November 12, 2017
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আজ ১২ নভেম্বর রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
দ্রব্যমূল্য ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ সরকার এ দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। ধ্বংস করে দিয়েছে। এ সরকার ২০০৮ সালে কথা দিয়েছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। আজ ৭০ টাকা কেজি চাল খাচ্ছে কেন মানুষ।’ তিনি বলেন, ‘তরিতরকারি, সবজির দাম ৭০ টাকার নিচে নয়। পেঁয়াজ ১০০ টাকা পর্যন্ত চলে গেছে। এ দুরবস্থায় মানুষ কী করে জীবন যাপন করবে। প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।’
বিএনপির চেয়ারপার্সন বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চলেছে। কেন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত? জিনিসপত্রের দাম বাড়লে ট্রান্সপোর্ট খরচ বেড়ে যায়। একজন রিকশাওয়ালা ভাইকেও চাল ডাল তরি তরকারি কিনে খেতে হয়। স্বাভাবিক তার পক্ষে ভাড়া না বাড়ালে কোনো উপায় থাকে না। অন্য ট্রান্সপোর্টের একই অবস্থা। সেজন্য জনগণের জীবন আজ দুবির্ষহ হয়ে উঠেছে। তাঁরা কথা দিয়েছিল তাঁরা বিনামূল্যে সার দিবে। বিনামূল্যে সার তো দেয় না, আমাদের সময়ে যে মূল্য ছিল তারচেয়ে পাঁচগুণ বেশি দামে এখন সার কিনতে হচ্ছে কৃষককে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কৃষকও আজ মহাকষ্টে দিন যাপন করছে। ফসলের দাম তারা সরকারের কাছ থেকে ঠিকমতো পাচ্ছে না। সরকার আজ কৃষককে মারার ব্যবস্থা করেছে। সাধারণ নিরীহ মানুষকে মারার ব্যবস্থা করেছে।’
দেশনেত্রী বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। তারপরও সারা দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করেছে। অথচ মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে টেন্ডার (দরপত্র) করা হয়নি।’
আগামী নির্বাচনে বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দাবী করেছেন, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে দেশনেত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) হবে না, ইভিএম চলবে না, ইভিএম বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। শুধু মোতায়েন করলে হবে না। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্টেরিয়াল পাওয়ার দিয়ে টহল দিয়ে জনগণ যেন নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে সে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সেটাতেই তাদের (সরকার) ভয়।’
বেগম জিয়া আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের জন্য আমাদের দাবির কথা দিয়েছি। সেখানে বলেছি যদি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে হয়, তাহলে সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করতে হবে। আজ নির্বাচন কমিশনার কেন বলে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে না, ইভিএম হবে। তার মানে সরকার যা বলছে তাই তাঁরা করতে চায়।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা চুরি করে জিতবে, জনগণকে পাশ কাটিয়ে জিতবে তাঁরা জনগণকে ভয় পাবেই। জনগণের সামনে যেতে ভয় পাবেই। কিন্তু জনগণকে নিয়েই আমাদের রাজনীতি। এ জনগণের জন্যই আমাদের রাজনীতি। জনগণের জন্যই আমাদের ভালোবাসা। তাই আমরা বলেছি জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। যাতে আমার দেশের প্রতিটি মা, বোন, ভাই, ছেলে যারা ভোটার, তারাও যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে সে পরিবেশ, সে ব্যবস্থার সৃষ্টি করতে হবে।’
বিচারপতির পদত্যাগ প্রসঙ্গে দেশনেত্রী বলেছেন, ‘বিদেশে সরকারের এজেন্সির লোক পাঠিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এ কারণে তিনি দেশে আসতে পারেননি। এর আগে তাকে অসুস্থ বানিয়ে জোর করে বিদেশে পাঠানো হয়।’
সরকারি চাকরিজীবীদের নির্ভয়ে কাজ করার আহ্ববান জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারি চাকরিজীবীদের ভয় দেখাচ্ছে। তারা বলছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি চলে যাবে।’ তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কারো চাকরি কেড়ে নেবে না। এ বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।’ সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এসব কাজ বিএনপির নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা দেখা হবে। কারো চাকরি খাওয়া হবে না।’ আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলছে- বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মানুষ হত্যা করবে। আমরা মানুষ হত্যা করি না, মানুষ হত্যা করে আওয়ামী লীগ। এটা আওয়ামী লীগের কাজ, বিএনপির নয়।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘এটি একটি জাতীয় সমস্যা। এটাকে কিভাবে সমাধান করা যায় এ নিয়ে আলোচনা করতে হবে। জিয়াউর রহমানের সময় একবার এবং ৯১ সালে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। আলোচনা করে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এখনও বিশ্ব সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়।’
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির সমাবেশে জনগণের অংশগ্রহন রোধ করার জন্য সরকারের আদেশে পুলিশ সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে। তারপরও সমাবেশে কয়েক লক্ষ মানুষ সমবেত হয়।