অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচার বোমা হামলার পরও ইসরায়েলের ভেতরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর অভিযান চলছে। তাদের সহযোগিতা করতে দলে দলে ইসরায়েলে ঢুকছেন লেবানন ও সিরিয়ার যোদ্ধারা। ইসরায়েলিদের ওপর হামলা হচ্ছে পশ্চিমতীর থেকেও। ফলে চার দিক থেকে হামলা সামলাতে গিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার অনেক স্থানে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি মেডিকেল সার্ভিস ফিলিস্তিনিদের অভিযানে নিহতের সংখ্যা ৯০০-র বেশি বললেও সেই সংখ্যা সহ¯্রাধিক বলে জানিয়েছে দেশটির কিছু সংবাদমাধ্যম। প্রাণহানি এড়াতে গাজা সীমান্তের পাশের এলাকাগুলো থেকে প্রায় সব নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল।
পরিকল্পিত সামরিক অভিযান দীর্ঘায়িত করার আভাস দিয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা বলেছেন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া। তিনি বলেছেন, সামরিক অভিযান সম্পন্ন হওয়ার আগে প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর হাতে বন্দি হওয়া ইসরায়েলিদের বিনিময় নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হবে না।
তাছাড়া, গাজায় বোমা হামলা চালিয়ে নিরীহ বেসামরিক মানুষ হত্যা বন্ধ না করলে প্রত্যেক অঘোষিত হামলার জন্য একজন করে ইসরায়েলি বন্দিকে হত্যা করা হবে বলে জানিয়েছে হামাস। সংগঠনের সামরিক শাখা আল-কাস্সাম ব্রিগেডসের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেন ‘কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই নিরাপরাধ ফিলিস্তিনিকে টার্গেট করা হলে এর পরিণতি খারাপ হবে। তখন আমাদের জিম্মায় থাকা ইসরায়েলি নাগরিকদের হত্যা করে সেই দৃশ্য সম্প্রচার করতে বাধ্য হব।’ আবু ওবায়দা বলেন, ‘এ-ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের খারাপ লাগছে। কিন্তু এ-জন্য ইসরায়েল ও তাদের নেতৃত্বই দায়ী।’ ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত ভূখ-ে প্রবেশের পর প্রায় ১৫০ ইসরায়েলিকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে এসেছেন হামাস যোদ্ধারা।
২
এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী হামাসের অভিযানে নিহত আরও ৩৮ সেনাসদস্যের নাম প্রকাশ করেছে। এতে চার দিনে নিহত সেনাসদস্যের সংখ্যা দাঁড়াল ১২৩-এ। যুদ্ধে নিহত আরও চার কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি পুলিশ। এতে নিহত পুলিশ কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়াল ৪১-এ। মঙ্গলবার সকালেও ইসরায়েলে রকেট হামলা হয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এ-সময় দক্ষিণ ইসরায়েলে সাইরেন বাজতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটোছুটি করতে থাকেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের কাছে খবর এসেছে, সিরিয়া ও লেবানন থেকে আকাশপথে যোদ্ধারা ইসরায়েলে প্রবেশ করছেন। সন্দেভাজন এলাকাগুলোতে বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ইসরায়েল।
হামাসের নজিরবিহীন অভিযানের জবাবে শনিবার থেকেই গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। মঙ্গলবারও গাজার বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, টানেল, মসজিদ, শরণার্থীশিবির ও হামাস নেতাদের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক হেশাম নাওয়াজা, মোহাম্মদ সোবোহ এবং সাইদ আল-তাভিল-ও রয়েছেন।
তাছাড়া, গাজা উপত্যকার আশপাশে ইসরায়েলের ভেতর প্রায় ১ হাজার ৫০০ হামাস যোদ্ধার লাশ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিচার্ড হেচট সাংবাদিকদের বলেন, গাজার সঙ্গে থাকা সীমান্তে কম-বেশি নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে ইসরায়েল।
৩
ইসরায়েল যখন গাজা-সীমান্ত নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত, তখন ফিলিস্তিন ও লেবাননের অনেক যোদ্ধা লেবানন-সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলোর জানিয়েছে আলজাজিরা। খবরে বলা হয়, সোমবার দক্ষিণ লেবানন থেকে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি সীমান্ত দেয়ালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করেন। ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ আন্দোলনের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেডস বলেছে, তারা দক্ষিণ লেবানন সীমান্ত দিয়ে ইসরাইলে ঢুকে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, লেবানন সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকালে সেখানে লেফটেন্যাট কর্নেল আলিম আবদাল্লাহ নামে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক ডেপুটি কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এ-দিন লেবানন ভূখ- থেকে ইসরায়েলে ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় বলে কোনো কোনো সূত্র দাবি করেছে। এর বিপরীতে আকাশে বিমান ও ড্রোন উড়িয়েছে ইসরায়েল। হিজবুল্লাহ স্বীকার করেছে, ইসরায়েলি গোলায় তাদের কয়েকজন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
এদিকে, হামাসের অভিযান নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আসা বিভিন্ন কল্পকাহিনী নিয়ে কথা বলেছেন হামাসের নির্বাসিত নেতা আলী বারাকেহ। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে তিনি বলেছেন, ইসরায়েলে শুরু হওয়া ব্যাপকভিত্তিক এই অভিযান সম্পর্কে গাজার অল্পসংখ্যক শীর্ষ কমান্ডারই জানতেন। একইসঙ্গে তিনি জানান, গাজা যদি ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়, তবে ইরান ও হিজবুল্লাহ-র মতো মিত্ররা তাদের সঙ্গে থাকবে। আলী বারাকেহ বলেন, গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় কমান্ড বা হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর কেউ লেবাননের রাজধানীতে ছিলেন না। তিনি স্বীকার করেন, ইরান ও হিজবুল্লাহ অতীতে হামাসকে সাহায্য করেছে। তবে, ২০১৪ সালের গাজা-যুদ্ধের পর থেকে হামাস নিজস্ব প্রযুক্তিতে রকেট তৈরি করছে এবং নিজের যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
৪
আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলে অভিযান শুরুর পর অনেক বিদেশি নিহত হয়েছেন; নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী থাইল্যান্ডের ১২ জন নিহত হয়েছেন; ১১ জনকে বন্দি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১১ জন নিহত; অনেকে বন্দি হয়েছেন। নেপালের ১০ জন নিহত হয়েছেন। আর্জেন্টিনার ৭ জন নিহত ও ১৫ নিখোঁজ রয়েছেন। তাছাড়া, আরও যেসব দেশের নাগরিক নিহত কিংবা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের মধ্যে আছে- ইউক্রেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, কম্বোডিয়া, জার্মানি, ব্রাজিল, চিলি, ইতালি, প্যারাগুয়ে, পেরু, তানজানিয়া, মেক্সিকো, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, পানামা ও আয়ারল্যান্ড।
এদিকে, গাজা ভূখ-ে ইসরায়েলের হামলা থামাতে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে তিনি টেলিফোন করেন। গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান বোমাবর্ষণ থামানোর জন্য জরুরিভিত্তিতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার জনগণের জন্য চিকিৎসা ও ত্রাণসামগ্রী আসার পথ সুগম করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও অনুরোধ জানিয়েছেন মাহমুদ আব্বাস।
এমবিএস হিসেবে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সোমবার ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এমবিএস বলেন, চলমান উত্তেজনা প্রশমনে সৌদি আরব সব আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পক্ষের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠা, মর্যাদাপূর্ণ জীবন-সংগ্রাম, আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন এবং ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জনে তাদের পাশে থাকবে সৌদি আরব।
৫
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘাত বন্ধের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমাধান হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। শুধু লড়াই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না। সোমবার রাশিয়ায় আরব লিগের প্রধানের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভ বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশাপাশি থাকবে। এটিই হলো সমাধানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পথ।
হামাস-ইসরায়েল সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আল-আকসা মসজিদের বিরুদ্ধে যে-কোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা অব্যাহত রাখবে তুরস্ক।’ চলমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত বন্ধ করতে এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা কমাতে তুরস্ক তার ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ডা. আলী আকবর বেলায়েতি বলেছেন, এই অঞ্চলের কোনো কোনো দেশ দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে। তারা এটা করলে গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে এবং সংগ্রামী জাতিগুলো বিপদে পড়বে। তিনি বলেন, যারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায়, তাদের উচিত সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে শিক্ষা নেওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল চার্লস কিউ ব্রাউন ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে না জড়ানোর জন্য ইরানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তিনি চান না, এই যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হোক। সোমবার সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, ইরানের ব্যাপারে তার চাওয়া কী? জবাবে এই জেনারেল বলেন, ইরান যেন এখানে জড়িত না হয়। তিনি জানান, ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দেশটির কাছে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করা হচ্ছে। তবে, ইসরায়েলে মার্কিন সেনা পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি।
৬
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গাজায় স্থল অভিযানের জন্য বিশাল সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে ইসরায়েল। এ-লক্ষ্যে তিন লাখ সংরক্ষিত সেনাকে বাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে। ইসরায়েল বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, দুই দিনে তিন লাখ সংরক্ষিত সেনাকে বাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে। এর আগে এত সংখ্যক সংরক্ষিত সেনা একত্রিত করা হয়নি।
আলজাজিরা জানিয়েছে, গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। উপত্যকাটিতে খাবার, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। উপত্যকায় জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো কিছুই ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। সোমবার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ট বলেছেন, ‘আমি গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দিয়েছি। বিদ্যুৎ, খাবার, গ্যাসসহ সবকিছুই সেখানে বন্ধ থাকবে।’ পশ্চিমতীরও অবরুদ্ধ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে শহরগুলোর প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মিসরের সঙ্গে গাজার দক্ষিণ সীমান্ত রাফাহ ক্রসিং-ও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মিসরের নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলা বেসামরিক নাগরিকদের পাশাপাশি ক্রসিংয়ে থাকা কর্মচারীদের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। যে কোনো অনুপ্রবেশের চেষ্টা বন্ধ করতে সীমান্ত বন্ধ করা হয় বলে জানায় সূত্রগুলো।
এই অবস্থায় গাজার হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য একটি নিরাপদ করিডোর খোলার আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গাজায় মানবিক করিডোর খোলার আহ্বান জানিয়েছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা-ও। গাজার শিফা হাসপাতাল থেকে আলজাজিরার ইউমনা এল সায়েদ জানিয়েছেন, চিকিৎসা সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল; পরিস্থিতি ভয়াবহ।
৭
গাজায় প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস। এর মধ্যে হামলার পর ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৮ ফিলিস্তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ইসরায়েল বিদ্যুৎ বন্ধের পর গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি শেষ সম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে এই কেন্দ্রের জ্বালানি শেষ হয়ে যেতে পারে। গাজার বেশির ভাগ বিদ্যুৎ আসে ইসরায়েল থেকে। ইসরায়েল থেকে প্রতিদিন ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনে গাজা। আর দিনে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েলের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে পাল্টে দেবে। সোমবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থানীয় মেয়রদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেছেন, হামাসের পরিণতি হবে কঠিন ও ভয়াবহ। এ-তো কেবল শুরু; আমরা আপনাদের সঙ্গে রয়েছি এবং বিপুল শক্তি দিয়ে আমরা তাদের পরাজিত করব।
এদিকে, গাজায় চলমান সংঘাতের জন্য হামাসকে দায়ী করে ফিলিস্তিনের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ৭২ কোটি ৯০ লাখ ডলার সহায়তার কিস্তি প্রদান স্থগিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংস্থাটির ‘নেইবারহুড অ্যান্ড এনলার্জমেন্ট’ বিভাগের কমিশনার অলিভার ভারহেইলি সোমবার সংঘাতের জন্য হামাসকে সরাসরি দায়ী করেন।
মিসরীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হামাসের অভিযান নিয়ে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। টাইমস অব ইসরায়েলের বরাতে জানা যায়, নাম না প্রকাশের শর্তে ওই কর্মকর্তা সোমবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইসরায়েলকে বারবার সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল, গাজাভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠনগুলো বড় কিছুর পরিকল্পনা করছে। মিসরীয় এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা তাদের এমন বড় একটি বিস্ফোরক অবস্থার বিষয়ে সতর্ক করে আসছিলাম। তবে তারা এসব সতর্কবার্তার তোয়াক্কা করেনি। ইসরায়েল কেন এই কথা আমলে নেয়নি, তা নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে সামনে আনছেন অনেক বিশ্লেষক। তারা বলছেন, ইসরায়েল চেয়েছিল এ-ধরনের একটি হামলা হোক; এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন উপস্থিতি জোরদার হবে এবং গাজাকে নিশ্চিহ্ন করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে।