নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও জাতীয় পার্টিতে (জাপা) বিভেদ মেটেনি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম নেননি জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা।
আগামীকাল শুক্রবার বর্ধিত সময়ে ফরম নেবেন, এমন ইঙ্গিতও নেই। এতে নির্বাচনের আগে জাপায় দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। সাক্ষাত পেলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে বলে আশা করছে রওশনপন্থিরা।
ফরম না নিলে রওশন এরশাদ কি দলীয় মনোনয়ন পাবেন না- প্রশ্নে জাপা মহাসচিব সমকালকে বলেছেন, কেউ ফরম না নিলে কী করার থাকতে পারে।
বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ সমকালকে বলেছেন, রওশন এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ সাদের রংপুর-৩ আসনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন জি এম কাদের। এরপর কীভাবে মনোনয়ন ফরম নেবেন রওশন এরশাদ? গোলাম মসীহ অভিযোগ করেছেন, কয়েকজন রওশনপন্থি মনোনয়ন ফরম নিতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন। লিখিত ক্ষমা চাওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই ফরম নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, মারধরের অভিযোগ মিথ্যা। যারা দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন, তাদেরকে চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে। দলে ফিরলে মনোনয়ন ফরম দেওয়া হবে।
জাপা সূত্র জানিয়েছে, রওশনের পক্ষ নিয়ে বহিষ্কার হওয়া বিরোধীদলীয় চিফহুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধাসহ আরও কয়েকজনকে কোনো অবস্থাতেই দলে ফেরাতে রাজি নন জি এম কাদের।
অনুসারীদের বাদ দিয়ে ফরম নিতে রাজি নন রওশন। তার দাবি, সাদ এরশাদকে রংপুর-৩ আসনেই প্রার্থী করতে হবে। জি এম কাদের অন্য কোনো আসনে নির্বাচন করুন। বৃহস্পতিবার রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে দলে কো-চেয়ারম্যান পদ দিয়েছেন জি এম কাদের।
সূত্রের ভাষ্য, রংপুর-৩ আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি হিসেবে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান। দুই পক্ষই নির্বাচনমুখী হলেও, এই আসনের কারণেই বিরোধ মিটছে না রওশন ও জি এম কাদেরের।
রওশনপন্থি একজন জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আনতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছেন বিরোধীদলীয় নেতা। তবে সময় চেয়েও পাননি।
সূত্রের ভাষ্য, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও জাপা আগামী সংসদে আর বিরোধী দল হতে পারবে না বলে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটাই কেটেছে। চেষ্টা ছিল, বিএনপি নেতাদের ‘ভাগিয়ে’ তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএমে আনা হবে। এই দুই দলের একটি আগামী সংসদে বিরোধী দল হবে। ‘চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায়’ জাপাকে প্রধান বিরোধী দল বানানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ আশ্বাসে গত বুধবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয় জাপা। যদিও দলটির মহাসচিব বৃহস্পতিবারও বলেছেন, সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস পেয়ে দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচনে যাচ্ছেন।
সমকাল