Site icon The Bangladesh Chronicle

চীনের সমর্থনের পর

 

চীনের সমর্থনের পর – ছবি : নয়া দিগন্ত

১৯৭৫ সালে যখন বাকশাল কায়েম করা হয়, তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পার্লামেন্টে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ বিকামস দ্য হটবেড অব ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স’। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিগত ৫০ বছরে যেকোনো রাজনৈতিক উন্নতি ঘটেনি, তা চলতি ঘটনাবলি প্রমাণ করছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এখনো যে সেই ’৭৫ সময়কালে রয়েছে বাংলাদেশ, তা গত সপ্তাহের বৈদেশিক সম্পর্ক নির্ণয় করলে পরিষ্কার বোঝা যায়। কূটনীতিবিদদের লেখালেখি ও বিশ্লেষণে প্রমাণিত হচ্ছে, বাংলাদেশ একটি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে।

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তন বাংলাদেশকে মস্কো-দিল্লি এক্সিস থেকে মার্কিনবলয়ে প্রতিস্থাপন করে। সেই থেকে ১৯৯৬ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন না হওয়া পর্যন্ত একই নীতি কমবেশি অব্যাহত থাকে। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতাসীন হওয়ার ফলে তারা সব ক্ষেত্রেই অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করে। ২০০৬ সালে ওয়ান-ইলেভেনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাবলির পর প্রকারান্তরে এবার দিল্লি ওয়াশিংটন এক্সিস ক্ষমতাসীন হয়। ২০০৮ সালে লন্ডনের ইকোনমিস্টের ভাষায়- বস্তা বস্তা ভারতীয় টাকা ও রণকৌশলে আওয়ামী লীগ একটি প্যাকেজ ডিলের আওতায় ক্ষমতায় আসে। অভ্যন্তরীণভাবে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগ বেপরোয়া হয়ে উঠে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি প্রতিনিধিত্বহীন বোগাস নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতা চিরস্থায়ীকরণের জন্য তারা নানা কৌশল গ্রহণ করে। যেমন- তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে। বৈদেশিক ক্ষেত্রে ১৯৭৫ সালের আগের অবস্থায় তারা ফিরে যায়। প্রতিবেশীর প্রযত্নে, তাদের প্রয়োজনে ও তাদের স্বার্থে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পুনর্নির্ধারিত হয়।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় ফোরাম-সার্ক অকার্যকর হয়ে পড়ে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টার্সের রক্ষাকবচ হাতে নেয় বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এ দেশে আশ্রয় নেয়া পূর্বাঞ্চলীয় নাগরিকদের ফেরত পাঠানো হয়। ভারতের বহুল আকাক্সিক্ষত ট্রানজিট দিয়ে দেয়া হয়। এমনকি বাংলাদেশের নদী ও নৌ-বন্দরগুলো ভারতের স্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাদের যা দিয়েছেন- তার গৌরব করে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। আজকের প্রতিপাদ্য- শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি দ্ব্যর্থহীন চীনা সমর্থনের পর সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা।

গত ১৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানের প্রতি চীন সমর্থন জানিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখতেও চীন সার্বিক সহায়তা করবে। বেইজিংয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এসব কথা বলেন। ঢাকার চীনা দূতাবাসের ফেসবুক পেজে ওয়াং ওয়েনবিনের বক্তব্যের চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই বিবরণীতে বলা হয়- র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে শেখ হাসিনার মন্তব্য নিয়ে চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য আমাদের নজরে এসেছে। তিনি (শেখ হাসিনা) শুধু বাংলাদেশী জনগণের অবস্থানের দৃঢ় অবস্থান ব্যাখ্যা করেননি, আন্তর্জাতিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বৃহত্তর অংশের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। একটি দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেদের বর্ণবৈষম্য, অস্ত্রের সহিংসতা এবং মাদক সমস্যার প্রতি নজর না দিয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অজুহাত দিয়ে বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। মুখপাত্র ওয়েনবিন আরো জানান, সব ধরনের আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে আমরা বাংলাদেশসহ অন্য সব দেশের সাথে কাজ করব। চীন ও বাংলাদেশ ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ভ‚খণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা, অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক স্বাধীন নীতি সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। জাতীয় বাস্তবতার সাথে খাপ খায় এমন উন্নয়নের পথ অনুসরণে সমর্থন করি। সব রকম আধিপত্য এবং ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও অন্য দেশগুলোকে নিয়ে একসাথে কাজ করতে প্রস্তুত আমরা। জাতীয় বাস্তবতা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতি সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশকে চীন সহায়তা করবে। একই সাথে জাতিসঙ্ঘকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক সিস্টেম, আন্তর্জাতিক আইনের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখার জন্যও আমরা কাজ করব।

 

চীন নীতিগতভাবে দীর্ঘকাল ধরেই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করে আসছে। অবশ্য এর ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায় গত কয়েক বছরে। বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ও কর্মপন্থা যতই বেড়েছে, ততই চীনের আগ্রহ ও কর্মকৌশল বিস্তৃত হয়েছে। অতি সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত ভিসানীতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বিচলিত করে। ভিসানীতি নিয়ে তাদের মন্তব্যগুলো এক করলে আসলেই যে তারা প্রলাপ বকছেন, তা বোঝা যাবে। সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ভিসানীতি করুক তাতে আমাদের কিছু আসে-যায় না। ভিসানীতি আমাদেরও থাকতে পারে। আমরাও করতে পারি। অপেক্ষায় থাকুন। যেখানে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা করলেই যেকোনো সরকার পরিবর্তনের সক্ষমতা রাখে, সেখানে আমরাও যেন মার্কিন সরকার পরিবর্তন করতে পারি- ওবায়দুল কাদেরের কথায় সেরকম সক্ষমতাই ভেসে আসে। তবে বাস্তবতা যে কতই করুণ, অবুঝ বালকও তা বোঝে। এই মন্তব্যের আগে প্রধানমন্ত্রী নিজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যেসব কথা বলেছেন, তার সবটাই ক‚টনীতিসুলভ ছিল এমন বলা যাবে না। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাব না- এ ধরনের মন্তব্যও এ দেশের নাগরিক সাধারণের স্বার্থ বহন করে না। যাই হোক, বোঝা যাচ্ছে- ভেতরে ভেতরে মার্কিনিদের সাথে সম্পর্ক এতই তেতো হয়ে গেছে যে, কর্তাব্যক্তিরা সময়-সুযোগ পেলেই আমেরিকার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন। একটি পয়েন্ট অব নো রিটার্নে পৌঁছে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বা এই সরকারকে পছন্দ করে না। হটাতে চায়। এরকম মন্তব্যও আকারে-ইঙ্গিতে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে উচ্চারিত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার সঙ্গতভাবেই বিকল্প শক্তির সন্ধান করছে। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন, যারা স্যাংশন দেবে তাদের থেকে কোনো কিছু না কেনার জন্য। আর বাংলাদেশ যে স্যাংশন দিতে পারে ওবায়দুল কাদেরের কথায় সেটিও বুঝলেন। আপনাদের মনে করিয়ে দিই, ২০০৬ সালের দিকে বাংলাদেশে বাংলা ভাই ও জেএমবির উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে পাশ্চাত্য বাংলাদেশকে পরবর্তী আফগানিস্তান বিবেচনা করে রণকৌশল প্রণয়ন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন পাকিস্তান, আফগানিস্তান নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের বিষয়টি ভারতের প্রযত্নে ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন প্রকাশ্যেই ঘোষণা দেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বকে স্বীকার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। বারাক ওবামার পর বিদেশের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন এত মাথা ঘামাতে চায়নি। ভারতের প্রভুত্ব অব্যাহত ছিল। জো বাইডেন এসে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে পুনর্গঠন করেন, তখন ভারতের সাথে মার্কিন বিরোধ দেখা দেয়। খোদ ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর মোদি প্রশাসনের নিপীড়নমূলক আচরণের অব্যাহত নিন্দা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ক্রমহ্রাসমান অবস্থা ও মানবাধিকার দলন বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এত দিন যাদের প্রযত্নে মার্কিন নীতিগুলোর দেখভাল হচ্ছিল সেই ভারতের ওপরও আস্থা হারায় বাইডেন প্রশাসন। তাই প্রযত্ন বাদ দিয়ে সরাসরি সম্পর্ক বিন্যাসের চেষ্টা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে গোটা বিশ্বে প্রশ্ন উত্থাপিত হলেও ভারতের সাফাই ও সমর্থন ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, তারা বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়ভিত্তিক উন্নতি বিধান ও প্রতিবিধানের অনুরোধ করলেও তারা বরং রাজনীতির ভাষায় কথা বলেছেন, যা প্রকৃত অবস্থার উন্নয়ন ঘটায়নি। বিশেষত বাংলাদেশে ২০২৪ সালের সমাগত নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর প্রবল চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আর এ কথা একটি অপ্রিয় সত্য, এ ধরনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জনগণ ভেতরে ভেতরে অসম্ভব সংক্ষুব্ধ হয়ে আছে। শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের আন্দোলনকে বরাবরই প্রতিহত করে আসছে। দিনে দিনে অবস্থার এতটা অবনতি হয়েছে যে, ভারত আর বাংলাদেশের ব্যাপারে আগের মতো হস্তক্ষেপের বাস্তব অবস্থায় নেই। তাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার বায়না ধরতে হয়। নেতৃত্ব ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে মোদি সরকারের অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ভারত সফরের সময় প্রটোকলের ঘাটতি এবং সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার- অব্যাহত সম্প্রীতির উদাহরণ বহন করে না। ঘরে-বাইরে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দিশেহারা এবং ভারতের ওপর নির্ভরতা শতভাগ আর নয়- এ প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বারস্থ হয়েছে চীনের- এ ধরনের বিশ্লেষণ কূটনীতিকদের। বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের মধ্যকার দ্বন্দ্বে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে- এ কথা আগেই বলা হয়েছে। এখন ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি চীনের সমর্থন ভারতের ভ্রু কুঁচকে দেবে, এটিই স্বাভাবিক।

দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চীন ও ভারত একে অপরের বৈরী। ভারত ১৯৬২ সালে চীনের মহা আক্রমণের কথা ভুলতে পারবে না। দীর্ঘ সীমান্তের ব্যাপক এলাকা রয়েছে চীনের দখলে। লাদাখ, সিকিম সীমান্ত ও বাংলাদেশের নিকটবর্তী শিলিগুড়ি করিডোর- উভয় পক্ষের যুদ্ধ প্রস্তুতির ক্রীড়াক্ষেত্র। পাকিস্তান চীনের অকৃত্রিম বন্ধু, এটিও একটি বড় ফ্যাক্টর। প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর আধিপত্যের লড়াই নিয়ে দুটো দেশ রীতিমতো কসরতরত। মিয়ানমারকে কারা কত খুশি করতে পারে তার প্রতিযোগিতা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে। নেপাল দুই রাষ্ট্রের মাঝামাঝি ‘বাফার স্টেট’। সিংহল ও মালদ্বীপে সরকার পরিবর্তনে উভয় রাষ্ট্রই দৃশ্যমানভাবে দ্বন্দ্বে লিপ্ত। বাংলাদেশকে এতদিন মনে করা হয়েছিল- ‘ভারতের নিজস্ব সম্পত্তি’। এখন শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন এই নিজস্ব সম্পত্তিতে ভাগ বসানোর অপচেষ্টা হিসেবে গ্রহণ করবে ভারত, এটি কি স্বাভাবিক নয়?

ভারত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতে আওয়ামী লীগ সরকারের উপকার না হয়ে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নিশ্চয়ই চীনের এই সমর্থন আদায়ের পেছনে আওয়ামী লীগ সরকারের যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালাতে হয়েছে। চীন এখন আর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। বৈশ্বিক আধিপত্য ও শুধুই অর্থের সন্ধান- তাদেরকে ইতোমধ্যে আরেকটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমনিতেই বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় ধরনের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। চীনের নতুন নিশ্চয়তার পর এটি আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। সে ক্ষেত্রে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়বে বাংলাদেশ তথা আওয়ামী লীগ সরকার।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, পরস্পর বৈরী ভারত চীনের এই সমীকরণ বাংলাদেশের প্রতি বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রবল চাপ অনুভূত হচ্ছে তা সম্ভাব্য মোদি বাইডেন বৈঠকে প্রশমিত হবে বলে কূটনীতিবিদরা মনে করেন না। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও কূটনৈতিক পরিভাষাকে অতিক্রম করে মোদির পক্ষেও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলাটা বিব্রতকর। সুতরাং আওয়ামী লীগের অসহায়ত্ব ও পলায়নপর কৌশল সামনের দিনগুলোতে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
jjshim146@yahoo.com

 

Exit mobile version