Site icon The Bangladesh Chronicle

জুলাই ডকুমেন্টারি সংশোধন প্রয়োজন

সামিন ইয়াসার
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৪৫

চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে অবস্মরণীয় হয়ে আছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান। ১৬ জুলাই আবু সাঈদকে পুলিশ হত্যার পর আন্দোলন সারা দেশে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন দমনে একপর্যায়ে সরকার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। তখন আবার আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় ১৮ জুলাই রাজপথে নেমে আসেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে আবার নতুন গতি লাভ করে ফ্যাসিবাদ পতনের এক দফা আন্দোলন। ফলে চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের অন্যতম আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল এই দিনটি।

সে কারণে চলতি বছর ৩০ জুন ১৮ জুলাইকে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (পুসাব)’ তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ ঘোষণা দেয়। পুসাবের এক পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়, ১৮ জুলাইয়ের সেই সাহসী প্রতিরোধ না হলে ৫ আগস্টের বিজয় হয়তো অধরাই থেকে যেত। ১৮ জুলাইয়ের এই দিনেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী শহীদ ও আহত হন। তাই বিশেষভাবে দিনটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিরোধ দিবস’ (Private University Resistance Day) নামে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি।

১৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও আপলোড করা হয়েছিল। সেই ডকুমেন্টারি ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়েছে—বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে ডকুমেন্টারি ‘হিরোস উইদাউট কেপস : প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিস ইন জুলাই’। এই ডকুমেন্টারি ভিডিওতে মূলত তুলে ধরা হয়েছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ভীক অবস্থান এবং শিক্ষার্থীদের দুর্বার অংশগ্রহণ—১৮ জুলাই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে। ডকুমেন্টারি ভিডিওটি শুরু হয় ২০২৪-এর ১৫ জুলাই দিয়ে। কীভাবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলতেও কার্পণ্য বোধ করেনি, সেটি তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়, ১৭ জুলাইয়ের কিছু নির্মম ঘটনা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের ঘোষণার পর কেমন অবস্থা ছিল, সেগুলো দেখানো হয় এবং সেই ঘটনা সম্পর্কে ডকুমেন্টারিতে বক্তব্য দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। এভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য রেখেছেন ওই ডকুমেন্টারিতে।

কিন্তু ডকুমেন্টারি ভিডিওটির কমেন্ট বক্সে প্রবেশ করলে লক্ষ করা যায়—এমন অসাধারণ ডকুমেন্টারি নির্মাণের কারণে প্রধান উপদেষ্টা যেমন প্রশংসায় ভাসছেন, ঠিক এর উল্টোদিকে কিছুসংখ্যক দর্শকের মতে এটি একটি অসম্পূর্ণ ডকুমেন্টারি। কারণ এতে স্থান পায়নি সব কণ্ঠ। অনেকে জানাচ্ছেন, এই ডকুমেন্টারি দ্বারা বৈষম্যের শিকার হয়েছে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ডকুমেন্টারিতে অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বক্তব্য নেওয়া হলেও সেখানে দেখা যায়নি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়—ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কোনো শিক্ষার্থীদের।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর বক্তব্য স্থান দেওয়া উচিত ছিল।

চব্বিশের জুলাইয়ের ইতিহাসে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অবদান ছিল অতুলনীয় ও অনস্বীকার্য। চরম দুঃসময়ে রামপুরা-বাড্ডা রোডে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সাহসী অবস্থান ছিল অনেকের কাছে অনুকরণীয়। সেদিন পাশেই ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে যখন পুলিশ আক্রমণ চালিয়েছিল, তখন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে অবস্থানরত সবাই বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে গিয়েছিলাম ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের রক্ষায়। সবাই এমনভাবে ছুটে যাচ্ছিলাম, যেন কারো প্রাণের মায়া নেই; বরং নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও প্রস্তুত!

১৮ জুলাইয়ের এই ডকুমেন্টারি শুধু স্মৃতি নয়; বরং একটি প্রজন্মের ইতিহাস। যেই ইতিহাস শুধু এই প্রজন্ম পর্যন্ত স্থায়ী নয়; আগামী প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম এবং যা তাদের হৃদয়ে অনুরণন তুলবে। ইতিহাস রক্ষার্থে এই ডকুমেন্টারি ভিডিও পুনর্নির্মাণ করা উচিত। কারণ, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটি স্পষ্ট ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে। তাই, এই দলিলে প্রতিটি তথ্যের পূর্ণ বিবরণ সুস্পষ্টভাবে থাকা প্রয়োজন। যদি এতে সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ভিডিও ফুটেজ কিংবা শিক্ষার্থীদের বক্তব্য অন্তর্ভুক্ত না থাকে, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছাবে না।

লেখক : শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি

Exit mobile version