Site icon The Bangladesh Chronicle

জেনারেল মঞ্জুরকে যেভাবে গুলিতে হত্যা করা হয়

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৯

১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর তিন দিন চট্টগ্রাম ছিল এক আতঙ্কের নগরী। বিদ্রোহীদের বিপ্লবী পরিষদ গঠন, ঢাকা থেকে তাদেরকে আত্মসমর্পণের আহবান, কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে সেনাদলের রওনা এবং সম্ভাব্য বিমান হামলার খবরে মানুষের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। দলে দলে শহর ছাড়তে থাকে মানুষ। পাশাপাশি ঢাকা সেনা সদরের সঙ্গে বিদ্রোহীদের আলোচনাও চলতে থাকে। দু’দিন পর সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যায়। জেনারেল মঞ্জুরসহ বিদ্রোহী কর্মকর্তারা পালিয়ে যান।

চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী পুলিশ সুপার মারুফের কাছ থেকে জানতে পারেন ফটিকছড়িতে জেনারেল মঞ্জুর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। তাকে হাটহাজারী থানায় আনা হলে সেখান থেকে সেনাসদস্যরা তাদের হেফাজতে নেন জেনারেল মঞ্জুরকে। ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের দু’দিন পর ৩ জুন জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মঞ্জুরকে সেনানিবাসে নিয়ে আসার সময় জনতা তাকে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মেরে ফেলে বলে যে খবর সেনা সদর থেকে প্রচার করা হয়েছিল তা সঠিক ছিল না। মঞ্জুরকে সেনানিবাসের ভিআইপি গেস্ট হাউসে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেনা ডাক্তার কর্নেল তোফায়েলের সূত্রে জিয়াউদ্দিন এ কথা জানতে পারেন। পরে তিনি আরো জানতে পারেন, ঢাকা সেনানিবাস থেকে এক উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা এসে বন্দি মঞ্জুরের কক্ষে ঢুকে তাকে তিন মিনিটের মধ্যে গুলি করে হত্যা করেন।

মেরিল্যান্ডের বাসভবনে জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ আবদাল আহমদ

প্রশ্ন : প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামের পরিস্থিতি কেমন ছিল?

জিয়াউদ্দিন : ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে নিহত হওয়ার পর তিন দিন চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ছিল ভীতি ও শ্বাসরুদ্ধকর। সার্কিট হাউস আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সেনানিবাসের কয়েকজন সেনাকর্মকর্তা। পরে তারা চট্টগ্রামের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করেন। একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদ্রোহীরা দুদিন চট্টগ্রামকে তাদের একটি সামরিক ঘাঁটি বানিয়ে ফেলেন। দখল করেন চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র ও টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। তাদের মুখপাত্র হিসেবে সামনে আসেন জেনারেল মঞ্জুর। চট্টগ্রামের মানুষ জিয়া হত্যার পর জেনারেল মঞ্জুরকেই কথা বলতে দেখেন। তিনি নিজেকে বিদ্রোহের নেতা না বললেও মুখপাত্র হিসেবে উল্লেখ করে বিপ্লবী পরিষদ গঠন করে নির্দেশাবলি প্রচার করতে থাকেন। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে মঞ্জুরের কথিত নির্দেশাবলি এক সেনা কর্মকর্তা পড়ে শোনাচ্ছিলেন। বলা হচ্ছিল, একটি বিপ্লবী পরিষদ বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা শুভপুর ব্রিজ বন্ধ করে দেন, যাতে চট্টগ্রাম থেকে কোনো যানবাহন ঢাকায় যেতে না পারে। ব্রিজটি চট্টগ্রাম-নোয়াখালী সীমান্তে অবস্থিত ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে একমাত্র সড়ক।

এদিকে ঢাকা থেকে জেনারেল মঞ্জুর ও বিদ্রোহী সেনাদের আত্মসমর্পণের ঘন ঘন আহ্বান ঢাকা বেতার থেকে প্রচার করা হচ্ছিল। মিরসরাই থেকে পুলিশ সূত্রে খবর পেলাম, কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে সেনাদল এসে শুভপুর ব্রিজের কাছে অবস্থান নিয়েছে এবং সেনা ছাউনি গেড়ে বসেছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বিমান আক্রমণের কথাও শোনা যাচ্ছিল। এক কথায় দুদিন চট্টগ্রামে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা চলছিল। এই পরিস্থিতিতে এক অজানা ভয়ে মানুষ দলে দলে চট্টগ্রাম শহর ছাড়তে থাকে। যেমনটা দেখেছিলাম ১৯৭১ সালে ঢাকায়। সন্ধ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল দূরদূরান্তে। আমাকেও ডিসির বাংলো ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু আমি নিজের বাংলো ছেড়ে যাইনি। বিদ্রোহী সেনারা সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে এসে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন। ১ জুনের রাত ছিল খুবই ভীতিপূর্ণ। একে তো শহর নিস্তব্ধ, তার ওপর ঢাকা বেতার থেকে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের ঘন ঘন আহ্বান ও বিমান আক্রমণের ভয়। বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ায় অবশেষে জেনারেল মঞ্জুরসহ বিদ্রোহীরা পালাতে থাকেন।

প্রশ্ন : জেনারেল মঞ্জুর কীভাবে ধরা পড়েছিলেন? তাকে কারা কখন হত্যা করে? তার পরিবারের সদস্যদের কী পরিণত হয়েছিল?

জিয়াউদ্দিন : পুলিশ সুপার মারুফের কাছ থেকে শুনলাম জেনারেল মঞ্জুর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি দিয়ে রামগড় হয়ে ভারতের ত্রিপুরার দিকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েন। ফটিকছড়ি থানার এক গ্রামে তিনি ও তার পরিবার সাধারণ এক কৃষক পরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি সহযোগী দুই সেনা কর্মকর্তা, স্ত্রী, চার সন্তানসহ সেনানিবাস থেকে পালিয়েছিলেন। ফটিকছড়ি পৌঁছার পর মঞ্জুর তার দুই বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল মতি ও লে. কর্নেল মাহবুব আলাদা হয়ে যান। পরে সেনাদের হাতে তারা পথেই মারা যান। আর জেনারেল মঞ্জুর ফটিকছড়ির ওই সাধারণ কৃষক পরিবারে আশ্রয় নেন। অভুক্ত থাকায় কৃষক পরিবারটি তাদের খাবার খেতে দিয়েছিলেন। এ সময় ওসি কুদ্দুসের নেতৃত্বে পুলিশ টিম সেখানে উপস্থিত হয়। তারা ঘরটি ঘিরে ফেলে। পুলিশ দেখতে পেয়ে মঞ্জুর সঙ্গে সঙ্গে বলেন, তাদের যেন পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। ওসি তাদের খাবার খেতে সময় দেন। এরপর মঞ্জুর পরিবারসহ পুলিশের হাতে ধরা দেন। ওসি কুদ্দুসের টিম তাদের গ্রেপ্তার করে সেনানিবাসের কাছে হাটহাজারী থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ সুপার মারুফ মারুফের কাছ থেকে জানতে পারি, হাটহাজারী থানায় মঞ্জুর ও তার পরিবারকে আনার খবর ছড়িয়ে পড়লে থানা এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়। লোকজন ছিলেন ভীষণ ক্রুদ্ধ। ঢাকায় ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলে মঞ্জুরকে সেখানে পাঠানোর বন্দোবস্ত করার জন্য আমি ও বিভাগীয় কমিশনার চেষ্টা করলাম। ভাইস প্রেসিডেন্ট সাত্তারের সঙ্গে কথা বললে তিনি সেনাপ্রধান এরশাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন বললেন। এরই মধ্যে এসপি মারুফ নতুন এক বিপদের কথা শোনালেন। সেনানিবাস থেকে একজন ক্যাপ্টেন দুটি জিপসহ সেনা টিম নিয়ে এসেছেন মঞ্জুরকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।

এদিকে জেনারেল মঞ্জুর ও পুলিশ সুপার বলছেন, তাদের পুলিশ হেফাজতে জেলে নিতে। এই টানাহেঁচড়ার মধ্যে আমরা আবার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সাত্তার সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। অনেক পরে তিনি জানান, ‘জেনারেল মঞ্জুরকে সেনা হেফাজতে দেওয়ার আদেশ হয়েছে।’ আমরা হতভম্ব হয়ে যাই। এরপর সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য পুলিশ হাজত থেকে জেনারেল মঞ্জুরকে হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসেন এবং জুজুৎসুর প্যাঁচে তাকে মাটিতে ফেলে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন এবং আর্মি জিপের পেছনে ফেলে দেন। এসব দেখে কাঁদতে থাকে তার চার সন্তান। এরপর মঞ্জুরের স্ত্রী-সন্তানদের আরেকটি জিপে তুলে নিয়ে তারা সেনানিবাসের দিকে চলে যান। এই ছিল মঞ্জুরের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের শেষ দেখা।

জেনারেল মঞ্জুরকে আর্মি জিপে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তার পরিবারকে আরেকটি জিপে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেনানিবাসের বাড়িতে। মঞ্জুরকে কোথায় নেওয়া হয়েছে, তার স্ত্রী রানা মঞ্জুর জানতেন না। ইতোমধ্যে সরকারি মাধ্যমে জেনারেল মঞ্জুরকে সেনা অভ্যুত্থান ও জিয়া হত্যাকাণ্ডের হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যার তিন দিন পর অর্থাৎ ২ জুন ১৯৮১ সেনাবাহিনীর একদল সদস্য পুলিশের কাছ থেকে জেনারেল মঞ্জুরকে তুলে নেয় এবং তিনি হত্যার শিকার হন। সে সময় সেনা সদর থেকে বলা হয়েছিল মঞ্জুরকে হাটহাজারী থানা থেকে সেনানিবাসে নিয়ে আসার সময় ক্রুদ্ধ জনতা তাকে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মেরে ফেলে। প্রকৃতপক্ষে মঞ্জুরকে কীভাবে হত্যা করা হয়, তার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ডাক্তার লে. কর্নেল তোফায়েল, যিনি প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃতদেহ দুদিন আগে ড্রেসিং করেন। তিনি মর্গে জেনারেল মঞ্জুরের লাশেরও ময়নাতদন্ত করেন। লে. কর্নেল তোফায়েলের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। চট্টগ্রাম ক্লাবে আমরা টেনিস খেলতাম। মঞ্জুর হত্যার দুদিন পর ডা. তোফায়েল আমাকে বলেছিলেন, মঞ্জুরের মাথায় একটি গুলির আঘাত ছিল। তাকে মারা হয় সেই রাতেই সেনানিবাসে। তিনি কোনো ক্রুদ্ধ জনতার হাতে মারা যাননি। তিনি মারা যান ঢাকা সেনানিবাস থেকে আসা একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার হাতে, তার নাম তিনি বলেননি।

ডাক্তার কর্নেল তোফায়েল আমাকে যা বলেছিলেন, পরে তার সত্যতা পাই মার্কিন সাংবাদিক লিফশুলজের বিবরণ থেকে। তিনি এ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন। ২০১৪ সালে লিফশুলজ ওয়াশিংটনের বাড়িতে আমার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি জানান, মঞ্জুরের মৃত্যুর সময় চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কর্মরত এক সামরিক অফিসারের তিনি খোঁজ পান, যিনি এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। এই অফিসারকে তিনি তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ‘সোর্স’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ২ জুন ওই অফিসার সেনানিবাসের ভেতরে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জেনারেল মঞ্জুরকে সেনানিবাসে এনে ভিআইপি গেস্ট হাউসে আটক রাখার দৃশ্য দেখেছেন। মঞ্জুরকে তিনি চিনতে পারেন। কিছুক্ষণ পর এই ব্যক্তি একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাকে সেনানিবাসে আসতে দেখেন। তিনি ঢাকা থেকে এসেছিলেন। ওই সেনা কর্মকর্তা মঞ্জুরকে বন্দী করে রাখা ভিআইপি গেস্ট হাউসে ঢুকে মাত্র তিন মিনিট ছিলেন এবং মঞ্জুরকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেন। অন্যরাও ওই কক্ষে প্রবেশ করে এই দৃশ্য দেখেছিলেন যে, জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়েছে।

জেনারেল মঞ্জুরের স্ত্রী রানা মঞ্জুর ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সার্কিট কোর্টে তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে এক বিবরণ দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, মঞ্জুরকে সেনাসদস্যরা নিয়ে যাওয়ার পর তাকে ও চার সন্তানকে চট্টগ্রামের বাসায় আটকে রাখা হয়। তাদের ফোন বিচ্ছিন্ন ছিল, সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। বাইরের আলো বাতাস থেকেও ছিলেন আলাদা। তার সন্তানদেরও বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে মঞ্জুরের ছোট বোনের স্বামীর মাধ্যমে তাদের সশস্ত্র রক্ষীদের পাহারায় হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনে আটক করে রাখা হয়। এক মাস পর তারা জানতে পারেন জেনারেল মঞ্জুর নিহত। এরপর ভিজিট ভিসায় তারা যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।

প্রশ্ন : জিয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে আপনি একাধিক বই লিখেছেন। ওই বইয়ে আপনি ঘটনা সম্পর্কে কী বলেছেন?

জিয়াউদ্দিন : প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড আমার মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। কারণ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয় ছিল, বলতে গেলে সেই ১৯৭২ সাল থেকে। নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। ফলে তার মৃত্যু আমাকে মর্মাহত ও বিচলিত করে।

জিয়া হত্যার ঘটনা নিয়ে বই লেখার সিদ্ধান্ত আমি আগেই নিই। বইটি বেশ কয়েক বছর আগেই ইংরেজিতে লিখি। কিন্তু অবস্থাজনিত কারণে তখন সেটি প্রকাশ করিনি। সময় ও সুযোগ সৃষ্টি হলে ২০০৯ সালে ‘অ্যাসাসিনেশন অব জিয়াউর রহমান অ্যান্ড দি আফটারম্যাথ’ বইটি প্রকাশ করার উদ্যোগ নিই এবং ইউপিএল থেকে সেটি প্রকাশিত হয়। পরে লিখি ‘দুই জেনারেলের হত্যাকাণ্ড’। বই দুটিতে আমি প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যাকাণ্ডের বিবরণ এবং বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছি। তাছাড়া জেনারেল মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড এবং তার পরিবারের অবস্থা নিয়ে লিখেছি। বইটি আমি নির্মোহভাবে লেখার চেষ্টা করেছি, যাতে পাঠকমহল জিয়া হত্যা সম্পর্কে নিরপেক্ষ ও সত্য ঘটনা জানতে পারেন।

প্রশ্ন : জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা বললেন। তার সঙ্গে কীভাবে আপনার পরিচয় হয় এবং ব্যক্তি জিয়া ও তার কাজ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

জিয়াউদ্দিন : আমি ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দিই। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার পরিচয় স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি সময়ে। আমি তখন এএইচএম কামারুজ্জামান সাহেবের একান্ত সচিব। জিয়াউর রহমান তখন সেনাবাহিনীর উপপ্রধান। তিনি প্রায়ই কামারুজ্জামান সাহেবের সঙ্গে দেখা করতেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত সেনানিবাসগুলোতে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করার জন্য তিনি সহযোগিতা নিতে আসতেন। জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণে কামারুজ্জামান সাহেব কয়েকবার সেনানিবাসে গিয়েছেন। জিয়াউর রহমান সচিবালয়ে এলেই দেখা হতো। মন্ত্রী না থাকলে কিংবা ব্যস্ত থাকলে তিনি আমার কক্ষে বসতেন। কামারুজ্জামান সাহেবও জিয়াউর রহমানকে পছন্দ করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা। জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সেক্টর কমান্ডার ও ‘জেড’ ফোর্সের প্রধান এবং কামারুজ্জামান ছিলেন প্রবাসী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কামারুজ্জামান নিজে আমাকে একবার বলেছিলেন, জিয়াউর রহমানের ওপর অন্যায় করা হয়েছে তাকে সেনাপ্রধান না করে।

কামারুজ্জামান সাহেবের সঙ্গে পরিচিত হিসেবে সেখানে দেখা হলেও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। বলতে গেলে, জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব পালনের আগ থেকে জিয়াউর রহমান আমাকে ভালোভাবে চিনতেন। আমি নোয়াখালী জেলার ডিসি হয়ে যাই ১৯৭৫ সালের আগস্টে। সিপাহি জনতার বিপ্লবের পর ক্ষমতাসীন হলে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক হিসেবে কাজ করার সময় জিয়াউর রহমান বহুবার নোয়াখালী সফর করেছেন। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার মূলে ছিল তিনটি স্তম্ভ। প্রথমটি সেনাবাহিনী, দ্বিতীয়টি আমলারা এবং তৃতীয়টি ছিল তার নিজের তৈরি করা রাজনৈতিক দল বিএনপি। দেশব্যাপী পথসভা এবং পায়ে হেঁটে কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি তার জনপ্রিয়তা তৈরি করেন। জেলা প্রশাসকরা এই কর্মসূচির ব্যবস্থা করতেন। এসব পথসভা ও জনসভা কর্মসূচিতে ব্যাপক লোকসমাগম হতো।

জেলায় জেলায় ঘুরতেন জিয়াউর রহমান। মাসে অন্তত ১৫ দিন তিনি ঢাকার বাইরে কাটাতেন। নোয়াখালী এলে আমি গাড়ি ড্রাইভ করে তাকে নিয়ে ঘুরেছি। জিয়া জিপে করে ঘুরতেন। আমাকে তার সঙ্গে পরিভ্রমণ করতে হতো। যেহেতু জিয়া জিপে ঘুরতেন এবং তার সঙ্গে থাকলে আমাকে তার পেছনে বসতে হবেÑসে কথা ভেবে আমি প্রথমবারই তাকে জিজ্ঞেস করি, আমি যদি জিপ চালাই, তাতে তার কোনো আপত্তি থাকবে কি না। জিয়া আমার দিকে চেয়ে হেসে বলেছিলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে তার কোনো আপত্তি নেই। সেই থেকে জিয়া যখনই নোয়াখালী এসেছেন, আমি সামনে বসে জিপ চালিয়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায় তাকে নিয়ে যেতাম।

স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলতে চাইতেন, আমি তাদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করেছি। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা, বাম নেতা, বিশেষ করে কমরেড তোয়াহা এবং অন্যান্য ইসলামি দলের নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠক করিয়ে দিয়েছি। তেমনি চট্টগ্রামের ডিসি হিসেবে রাজনৈতিক নেতারা ছাড়াও চুনতির পীর সাহেব, কুতুবদিয়ার পীর সাহেবের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করিয়েছি। ১৯৭৮ সালের জুন মাসে জিয়াউর রহমান জাগদলের প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি তখন খুব জনপ্রিয়। তার জনপ্রিয়তার সামনে জেনারেল ওসমানী দাঁড়াতে পারেননি। জিয়াউর রহমান প্রায় ৭৭ শতাংশ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে তিনি সবসময় যোগাযোগ রাখতেন, এলাকা ও প্রশাসনের খোঁজ নিতেন। রাত ৯টার পর তিনি ফোন করতেন। তিনি মারা যাওয়ার মাসখানেক আগে একবার আমাকে রাত ২টার পর ফোন করেছেন। জিয়াউর রহমান দেশকে কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থান থেকে এই সময়ে রক্ষা করেছেন। দেশকে সম্ভাব্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়ে স্থিতিশীলতার পথে নিয়ে গেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে দেশের অর্থনীতি আরো উন্নত হতো। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে উঠত।

প্রশ্ন : জিয়াউর রহমান জেলা সফরে গেলে কখনো কি তার পরিবারকে সঙ্গে নিতেন? এ বিষয়ে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা আছে?

জিয়াউদ্দিন : বিদেশ সফরে গেলে জিয়া তার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে মাঝেমধ্যে সঙ্গে নিতেন। কিন্তু দেশের ভেতরে জেলা সফরে মোটেই নয়। আমি চট্টগ্রাম থাকাকালে মাত্র দুবার এর ব্যতিক্রম ঘটেছিল। রাষ্ট্রীয় কাজে খুব বেশি সময় দিতেন বলে তিনি নিজের পরিবারকে বিশেষ সময় দিতে পারতেন না।

প্রেসিডেন্ট জিয়া একবার টেকনাফে এসেছিলেন। ওই সময় সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে এসেছিলেন। সেদিন হেলিকপ্টার থেকে তিনি তার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে নামলেন। আমি তো অপ্রস্তুত। সেখানে ছিল ছোট বিশ্রামাগার। প্রেসিডেন্টের সামরিক একান্ত সচিবকে জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় থাকার ব্যবস্থা করি, রেস্ট হাউস খুব ছোট। তিনি বললেন, তাঁবুতে ব্যবস্থা করতে। রাতে তারা তাঁবুতেই থাকলেন। খাবার-দাবার বাইরে থেকে ব্যবস্থা করা হলো। রেস্ট হাউসে সকালের নাশতা হলো।

সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে রেস্ট হাউসের দিকে পায়ে হেঁটে গেলাম প্রেসিডেন্টকে নিয়ে সম্মেলনস্থলে যাওয়ার জন্য। সেটাও হাঁটা পথ। এক স্কুল ময়দানে শামিয়ানা টানিয়ে বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আমি রেস্ট হাউসের গেটে পৌঁছাতেই দেখি সামনে লনে টেবিল-চেয়ারে বসে আছেন প্রেসিডেন্ট আর তার স্ত্রী। সামনে চায়ের পট আর পেয়ালা। আমি ইতস্তত করতেই প্রেসিডেন্ট আমার দিকে ইশারা করে সামনে আসতে বললেন, আর সামনে রাখা একটি চেয়ারে বসতে বললেন। আমি বেগম জিয়াকে সালাম জানাতেই তিনি একটি খালি কাপে চা ঢেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, চায়ে কতটুকু চিনি দেবেন। আমার জীবনে এই প্রথম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা। আমি চুপচাপ চা পান করতে থাকলে প্রেসিডেন্ট জিজ্ঞেস করলেন, সম্মেলনস্থল কত দূর আর কতক্ষণ চলতে পারে? আমি তাকে জানালাম, কাছেই। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে নিয়ে সম্মেলনস্থলের দিকে রওনা হলেন। আমি বেগম জিয়াকে আবার সালাম জানিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে চলে গেলাম। সম্মেলনস্থলে ঢোকার আগে প্রেসিডেন্ট আমাকে আদেশ করলেন চলে যেতে এবং সেটা এই কারণে যে, তিনি চান না আমি রাজনৈতিক কোনো মঞ্চে তার সঙ্গে থাকি। কথাটা সোজাসুজিই আমাকে বললেন।

দ্বিতীয়বার বেগম জিয়ার সঙ্গে আমার কথা হয় এর ছয় মাস পর চট্টগ্রামে। এবারও আমাদের অবাক করে দিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়া তার চট্টগ্রাম সফরে সঙ্গে নিয়ে আসেন তার স্ত্রী আর দুই ছেলেকে। প্রেসিডেন্ট তার পরিবারকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রেখে চলে যান পার্বত্য চট্টগ্রামের উদ্দেশে। তিনি তার পরিবারকে কেনই বা সঙ্গে করে আনলেন আর কেনই বা এখানে রেখে গেলেন, বুঝতে পারছিলাম না। যাই হোক, প্রেসিডেন্ট চলে গেলে আমি আমার অফিসারদের তাদের ভালোভাবে দেখভাল করতে বলে যেই অফিসের দিকে যাচ্ছি, অমনি একজন কর্মচারী এসে বলল যে উপর থেকে বেগম জিয়া আমাকে ডাকছেন।

আমি উপরে গেলে বেগম জিয়া খুব মৃদুস্বরে বললেন, ভাই, উনি (মানে প্রেসিডেন্ট) তো আমাদের চট্টগ্রাম দেখাবেন বলে নিয়ে এলেন আর কিছু না বলেই চলে গেলেন। এখন দেখেন ছেলে দুটির (তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান) স্কুল ছুটি, তাদের নিয়ে এসে এখানে এখন কী করি। শুনেছি, এখানে কাছেই আছে কাপ্তাই লেক। সেখানে কি আমাদের ঘোরার একটু বন্দোবস্ত করে দিতে পারেন?

আমি বেগম জিয়ার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। প্রেসিডেন্টের স্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করছেন তার আর তার ছেলে দুটির বেড়ানোর বন্দোবস্ত করে দিতে পারি কিনা! প্রেসিডেন্ট কেন, বাংলাদেশের যেকোনো মন্ত্রী বা সচিবের স্ত্রীরাও তাদের কর্তাদের অধীন কর্মচারীদের যেকোনো আদেশ দিলে তারা সে আদেশ বা অনুরোধ রক্ষা না করে পারেন না। আমি তাকে শুধু বললাম যে আমাকে এক ঘণ্টা সময় দিতে। এর মধ্যেই আমি তাদের কাপ্তাই লেক ভ্রমণের বন্দোবস্ত করে দিচ্ছি। নিচে নেমেই আমি আমার পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ফোন করলাম, যাদের কাপ্তাই লেকে একটি বড় লঞ্চ আছে, প্রেসিডেন্টের পরিবারের জন্য সেটি তৈরি রাখতে। কাপ্তাই লেকে অবস্থিত ওয়াপদার রেস্ট হাউসে তাদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করলাম। আমার স্ত্রীকে সার্কিট হাউসে এসে বেগম জিয়ার সঙ্গী হতে বললাম। কিছু পরে আমার স্ত্রীর সমভিব্যবহারে বেগম জিয়া ও তার দুই ছেলেকে কাপ্তাই পাঠিয়ে দিয়ে আমি অফিসের কাজে এলাম।

আমার ধারণা ছিল যে প্রেসিডেন্ট জিয়া সন্ধ্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি ফিরে এলেন বিকালে। এসে যখন দেখলেন তার স্ত্রী-সন্তানরা নেই, বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে বেয়ারাদের জিজ্ঞেস করলেন। তারা যখন বলল যে তারা কাপ্তাই গিয়েছেন, তখন তিনি প্রশ্ন করেন, কে তাদের পাঠাল। উত্তরে স্বাভাবিকভাবেই তারা আমার কথা বললেন, তিনি আর কিছু বলেননি। আমি এ কথা শুনে ভাবলাম যে প্রেসিডেন্ট হয়তো আমার ওপর ক্ষেপে যাবেন। কিন্তু পরে তিনি এ নিয়ে আর কোনো প্রশ্নে তোলেননি। বেগম জিয়া সন্ধ্যার আগেই ছেলেদের নিয়ে সার্কিট হাউসে ফিরে আসেন।

আমার এ দুটি ঘটনা বর্ণনা করার দুটি উদ্দেশ্য হলোÑএক. প্রেসিডেন্ট জিয়া তার সরকারি কাজে এত ব্যস্ত থাকতেন যে তার পরিবারের কোনো খোঁজ তিনি রাখতেন কি না বলা মুশকিল ছিল। দুই. বেগম জিয়াকে আমি যতবার দেখেছি, আমার কাছে তাকে আর দুটি বাঙালি পরিবারের স্ত্রী বা মায়ের থেকে পৃথক মনে হয়নি। তার বাচন বা চলনে এটি কখনোই মনে হতো না যে তিনি একজন পরাক্রমশালী প্রেসিডেন্টের স্ত্রী। পরবর্তীকালে এই মৃদুভাষী মহিলা যে নিজে একজন শক্তিশালী আপসহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে দু-দুবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।

এরপর খালেদা জিয়াকে দেখেছি, তবে কোনো কথা হয়নি। দেখা হয়েছিল চট্টগ্রাম সেনানিবাসে এক কুচকাওয়াজে, যেখানে প্রেসিডেন্ট জিয়া সর্বাধিনায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রশ্ন : জিয়া হত্যার বিচার সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে জানতে চাই। পুরো ষড়যন্ত্র কেন উদঘাটিত হলো না?

জিয়াউদ্দিন : জিয়া হত্যার পর সামরিক তদন্ত ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। সামরিক তদন্তের পর অভিযুক্তদের কোর্ট মার্শালে বিচার হয়। মামলায় অভিযুক্ত ৩৩ জন সেনা অফিসারের মধ্যে ১৩ জনকে ফাঁসির দণ্ড এবং ৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড।

জিয়া হত্যা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তার সামরিক একান্ত সচিব লে. কর্নেল মাহফুজের সম্পৃক্ততা ছিল। ৩০ মে ১৯৮১ সালে সার্কিট হাউসে গিয়ে তার আচরণ দেখে আমার সন্দেহ হয়েছে। মাহফুজ যে এ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন, তা সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার ‘অ্যা লিগেসি অব ব্লাড’ বইয়েও লিখেছেন। জিয়ার সামরিক একান্ত সচিব কর্নেল অলির পর মাহফুজ এ দায়িত্বে এসেছিলেন।

দেশকে, মানুষকে সত্য জানার প্রয়োজনেই জিয়া হত্যার রহস্য উন্মোচিত হওয়া উচিত ছিল। প্রেসিডেন্ট কেনেডি হত্যার পর গঠিত হয়েছিল ওয়ারেন কমিশন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল হত্যাকারীদের সঙ্গে আর কেউ জড়িত ছিল কি না, এর পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল কি নাÑসেই সত্য উদঘাটন করা। জিয়া হত্যার ক্ষেত্রেও সত্য উদঘাটন হওয়া উচিত ছিল।

Source:https://www.dailyamardesh.com/op-ed/amdqdvd7e3ppp

Exit mobile version