Site icon The Bangladesh Chronicle

জাতীয় নির্বাচন ভণ্ডুল করার অপচেষ্টা, ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে

logo

প্রকাশ : রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ২০:২৪

যমুনায় গত শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পতিত শক্তি গণ্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে। এ অপচেষ্টা প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এদিন প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলাপ শেষে তাকে উদ্ধৃত করে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা, তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি আওয়ামী লীগ দেশী-বিদেশী দোসর নিয়ে একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে। গণ-অভ্যুত্থানের পরপর এ অপশক্তি দেশকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। এরা ঢাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটালে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলো ও রাষ্ট্রীয় সব বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা সামাল দেয়। এরপর দেশের বিভিন্ন পক্ষের মতলবি দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন, শাহবাগ অবরোধ ও যমুনার সামনে বসে পড়া ছিল আরেক সমস্যা। সরকার সেগুলোও দক্ষতার সাথে সামলিয়েছে। অন্যদিকে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের শীর্ষ খাত তৈরী পোশাক শিল্পে পরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টি ছিল দুশ্চিন্তার বিষয়। তা-ও বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবেলা করেছে সরকার। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় ঘিরে নাশকতার অপচেষ্টাও কম হয়নি। আনসারদের আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ ছাত্রদের আবেগ কাজে লাগিয়ে ছদ্মবেশী ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীদের নাশকতার চেষ্টা আপাত থামানো গেছে।

শুরু থেকে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে ধারাবাহিক অপচেষ্টার যে ষড়যন্ত্র করা হয়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এক বক্তব্যেও তা উঠে এসেছে। একই সাথে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অপপ্রচার ছিল খুব দৃষ্টিকটু। বিশেষ করে, ভারতের গণমাধ্যম যেভাবে কোমর বেঁধে বাংলাদেশের ব্যাপারে মিথ্যাচার করেছে তাতে দেশটির সাংবাদিকতার মান তীব্রভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ঢাকাকে নিয়ে দিল্লির অপপ্রচারের জেরে ভারতের আসাম রাজ্যে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ক‚টনৈতিক ইতিহাসে নিকৃষ্টতম নজির হয়ে থাকবে। তাই নির্বাচন ভণ্ডুল করা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্য, গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের সব শক্তিকে গুরুত্বের সাথে আমলে নিতে হবে।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে সঙ্কটময় সময়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের দায়িত্ব নিয়েছে। এ কারণে দেশ পরিচালনায় কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি, দুর্বলতা থাকা অস্বাভাবিক নয়। এর পরও গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করা ছাড়া আর কী বিকল্প রয়েছে? এ জন্য সরকারের কাজের ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরিয়ে দিয়ে গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে আগামী নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সময় দিতে হবে। এ মুহূর্তে পরাজিত শক্তির অন্যতম নিশানা যেকোনো মূল্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা এবং দেশের রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এ বিষয়েও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

আমরা মনে করি, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে ঐক্যের বীজ রোপিত হয়েছে, দেশ-দশের স্বার্থে এটিকে সুসংহত করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে ইউনূস সরকারকে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আঞ্জাম দিতে পরিবেশ তৈরি করে দেয়াও বাংলাদেশপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। এর মধ্য দিয়ে দেশ আবার টেকসই গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরবে; এটি সবার প্রত্যাশা।

Exit mobile version