- ২৪ ডেস্ক
নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে যে ঐকমত্যের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, তাতে স্পষ্ট ফাটল ধরেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্যের জেরে দল দুটির মধ্যে দৃশ্যমান দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ফলস্বরূপ, জামায়াতের ডাকা যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দেয়নি এনসিপি।
সোমবার জামায়াতে ইসলামী তাদের পাঁচ দফা দাবি আদায়ে একটি যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই কর্মসূচিতে ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসসহ চারটি দল থাকলেও এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ এবং এবি পার্টি শেষ মুহূর্তে সরে আসে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এই আন্দোলন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
দলীয় সূত্রমতে, এনসিপির এই সরে আসার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণ হলো নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ। জামায়াত ও তার মিত্ররা সংসদের উচ্চ ও নিম্ন উভয় কক্ষেই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির পক্ষে। কিন্তু এনসিপি চায় শুধু উচ্চকক্ষে এই পদ্ধতি চালু হোক। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের সব দাবির সঙ্গে একমত না হওয়ায়, বিশেষ করে পিআর পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত থাকায় আমরা আপাতত আন্দোলনে যাচ্ছি না।’
‘শুধু আন্দোলনই নয়, জামায়াতের সঙ্গে সম্ভাব্য নির্বাচনি জোট গঠন নিয়েও এনসিপির ভেতরে তীব্র আপত্তি রয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশ মনে করেন, জামায়াতের মতো ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে দীর্ঘমেয়াদে এনসিপির রাজনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র নেতা জানান, জামায়াতের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার নিশ্চয়তা থাকলে বিষয়টি ভিন্ন ছিল, কিন্তু বিরোধী দলে থাকলে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
সম্প্রতি ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এনসিপি-সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ (বাগছাস)-এর ভরাডুবি এই দূরত্বকে আরও উসকে দিয়েছে। নির্বাচনে জামায়াত-সমর্থিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিরঙ্কুশ জয় এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বে হতাশা তৈরি করেছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের একটি ফেসবুক পোস্ট নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে তিনি দেশে আরেকটি ‘ছায়া মওদুদীবাদী’ দলের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপি একটি নতুন দল হওয়ায় এর ভেতরে নানা মতাদর্শের নেতা-কর্মী রয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত এই দলে যেমন ইসলামপন্থী, তেমনই বাম ঘরানার তরুণরাও যুক্ত হয়েছেন। ফলে জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের প্রশ্নে দলের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খানের মতে, লক্ষ্য এক থাকলেও স্বার্থের সংঘাতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তিনি মনে করেন, এনসিপি রাজনীতির মাঠ বুঝে একটি কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে এবং ভোটের আগে এই অবস্থানে পরিবর্তনও আসতে পারে।
তবে জামায়াত এখনো আশা ছাড়েনি। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মনে করেন, অনেক দাবিতে মিল থাকায় এনসিপি ভবিষ্যতে তাদের অবস্থানে পরিবর্তন আনতে পারে। অন্যদিকে, এনসিপি আপাতত নিজস্ব পরিচয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘আপাতত জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কোনো সখ্যতা বা দূরত্ব নেই। আমরা নিজেদের রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করছি।’
বিবিসি অবলম্বনে