Site icon The Bangladesh Chronicle

টাকার হিসাব চান জাপার প্রার্থীরা

টাকার হিসাব চান জাপার প্রার্থীরাজাপার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্ষুব্ধ নেতারা সভা করেছেন রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটি্‌উটে। ছবি: সমকাল

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল চুন্নুকে দায়ী করে ক্ষোভ ঝেড়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) পরাজিত প্রার্থীরা। তাঁদের দাবি, তৃণমূলের নেতাদের মতামতের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেঈমান হয়েছেন জি এম কাদের। লাঙলের প্রার্থীদের মাথা বিক্রি করে সরকারের কাছ থেকে টাকা পেয়েছেন। সেই টাকার হিসাব চান লাঙলের প্রার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। জাপা চেয়ারম্যান তাঁর স্ত্রী শেরীফা কাদেরের জন্য আসন বাগাতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বলি দিয়েছেন।

রোববার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটি্‌উটে সভায় এসব অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা। দলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্ষুব্ধ নেতারা এই সভা করেছেন। লাঙলের ২৬৫ প্রার্থীর ১২২ জন সভায় অংশ নেন। কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে সভায় প্রার্থীরা ক্ষোভ উগড়ে দিলেও, দল ভাঙা বা নেতৃত্ব বদলের কথা বলেননি।

এর গত বুধবার দলের বনানী কার্যালয় ঘেরাও করে জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন প্রার্থীরা। এতে ক্ষুব্ধ জাপা চেয়ারম্যান দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়কে অব্যাহতি দিয়েছেন।

তপশিল ঘোষণার দুদিন আগে গত ১৩ নভেম্বর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটি্‌উটেই জাপার কেন্দ্রীয় কমিটি এবং জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা হয়েছিল। ৫৯ নেতার দুইজন বাদে সবাই নির্বাচন বর্জনের মত দেন। জি এম কাদের সেদিন বলেছিলেন, দলের নেতাদের মতামতের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেঈমান হবেন না।

সেই বক্তব্যের রেশ টেনে নোয়াখালী-৩ আসনের লাঙলের প্রার্থী ফজলে এলাহি সোহাগ রোববারের সভায় বলেন, ‘‘সেদিন আল্লাহর ভয় দেখিয়ে জি এম কাদের বলেছিলেন, ‘বেঈমান হব না’। আপনি কথা রাখেননি। আমরা জাতির সঙ্গে বেঈমানি করেছি। মুজিবুল হক চুন্নু বারবার কৌশলের কথা বলেছেন। কীসের কৌশল! জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করার কৌশল? জি এম কাদের জাপার চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ছিলেন একরকম, এখন আরেক রকম। প্রেসিডিয়াম সদস্যরা কেরানির মতো ফাইল নিয়ে ঘুরেন জি এম কাদেরের পেছনে।’’

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী জহিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘নির্বাচনী প্রচারের প্রথম দিনেই আওয়ামী লীগের হামলার শিকার হই। চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে বারবার ফোন দিলেও ধরেননি। আর্থিক সহযোগিতা না করলেও তাঁরা অন্তত সাহস দিতে পারতেন। আজকের সভায় আসায় বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসেছি, কষ্টের কথা বলতে। বহিষ্কার করবেন, করেন।’

সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের প্রার্থী মোক্তার হোসেন বলেছেন, ‘‘দল বলল, ‘নির্বাচন কর। তুমি কিছু খরচ কর। বাকিটা দল দেবে।’ দোকান বিক্রি করে প্রথম কয়েকদিন প্রচার চালিয়েছি। এরপর দলের কাছে টাকা চাইলে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ফোন ধরেননি। কারণ, তাঁদের মনে ভয়, নির্বাচনের জন্য পাওয়া যে টাকা আত্মসাৎ করেছেন, এর কী জবাব দেবেন।’’

সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপির এয়াহিয়া চৌধুরী  বলেন, ‘জি এম কাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও, তাঁর কাজে গণতন্ত্র নেই। স্ত্রীর জন্য ফিরোজ রশিদ, আবু হোসেন বাবলা, লিয়াকত হোসেন খোকা, পীর ফজলুর রহমান, আতিকুল ইসলাম আতিকসহ ৯ জনের আসন জলাঞ্জলি দিয়েছেন। জি এম কাদের তাঁর স্ত্রী, নাতি, মেয়ের ভাসুরের জন্য আওয়ামী লীগের পিছনে দৌড়াদৌড়ি করেছেন। শেরীফা কাদেরের কী অবদান রয়েছে দলে? দলের প্রার্থীদের জন্য পাওয়া টাকা জি এম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নুরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। এর জবাব দিতে হবে।’

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের প্রার্থী নুরুল কাদের সোহেল বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের কথায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে লাঙলের প্রার্থীদের মাঠে নামান জি এম কাদের। এরপর আর খবর নেননি। ১০ টাকা দিয়ে সহায়তা করেননি। দলের চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আর কত মাথা বিক্রি করবেন দলের নেতাদের?’’

ঢাকা-১৩ আসনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু। তিনি বলেছেন, ‘‘নৌকার এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা টাকাওয়ালা। জাতীয় পার্টি শুধু ২৬ আসনে ছাড় নয়, টাকাও পেয়েছে। ১৭ ডিসেম্বরের আগে জি এম কাদের যখন দেখলেন, তাঁর স্ত্রীর জন্য ঢাকা-১৮ আসন আওয়ামী লীগ ছাড়ছে না, তখন বললেন, ‘নির্বাচনের যাব কি না ঠিক নেই। ভিক্ষার আসন নেব না।’ যেই আওয়ামী লীগ শেরীফা কাদেরে জন্য আসন ছাড়ল, তখনই জি এম কাদের নির্বাচনে গেলেন, ভিক্ষার আসনও নিলেন। স্ত্রীর জন্য দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের রাজনৈতিকভাবে জবাই করলেন জি এম কাদের। তিনি ঘুঘু দেখেছেন ফাঁদ দেখেননি। দেখতে চাইলে দেখাব, সবাই এক হলে তাঁর টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।’’

সমঝোতার আসনের বাইরে লাঙলের যে কয়েকজন প্রার্থী প্রচারে ছিলেন তাঁদের একজন ঢাকা-৭ আসনের সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন বর্জন করলে জি এম কাদের জাতির সামনে নায়ক হতেন। কাজী ফিরোজকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা তাঁর আছে। কিন্তু একজন কাজী ফিরোজ জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নেই জি এম কাদেরের।’

জি এম কাদেরের উপদেষ্টার পদত্যাগ 

জাতীয় পার্টি ছেড়েছেন সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এম. এম. নিয়াজউদ্দিন। তিনি রোববার জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এবং গাজীপুর মহানগরে সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে গাজীপুর-১ ও ৫ আসনে লাঙলের প্রার্থী ছিলেন সাবেক সচিব। তবে নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে ভোট থেকে সরে দাঁড়ান। দল থেকে পদত্যাগের চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘রাজনীতি করতে এই মুহূর্তে সক্ষম নই।’

সমকাল

Exit mobile version