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের দূরত্ব ও বিরোধপূর্ণ সম্পর্কটি ওপেন সিক্রেট। তবে কৌশলগত কারণেই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন রয়েছে। ফলে খুব দ্রুত দূরত্ব মিটিয়ে নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ইউনূস সরকার কাজ শুরু করবে পারবে।

হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। মারিয়া শিয়োর প্রতিবেদনটি গত ১৩ নভেম্বর রাতে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরপরই গত ৫ নভেম্বর ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানান মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারিত্ব জোরদার করার জন্য তিনি উন্মুখ।

মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্য অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।

তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প এমন সময়ে ক্ষমতায় আসছেন যখন শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন ড. ইউনূস। তাই আমি মনে করি ড. ইউনূস খুব দ্রুতই ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলবেন। ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পরপরই ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে অভিনন্দন বার্তা সেই ইঙ্গিতই দেয়।’

ট্রাম্পের সঙ্গে ইউনূসের বিরোধ মূলত ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময় শুরু হয়। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ড. ইউনূস ট্রাম্পের জয়কে ‘একটি সূর্যগ্রহণ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের সঙ্গে, বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং বিলের স্ত্রী সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ইউনূসের সম্পর্ক বরাবরই হৃদত্যাপূর্ণ।

তবে সেসময়ের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতিকে এক করে দেখতে চান না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন।

এ বিশ্লেষক বলছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে ১৭ কোটি মানুষের একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। দক্ষিণ এশিয়া এবং এর বাইরেও দেশটির ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং তখনকার এবং বর্তমানের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবং ড. ইউনূস বাংলাদেশের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্কগুলো বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নিপুণভাবে পরিচালনা করছেন।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে বদল হলেও বাংলাদেশ নিয়ে দেশটির নীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে বলেও মনে করেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক।

এর ব্যাখ্যায় অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি ট্রাম্পের নীতি পরিবর্তনের চেয়ে বেশি চলমান থাকবে। কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেন।’

ট্রাম্পের সঙ্গে ইউনূসের সম্পর্ক ‘জটিল’ হওয়ার পেছনে ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে মুহাম্মদ ইউনূস যে ডোনেশন দেন সেটির উল্লেখ করেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইপিএজি এশিয়া-প্যাসিফিক, অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনির খসরু।

তবে তিনি বলেন, ‘কিন্তু সেই বিষয়টি বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির প্রতিনিধিত্ব করে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ পারস্পরিক লাভজনক ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন ব্যবসা, উন্নয়ন ও প্রযুক্তিতে দুদেশই ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ২০২২ সালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।’

ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি হবে বলেই মনে করেন সৈয়দ মুনির খসরু। বলেন, ‘বিশেষ করে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে।’

নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে যে টুইট করেছিলেন সৈয়দ মুনির খসরুর মতে সেটিও তার নীতির প্রতিনিধিত্ব নয়, মূলত নির্বাচনি প্রচারণার অংশ ছিল।

‘বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখে, যা সন্ত্রাসবাদ দমন, মানবিক সমর্থন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার মতো ভাগাভাগি স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে’— যোগ করেন আইপিএজি এশিয়া-প্যাসিফিক, অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন বাংলাদেশের উচিত লবিস্ট নিয়োগ করা। যিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নীতি ও মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশের আবেদন বৃদ্ধি করতে পারবেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। সেই নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকেও ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন অধ্যাপক লাইলাফুর ইয়াসমিন। এতে দুদেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলেই অভিমত এ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকের।

ঢাকাটাইমস

Exit mobile version