Site icon The Bangladesh Chronicle

জনতার চোখ বলে একটা কথা আছে: মাহবুব তালুকদার

জনতার চোখ বলে একটা কথা আছে: মাহবুব তালুকদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
৩১ জানুয়ারি ২০১৯

মাহবুব তালুকদার। ছবি: আশরাফুল আলমনির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অবশ্যই দৃশ্যমান হতে হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করলেই যে তা সুষ্ঠু হয়ে যাবে—এমন কোনো কথা নেই। জনতার চোখ বলে একটা কথা আছে।

ঢাকা উত্তর সিটি মেয়রের শূন্য পদে স্থগিত নির্বাচন উপলক্ষে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মাহবুব তালুকদার এ কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইটিআই ভবনে এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি। তারা নতুন করে নির্বাচনেরও দাবি করে। যদিও নির্বাচনের পরের দিন সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, ভোট নিয়ে তিনি তৃপ্ত-সন্তুষ্ট। ভোটে কোনো অনিয়ম হয়নি। ভোটে তাঁরা লজ্জিত নন। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে।

আজ প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমাদের ও আপনাদের সবার কর্মকাণ্ড জনতার চোখে পরীক্ষিত হবে। সুতরাং যথার্থ একটি গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার জন্য আমাদের সবাইকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই সন্তোষজনক হয়েছে?’

এ ক্ষেত্রে পাবলিক পারসেপশন (জনসাধারণের ধারণা) কী—তা নিজেদের কাছেই জিজ্ঞেস করতে হবে।আজ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন তিনি।

মাহবুব তালুকদার বলেন, বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে আমি কিছুটা পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি। এর অভিজ্ঞতা কিঞ্চিৎ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি, যা আপনাদের সহায়ক হতে পারে।’

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে মূলত দুই প্রধান শক্তির ওপর নির্ভরশীল। একদিকে নির্বাচন কর্মকর্তা বা নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমি এখন পর্যন্ত যেসব কাগজপত্র দেখেছি, তাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পর্যবেক্ষক পর্যন্ত সবার প্রতিবেদনে দুটি শব্দ অতিমাত্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। একটি শব্দ হচ্ছে সন্তোষজনক এবং অন্য শব্দটি হচ্ছে স্বাভাবিক। তার মানে কি আমাদের নির্বাচন খুবই সন্তোষজনক হয়েছে? এই ক্ষেত্রে পাবলিক পারসেপশন কী, তা নিজেদের কাছেই জিজ্ঞেস করতে হবে।’

দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ কিছু অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে তাদের গবেষণায়। ভোটে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করে টিআইবি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিচার বিভাগীয় তদন্তের পক্ষে মত দেয় সংস্থাটি।

আজকের অনুষ্ঠানে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি ভারত সফরে গিয়ে ওই দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার স্বচ্ছতার বিষয়ে কথা বলেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমি ভারতে ছিলাম। সেখানে একটি পত্রিকায় নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা নিয়ে লেখা একটি আর্টিকেল পড়ি। তাতে দু-একটি ঘটনার উল্লেখ করা ছিল। এতে লক্ষ করা যায়, নির্বাচনী দায়িত্বে যাঁরা নিয়োজিত, সেই নির্বাচনী কর্মকর্তারা নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে অনড় ছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনিয়ম সম্পর্কে তাঁরা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে পিছপা হননি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত অনেক বৈপরীত্য সত্ত্বেও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা সমুন্নত রেখেছে। তার পেছনে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের অবদান কম নয়।’

নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব বলেন, ‘ইসিতে আমার দুই বছরের অভিজ্ঞতা বলে, বিভিন্ন প্রতিবেদনে, বিশেষত নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনে সাধারণত কোনো নেতিবাচক বিষয় লিপিবদ্ধ করার বিষয়ে আমরা দ্বিধান্বিত। সবাই যেন কাগজপত্রে গা বাঁচিয়ে চলতে চান। যদি কেউ তথ্য–উপাত্ত দিয়ে আমার কথার বিরোধিতা করতে পারেন, তাহলে আমি খুশি হব। আমি মনে করি, নির্বাচনে প্রকৃত চিত্রটি সব প্রতিবেদনে উঠে আসা উচিত।’

আসন্ন সিটি নির্বাচন নিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাকে আমি নাতিশীতোষ্ণ নির্বাচন বলব। কারণ, এই নির্বাচনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কথা ছিল। যে উত্তাপ ও উষ্ণতা থাকার কথা ছিল, এখন পর্যন্ত অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় তা হবে না। কেবল কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিছুটা উষ্ণতা আশা করা যায়। আসন্ন নির্বাচনের শৈত্যপ্রবাহ তাতে কেটে যাবে বলে আমরা মনে করতে পারি।’

মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর ঢাকার এই নির্বাচনের দিকে দেশবাসী, এমনকি উন্নয়ন সহযোগীরা তাকিয়ে আছেন আমরা কী ধরনের নির্বাচন উপহার দিই তা দেখার জন্য। নির্বাচনকালে আমরা কোনো চাপ, কোনো ভয়ভীতি বা প্রলোভনের কাছে নতি স্বীকার করব না।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা উদ্ধৃত করে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।’

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

Exit mobile version