মুদ্রিত সংস্করণ
ডাকসুর পর জাকসুতেও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ভূমিধস বিজয় লাভ করেছে। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদের মধ্যে জিএস মো: মাজহারুল ইসলাম, এজিএস (পুরুষ) ফেরদৌস আলম হাসান, এজিএস (নারী) আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলাসহ ২০টি পদে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের ব্যানারে জয়লাভ করে ব্যাপক চমক দেখিয়েছে শিবির। আর পাচটি পদের মধ্যে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুর রশিদ জিতু। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ক্রীড়া সম্পাদক পদে মাহমুদুল হাসান কিরণ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুহিবুল্লাহ শেখ জিসান এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) থেকে সমাজসেবা ও মানবসম্পদ সম্পাদক আহসান লাবিব এবং কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মোহাম্মদ আলী চিশতী জয়লাভ করেন।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম। ২১টি হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং কর্মকর্তারা ও প্রভোস্টবৃন্দ। এ সময় নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. খোন্দকার লুৎফুল এলাহী, হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন প্যানেল ও হলের বিভিন্ন পদের প্রার্থী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। অনাড়ম্বর কিন্তু উৎসবমুখর পরিবেশে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ফল ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন হল ও বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটু বাড়তি আগ্রহ দেখা দেয়। ফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে নানা স্লোগানে সেই উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেন তারা। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে শেখ হাসিনার বিচার ও ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হল। এ সময় শাপলা ও পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিও উঠে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৯ অক্টোবর এক বিবৃতির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে জাকসু সচল করাসহ সুস্থ ধারার অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির দাবি জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৮৯ সাল থেকে এক ঠুনকো অজুহাতে ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে এ ছাত্র সংগঠনটি প্রকাশ্যে তার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। এ দিকে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আত্মপ্রকাশ করেই এক বছরের মাথায় সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের ব্যানারে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বিজয় লাভ করায় মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিজয়ী প্রার্থীরা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে নির্ধারিত বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১৯টি হলের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। প্রশাসনিক কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে কাজী নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন হলের ভোট গ্রহণে বিলম্ব হয়। ওই দু’টি হলের ভোট গ্রহণ শেষ হয় সেদিন রাত সাড়ে ৮টায়। তাজউদ্দীন হল ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ভোট গ্রহণ চলাকালে কিছু বিশৃঙ্খলা ঘটলেও অন্যান্য হলে ভোট গ্রহণ স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গ্রহণে কারচুপির অভিযোগে সেদিন বিকেল পৌনে ৪টায় মওলানা ভাসানী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ভোট বর্জন করলেও মূলত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ দিকে ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশন ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জাকসুতে ভোট কারচুপি কিংবা জালভোটের মতো কোনো ঘটনা প্রমাণ করতে পারলে চাকরি ছেড়ে চলে যাবো। পেনশনের টাকাও গ্রহণ করব না।
ভিপি পদে জয়ী : শিবিরের প্যানেলের বাইরে ভিপি (সহসভাপতি) পদে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের প্রার্থী আব্দুর রশীদ জিতু ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির সমর্থিত
সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মো: আরিফুল্লাহ পেয়েছেন ২ হাজার ৩৯২ ভোট। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের বিজয়ীরা হলেন- সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে বিজয়ী ইসলামী ছাত্রশিবিরের জাবি শাখার অফিস ও প্রচার সম্পাদক মো: মাজহারুল ইসলাম পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৩০ ভোট। তিনি ইংরেজি বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাস সমর্থিত প্যানেলের তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম পেয়েছেন ১ হাজার ২৩৮ ভোট। এজিএস (পুরুষ) পদে ফেরদৌস আল হাসান পেয়েছেন ২ হাজার ৩৫৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের জিয়া উদ্দিন আয়ান পেয়েছেন ২ হাজার ১৪ ভোট। এজিএস (নারী) সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত প্যানেলের আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০২ ভোট। শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিজয়ী শিবির সমর্থিত প্যানেলের আবু উবায়দা উসামা পেয়েছেন ২ হাজার ৪২৮ ভোট। পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ স¤পাদক পদে বিজয়ী শিবির সমর্থিত প্যানেলের সাফায়েত মীর পেয়েছেন ২ হাজার ৮১১ ভোট । সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পদক পদে বিজয়ী শিবির সমর্থিত প্যানেলের জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি পেয়েছেন ১ হাজার ৯০৭। সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন ১ হাজার ৯৮৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নাট্য সম্পাদক পদে রুহুল ইসলাম পেয়েছেন ১ হাজার ৯২৯ ভোট। ক্রীড়া সম্পাদক পদে বিজয়ী স্বতন্ত্রপ্রার্থী মাহমুদুল হাসান কিরণ পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৭৮ ভোট। সহক্রীড়া স¤পাদক (পুরুষ) পদে মো: মাহাদী হাসান ২ হাজার ১০৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। সহক্রীড়া (নারী) স¤পাদক পদে বিজয়ী ফারহানা আক্তার লুবনা পেয়েছেন ১৯৭৬ ভোট। আইটি ও গ্রন্থাগার পদে মো: রাশেদুল ইসলাম লিখন ২ হাজার ৪২৯ ভোট, সহসমাজ ও মানবসেবা সম্পাদক পদে তৌহিদ হাসান ২ হাজার ৪৪২ ভোট, সহসমাজ ও মানবসেবা (নারী) নিগার সুলতানা ২ হাজার ৯৬৬ ভোট, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পাদক হুসনী মোবারক ২ হাজার ৬৫৩ ভোট, পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে মো: তানভীর রহমান ২ হাজার ৫৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও কার্যকরী সদস্য পদে তিনজন (পুরুষ) এবং তিনজন (নারী) সদস্যের মধ্যে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে ৩ জন নারী এবং দুইজন পুরুষ সদস্য নির্বাচিত হন। বিজয়ী নারী সদস্যরা হলেন- নুসরাত জাহান ইমা (৩০১৪ ভোট), ফাবলিহা জাহান নাজিয়া (২০৭৫ ভোট), নাবিলা বিনতে হারুন (২৭৫০ ভোট) এবং বিজয়ী পুরুষ সদস্যরা হলেন- হাফেজ তরিকুল ইসলাম (১৭৪৬ ভোট) এবং আবু তালহা ১ হাজার ৮৫৪ ভোট ।
বাগছাস : বাগছাস সমর্থিত প্যানেল থেকে কার্যকরী সদস্য পদে মোহাম্মদ আলী চিশতী সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪১৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
২১টি হল সংসদে বিজয়ী হয়েছেন যারা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পাশাপাশি ২১টি হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলাফলে যাদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় তারা হলেন-
১৩নং (ছাত্রী) হল : ভিপি হিসেবে নাহাদাতুন হাসানা, জিএস মোহসিনা তুবা ও এজিএস সাদিয়া মেহজাবিনকে নির্বাচিত হন।
বেগম খালেদা জিয়া হল : ভিপি নির্বাচিত হন ফারহানা রহমান। এ ছাড়া জিএস ফাতেমা তুজ জোহরা ও এজিএস রায়হানা সরকার নির্বাচিত হন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল : ভিপি অমিত কুমার বণিক, জিএস মাহমুদুল হাসান ও এজিএস মির্জা আদনান ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত হন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল : ভিপি সিফাত উল্লাহ, জিএস মাহমুদুল হাসান ও এজিএস তারিক আহমেদ নির্বাচিত হন।
ফজিলতুন্নেসা হল : ভিপি ঐশী সরকার (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা), জিএস ফারজানা তাবাসসুম ও এজিএস প্রমা রাহা নির্বাচিত হন।
শহীদ রফিক-জব্বার হল : ভিপি মেহেদি হাসান, জিএস শরিফুল ইসলাম ও এজিএস আরিফুল ইসলাম নির্বাচিত হন।
২১ নং (ছাত্র) হল : ভিপি ইবনে শিহাব, জিএস ওলিউলাহ মাহাদী ও এজিএস তুষার আহমেদ নির্বাচিত হন।
কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদ : ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন রাকিবুল ইসলাম, জিএস আলী আহমেদ ও এজিএস সামিন ইয়াসির।
আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল : ভিপি জিএমএম রায়হান কবীর, জিএস আবরার শাহরিয়ার ও এজিএস রিপন মণ্ডল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
মীর মশাররফ হোসেন : ভিপি খালেদ জুবায়ের, জিএস শাহরিয়ার নাজিম ও এজিএস আরাফাত হোসেন নির্বাচিত হন।
মওলানা ভাসানী হল : ভিপি আবদুল হাই স্বপন, জিএস হৃদয় পোদ্দার ও এজিএস পদে রাকিব হাসান নির্বাচিত হন।
শহীদ সালাম বরকত হল : ভিপি পদে মারুফ হোসেন, জিএস মাসুদ রানা ও এজিএস পদে আবরার আজিম ভুঁইয়া নির্বাচিত হন।
আলবেরুনী হল : ভিপি পদে রিফাত আহমেদ শাকিল, জিএস মুনতাসির বিল্লাহ খান ও এজিএস পদে সাদমান হাসান খান নির্বাচিত হন।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল : ভিপি পদে বুবলী আহমেদ ও জিএস পদে সুমাইয়া খানম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এই হলে এজিএস পদে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় পদটি শূণ্য রয়েছে।
১০নং (ছাত্র) হল : ভিপি পদে আসিফ মিয়া, জিএস মেহেদী হাসান ও এজিএস পদে নাদিম মাহমুদ নির্বাচিত হন।
১৫নং (ছাত্রী) হল : ভিপি পদে শারমীন খাতুন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং জিএস পদে মেহনাজ মোহনা ও এজিএস পদে শাহানা আক্তার নির্বাচিত হন।
তারামন বিবি হল : ভিপি পদে ফারজানা আক্তার ঊর্মি ও জিএস পদে প্রিয়াঙ্কা কর্মকার জয়লাভ করেছেন।
রোকেয়া হল : ভিপি পদে তাফমিম খানম ও জিএস পদে নাবিলা মাহজাবিন জয়লাভ করেছেন।
ফজিলতুন্নেসা হল : ভিপি পদে ঐশী সরকার (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা) এবং জিএস নির্বাচিত হয়েছেন ফারজানা তাবাসসুম।
সুফিয়া কামাল হল : ভিপি পদে জান্নাতুন নাঈম সেরিন এবং জিএস হয়েছেন রুবিনা জাহান তিথি নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রীতিলতা হল : ভিপি পদে সুমাইয়া আক্তার ও জিএস পদে ইকফা রহমান নির্বাচিত হয়েছেন।
নবনির্বাচিত ভিপির প্রতিক্রিয়া : শিক্ষার্থীদের যেকোনো চাওয়া-পাওয়াকে সবার আগে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন জাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু। গতকাল সন্ধ্যায় ভিপি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। জাকসুর নবনির্বাচিত এ ভিপি বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার ওপর যে ভরসা রেখেছেন, সেই জায়গা থেকে আমি অবশ্যই শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সবসময় কাজ করার চেষ্টা করব। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকারের প্রশ্নে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নে কখনো আপস করিনি। আগামীতেও আপস করব না, ইনশা আল্লাহ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা ভোট বর্জন করেছে তারা কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী। আমার প্রথম কাজ হলো দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে একটি ইনক্লুসিভ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা। যেখানে সবার চিন্তাভাবনা নিয়ে আমরা আগামীর নতুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ করব, ইনশা আল্লাহ। আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠুভাবে স¤পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশন আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন স¤পন্ন হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা ছিল, কিছু ত্রুটি ছিল।
নবনির্বাচিত জিএসের প্রতিক্রিয়া : নবনির্বাচিত জাকসুর জিএস পদে মাজহারুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ফলাফল ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট। এসময় নব নির্বাচিত জিএস মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা মনে করি আমরা আজ বিজয় অর্জন করিনি। আমরা তখনই বিজয় অর্জন করব, যেদিন আমরা আমাদের জাকসু থেকে দায়িত্ব পালন শেষ করে পরবর্তী জাকসু অনুষ্ঠিত করতে পারব এবং যেদিন শিক্ষার্থীরা আমাদের স্বীকৃতি দেবে যে আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযতভাবে পালন করতে পেরেছি। এই ক্যা¤পাসের হাজার হাজার শিক্ষার্থী যারা আমোদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাদের আমানতের ভার আমরা রক্ষা করতে পেরেছি, সেই দিন আমরা বলতে পারব আমরা বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।
ফলাফল প্রকাশে প্রশাসনের ধীরগতি : জাকসুর ফলাফল প্রকাশে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ভয়াবহ ধীরগতি দেখিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ভোটের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টা পর গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় ফলাফল ঘোষণা করে। এরমধ্যে এই ধীরগতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সকল পর্যায়ে সমালোচনার ব্যাপক ঝড় উঠে। ম্যানুয়ালি ভোট গ্রহণ করায় ফলাফল ঘোষণায় প্রভাব পড়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে অনুষ্ঠিত হয় জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটের আগের দিন রাতে বাম সংগঠন ও ছাত্রদল প্যানেলের প্রার্থীরা ভোট গণনার মেশিন সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের মালিক জামায়াত নেতা- এমন অভিযোগ তোলেন। নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তখন মেশিনের পরিবর্তে ম্যানুয়ালি ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নেয়। দাবি মানার পরও ভোটের দিন বিকেল পৌণে সাড়ে চারটায় নির্বাচন কারচুপির অভিযোগ তুলে ছাত্রদল নির্বাচন বর্জন করে। যদিও তাদের কারচুপির বিষয়ে সাংবাদিকরা সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে দ্রুত সংবাদ সম্মেলন শেষ করে স্থান ত্যাগ করেন। পরে সন্ধ্যা সাতটায় বাম সমর্থিত আরো চারটি প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। আটটি প্যানেলের মধ্যে পাঁচটির ৬৮ জন প্রার্থী ভোট বর্জন করলেও বাকি তিন প্যানেলের ১১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে অনড় থাকেন। উল্লেখ্য, জাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে মোট আটটি প্যানেলসহ মোট ১৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্যানেল আটটি হলো ছাত্রশিবিরের সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম, ছাত্রদলের পূর্নাঙ্গ প্যানেল, ছাত্র ইউনিয়নের (অদ্রি-অর্ক) একাংশের সম্প্রীতির ঐক্য, ছাত্র ইউনিয়ন (ইমন-তানজিম) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট(একাংশ) নিয়ে গঠিত সংশপ্তক পর্ষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) আংশিক প্যানেল, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ।