Site icon The Bangladesh Chronicle

চীনা বিরোধিতা : আইসিজের আদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি নিরাপত্তা পরিষদ

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

চীনা বিরোধিতা : আইসিজের আদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি নিরাপত্তা পরিষদ – ছবি : সংগৃহীত

রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-নির্যাতন বন্ধ এবং গণহত্যার অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আলামতগুলো সংরক্ষণে মিয়ানমারকে দেয়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ বাস্তবায়নে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। ভেটো ক্ষমতার অধিকারী চীনের বিরোধিতার কারণে নিরাপত্তা পরিষদ এ ব্যাপারে কোনো বিবৃতি দিতে পারেনি। নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে ভিয়েতনাম এ ক্ষেত্রে চীনের অবস্থানকে সমর্থন দিয়েছে।

গতকাল বুধবার নিউ ইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারকে দেয়া আইসিজের অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। গত ২৩ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডের দ্যা হেগে আইসিজে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা অভিযোগের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ হিসেবে এ আদেশ দেন। আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়নের জন্য নিয়মানুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদকে নোটিশ দিয়েছিলেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব।

আইসিজে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আইসিজের রায় বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন সনদ স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক। তবে আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ ছাড়া বিশ্ব আদালতের রায় বা আদেশ কার্যকরের অন্য কোনো পদ্ধতি নেই।
নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় আইসিজের আদেশ বাস্তবায়নে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিউ ইয়র্কে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজের আদেশ প্রতিপালন করা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বাধ্যতামূলক। তাই আইসিজের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নিতে হবে। রাখাইনসহ কাচিন ও শান রাজ্যের সঙ্ঘাত নিরসনে মিয়ানমারকে উদ্যোগী হতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এ প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ইইউভুক্ত নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, এস্তোনিয়ার পাশাপাশি পোল্যান্ড যৌথভাবে এই বিবৃতি দিয়েছে। পোল্যান্ড নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক সদস্য রাষ্ট্র।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদার সাথে টেকসই প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
‘বিশ্ব আদালত’ নামে পরিচিত জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজে ১৫ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত, যারা নিরাপত্তা পরিষদ বা সাধারণ পরিষদ দ্বারা নির্বাচিত। গত ১০ ডিসেম্বর আইসিজেতে শুনানির প্রথম দিন গাম্বিয়া বক্তব্য উত্থাপন করে। পরদিন বক্তব্য রাখে মিয়ানমার। শেষ দিন গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়েই পাল্টাপাল্টি যুক্তিতর্ক উত্থাপন করে। শুনানি শেষ হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর আইসিজে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের ব্যাপারে ২৩ জানুয়ারি সিদ্ধান্ত জানান।

আইসিজের শুনানিতে গাম্বিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির বিচারমন্ত্রী ও আটর্নি জেনারেল আবুবাকার তামবাদু। অন্য দিকে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির রাষ্ট্রীয় পরামর্শক ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চি। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে অভিযোগ দায়েরে গাম্বিয়াকে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস।
আইসিজের বিচারকরা সর্বসম্মতভাবে অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে আদেশ দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তিসংক্রান্ত সনদের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী মিয়ানমার তার ভূখণ্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কোনো সদস্যকে হত্যা, শরীরিক বা মানসিকভাবে গুরুতর আঘাত, সম্প্রদায়কে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের লক্ষ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণ এবং তাদের সন্তান জন্মদানে বাধা প্রদানে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে না। মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে তার সামরিক বাহিনী অথবা তার নির্দেশনায় পরিচালিত, নিয়ন্ত্রিত বা সমর্থিত কোনো অনিয়মিত সশস্র ইউনিট, সংস্থা বা ব্যক্তি গণহত্যার ষড়যন্ত্র, গণহত্যায় উসকানি দান অথবা গণহত্যা সংঘটনে বিরত থাকে।

আদেশে বলা হয়, গণহত্যার অভিযোগের সাথে সংশ্লিষ্ট আলামত ধ্বংসের কোনো প্রচেষ্টা রোধ করে তথ্য-প্রমাণ সংরক্ষণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে নেয়া সব পদক্ষেপ সম্পর্কে মিয়ানমারকে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে। এরপর চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত ছয় মাস অন্তর প্রতিবেদন দিতে হবে। একই সাথে গাম্বিয়াকে এ সব প্রতিবেদন সরবরাহ করতে হবেÑ যাতে দেশটি তাদের মতামত দিতে পারে।

Exit mobile version