Site icon The Bangladesh Chronicle

ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীরা পররাষ্ট্রে এখনও সুবিধাভোগী

ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীরা পররাষ্ট্রে এখনও সুবিধাভোগী.

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে কর্মকর্তারা বেশি সোচ্চার ছিলেন, তারা এখনও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাচ্ছেন। এর প্রতিবাদ করছেন অন্য কর্মকর্তারা। এ কারণেই বিদায় নিতে হচ্ছে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে। গতকাল রোববার বিকেলে তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তড়িঘড়ি করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়া কর্মকর্তাদের নতুন পদায়ন করা হয় এবং ভবিষ্যতে তারা যেন কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়েন সেজন্য কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করে সাধারণ পাসপোর্ট দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগীদের একের পর এক বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তা। দেশে পরিবর্তনের হাওয়া চললেও তারা আগের অবস্থানেই আছেন। তাই মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারা মোমেনের বিদায় চান। কর্মকর্তাদের দাবির মুখে তাঁর নিয়োগের চুক্তি বাতিল হচ্ছে।

অন্য এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমান চিফ অব প্রটোকল বা রাষ্ট্রাচার প্রধান নাঈম উদ্দিন আহমেদকে দ্রুত জাপানে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। নাঈমকে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত করা হবে বলে জাপানকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। তাঁকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে, অথচ তিনি শেখ হাসিনা সরকারের হত্যাকাণ্ডে সমর্থন জুগিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাষ্ট্রাচার প্রধান পদ বিশ্বস্ত লোককে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে রাষ্ট্রাচার প্রধান বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যদের মতো তাদের একদম কাছে থাকেন। নাঈম উদ্দিন ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনে যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে, তাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জামায়াত-শিবির, বিএনপি মিলিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সমকালের হাতে আসা কিছু স্ক্রিনশটে দেখা যায়, নাঈম উদ্দিন গ্রুপে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও দিয়ে লিখেছেন, ‘চট্টগ্রামের ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর হামলা করে কোটা আন্দোলনের নেতারা, ছাত্রদল, শিবির।’ গ্রুপে আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে ছাত্রদল, শিবির কর্মীরাও মাঠে আছে। এবং সহিংসতা করছে এবং সামনে আরও বড় নাশকতা করার পরিকল্পনা করছে।’ আরেকটি পোস্টে নাঈম লিখেছেন, ‘বাড্ডায় কিছু সংখ্যক পুলিশ আন্দোলনকারীদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে আছে, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে। আন্দোলনকারীরা ভার্সিটির বিভিন্ন ফ্লোরে আগুন দিতে দিতে পুলিশকে ছাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। র‍্যাবের হেলিকপ্টার তাদেরকে উদ্ধার করছে।’

এ ছাড়া নাঈমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রুপটিতে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলের পরিচালক মোস্তোফা জামিল খান লিখেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সাথে সাথে আন্দোলনের সমাপ্তি হয়ে গেছে। এখন যদি কেউ রাস্তাঘাটে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে থাকে, তাহলে তাদেরকে আন্দোলনকারী বলার কোনো সুযোগ নেই। এরা সন্ত্রাসী, দেশবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী।’ আন্দোলনের সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করেছিলেন কিনা, নাঈম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে সমকালকে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করিনি।’

এদিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় চুক্তিতে কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সিলর পদে নিয়োগ পাওয়া অপর্ণা রানী পাল ও মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল নিয়েও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। ১১ আগস্ট তাদের চুক্তি বাতিল করে ৩১ আগস্টের মধ্যে দেশে ফিরতে বলা হয়। কিন্তু ১৪ আগস্ট চুক্তি বাতিলের চিঠি পাওয়ার আগেই তারা গা-ঢাকা দেন। এই দু’জনের মিশনে আর যোগাযোগ না করার বিষয়টি কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। ওই দুই কর্মকর্তা চুক্তি বাতিলের আগেই তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের আবেদন করেন। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দিনে তাদের পাসপোর্ট বাতিলের চিঠি ইস্যু করে মন্ত্রণালয়।
তবে বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার অনেক কর্মকর্তা। তারা সংস্কার চান। পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে মোমেনের দুই বছরের চুক্তি শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী ডিসেম্বরে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে বিদায় নিতে হচ্ছে।

বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার কর্মকর্তারা জানান, মাসুদ বিন মোমেনই বদলি ও পদায়ন নীতিমালা তৈরি করেছিলেন। সেই নীতিমালা তিনি নিজেই মানেন না।   তারা বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় এক কর্মকর্তা ছয় বছর ধরে রয়েছেন। অথচ তিন বছর পরপর বদলির নিয়ম রয়েছে। গত জানুয়ারিতে তাঁকে দেশে ফিরতে বলা হয়েছিল। তিনি দেশে না ফিরে আন্দোলনের সময় সেখানেই আবার পদায়ন নিয়ে নেন। একই অবস্থা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জেনেভাসহ ‘ক শ্রেণি’ভুক্ত মিশনগুলোতে। এ পরিস্থিতির অবসান চান কর্মকর্তারা। এজন্য ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা ডেকে কিছু সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।

samakal

Exit mobile version