Site icon The Bangladesh Chronicle

জাতিসংঘের প্রক্রিয়ায় যুক্ত মানবাধিকারকর্মীরা যেন প্রতিহিংসার শিকার না হন

জাতিসংঘের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত মানবাধিকারকর্মীরা যাতে প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থার শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিটি গতকাল বৃহস্পতিবার অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনা (ইউপিআর)-সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ও তার প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খান যাতে কোনো হুমকি বা আক্রমণের সম্মুখীন না হন, বাংলাদেশ সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে এই পর্যালোচনাসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণের পর আদিলুরের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। যাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘন নথিভুক্তসহ তা প্রকাশের জন্য কাজ করছেন, তাঁদের হয়রানি-ভয়ভীতি ছাড়াই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দেওয়া উচিত। জাতিসংঘের সংস্থাকে সহযোগিতার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়।

পর্যালোচনার দুই মাস আগে গত সেপ্টেম্বরে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মামলায় অধিকারের আদিলুর ও এ এস এম নাসির উদ্দিনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন একটি বিশেষ আদালত। ২০১৩ সালে এক বিক্ষোভে রাষ্ট্রপরিচালিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে অধিকারের সত্য-অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। ওই মামলার পর এই দুজন এক দশক ধরে রাষ্ট্রের নিরবচ্ছিন্ন নিপীড়ন, ভয়ভীতি ও হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। একটি অন্যায্য বিচারে গত সেপ্টেম্বরে তাঁদের সাজা হয়। অধিকার ও তার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের নিরন্তর দমনপীড়ন পুরো বাংলাদেশের সুশীল সমাজের ওপর একটি শীতল প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে যারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের বিষয় নথিভুক্ত করে।

১৩ নভেম্বর ইউপিআরের অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সংঘটিত ঘটনার ধারাবাহিকতায় আদিলুরের নিরাপত্তা ও মঙ্গল নিয়ে অ্যামনেস্টি উদ্বিগ্ন।

বাংলাদেশে মানবাধিকার কর্মীদের নিপীড়ন, নাগরিক পরিসর সংকুচিত করা ও দায়মুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য ওই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল অ্যামনেস্টিসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন। অনুষ্ঠানে কিছু ব্যক্তির মৌখিক আক্রমণের কারণে প্যানেল আলোচনা ব্যাহত হয়। আক্রমণকারীরা বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা যায়। তাঁদের ভাষ্য ছিল, আদিলুর মিথ্যা ছড়ানোর একটি ‘প্রোপাগান্ডা মেশিন’। বৈঠকজুড়ে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, অ্যামনেস্টিসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন আয়োজিত বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য আদিলুরের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা, বিশেষ ক্ষমতাসহ কোনো আইনই ব্যবহার করা উচিত নয়। তেমনটা করা হলে, তা হবে তাঁর সংগঠন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন। তা হবে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করার জন্য তাঁর প্রতি একটি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ।

অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ সংশোধনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি বলেছে, আদিলুরসহ মানবাধিকার কর্মীরা মানবাধিকার নিয়ে তাঁদের বৈধ কাজের জন্য যাতে লক্ষ্যবস্তু ও আক্রমণের শিকার না হন, বাংলাদেশ সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, সরকারের সমালোচনাকারীরা ক্রমবর্ধমান হামলা ও বিচারের মুখোমুখি হয়ে আসছেন। এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে আছে—প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে বাসা থেকে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া, পরে তাঁকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখানো; জামালপুরে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীকে হত্যা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আটকে রাখা।

প্রথম আলো

Exit mobile version