‘আমার ছেলে রহমত উল্লাহ গুম হয়েছে। ছেলেকে আমার বুক থেকে নিয়ে গেছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় আছে; কিছুই জানি না। আমার কলিজার টুকরো ছেলেকে ফেরত চাই।’ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ আকুতি জানান নিখোঁজ মোহাম্মদ রহমত উল্লাহর মা মমতাজ বেগম।
তিনি জানান, প্রায় পাঁচ মাস ধরে ২০ বছর বয়সী রহমতের খোঁজ পাচ্ছেন না। তাঁর অভিযোগ, র্যাবের পোশাক এবং সাদা পোশাকের একটি দল তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে। তাঁর ছেলে রাজনীতিতে জড়িত না। কারও সঙ্গে কোনো বিবাদও নেই। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘কিছুই আমি জানি না। কোনো খোঁজ দেয় না।’
মমতাজ বেগম বলেন, ‘কাকে নিয়ে বেঁচে থাকব! আমার শ্বাস-প্রশ্বাস রহমত উল্লাহ। নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন আগে থেকেই প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিল। কিছু খেতে পারছিল না। আমার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল। তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি বলে দিন– কোথায় গেলে সন্তানকে ফিরে পাব। কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রহমত উল্লাহর বড় বোন রাজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ২০১৩ সালে মারা গেছেন। ভাইবোনদের মধ্যে আমি বড়। মেজ ভাই ওবায়দুর সৌদি আরবে আছে। তার স্ত্রী সাথী আক্তার, মা মমতাজ বেগম ও ছোট ভাই রহমত উল্লাহ একই বাড়িতে থাকে।’
রাজিয়া বলেন, ওই রাতে রহমত উল্লাহকে নিয়ে যাওয়ার সময় মা মমতাজ বেগম পেছন পেছন যান। তিনি বাইরে র্যাবের একটি গাড়ি এবং একটি মাইক্রোবাস দেখতে পান। মাইক্রোবাসে রহমতকে তোলা হয়। পরদিন মানিকগঞ্জ র্যাব ক্যাম্পে গেলে ধামরাই থানায় খোঁজ নিতে বলা হয়। কিন্তু থানা কোনো তথ্য দেয়নি। নবীনগর র্যাব ক্যাম্প ও সাভারে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়েও তাঁরা খোঁজ নিতে যান। জিডি করতে গেলে ধামরাই থানা প্রথমে নেয়নি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর ৭ অক্টোবর জিডি করা হয়।
তিনি বলেন, সারাদেশে রহমতের মতো শত শত মানুষ গুমের শিকার হয়েছে। মায়ের ডাক তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি, মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, রহমতের খালা সায়রা খাতুন। নিখোঁজ অন্য ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঝুমুর আক্তার, বেবি আক্তার, মিনু আক্তার, ইমন ওমর, হ্যাপি আক্তার সুমনি, লামিয়া আক্তার মিম।
সমকাল