কুমিল্লায় তিন লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ভাঙচুর, লুটপাট ও পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের সোনাইচা-পদুয়া রাস্তার মাথায় এ প্লাস গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সাসটেইনেবল অ্যাপারেলস লিমিটেডের অফিসে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, চাঁদা না পেয়ে স্থানীয় একটি গ্রুপের এটি তৃতীয় বারের মতো হামলা। এর আগেও আরও দুইবার তারা হামলা করেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। প্রথমে ২৮ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রতিষ্ঠানে তালা দেওয়া হয়। সেদিনই রাতে আরেক দফা হামলা করে অফিসের ক্যামেরার ডিভিডি, নির্মাণকাজের দুটি ভেকু মেশিন এবং অফিস কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনার সাত দিন পর সোমবার আবারও হামলার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার সন্ধ্যায় ওই প্রতিষ্ঠানে শুধু হামলা করে ৫ হাজার ব্যাগ সিমেন্ট এবং ৫০০ টন রডের গুদামে আগুন দিয়ে যন্ত্রপাতি পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগও উঠেছে।
এ ঘটনার পর রাত সাড়ে ১০টায় চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন কোম্পানির সিকিউরিটি ইনচার্জ জলিলুর রহমান।
এ মামলায় আসামি করা হয়েছে আলকরা ইউনিয়নের সোনাইচা গ্রামের বারেকের ছেলে শেখ ফরিদ (৩০), দুলালের ছেলে রায়হান (২০), দুলালের ছেলে রিয়াদ (১৮), আসফালীয়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে টুটুল (৩৫), লক্ষ্মীপুর গ্রামের রফিক মিয়া ড্রাইভারের ছেলে রাজুসহ (৩৬) অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে।
এর আগে ২৮ নভেম্বরের ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কোম্পানির সিকিউরিটি ইনচার্জ জলিলুর রহমান চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পরদিন ২৯ নভেম্বর তিনি বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে আদালতে ছয় জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
২৮ নভেম্বরের মামলায় আসামিরা হলেন— উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের শিলরী গ্রামের ছবুর মিয়ার ছেলে মামুন (৩৭), একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের রাজু (৩৮), আশফালিয়া গ্রামের টুটুল (৩৫), কুলাসার গ্রামের নয়ন (৪০), সোনাইছা গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে কামাল (২৮), শিলরী গ্রামের তাহের পাটোয়ারীর ছেলে শুভ (২৭)।
কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার মো. ইকরাম বলেন, ‘আমরা কাজ শুরুর সময় থেকে তারা আমাদের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। টাকা দিতে অস্বীকার করলে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। চাঁদা না পেয়ে ২৮ নভেম্বর হামলা করে আমাদের যন্ত্রপাতি ও মেশিন পুড়িয়ে দেয়। আমাদের বিভিন্ন জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর আমরা মামলা করি। মামলা করার পর তারা আবার আমাদের মারার হুমকি দেয়। তারা জানায়, যদি আমরা মামলা না উঠাই তাহলে আমাদের মেরে ফেলবে। এবার ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে বসে। চাঁদা না পেয়ে ও মামলা না উঠানোর কারণে তারা সোমবার সন্ধ্যায় আবারও হামলা করেছে। প্রায় ৭০ লাখ টাকার জিনিসপত্র নষ্ট করে ফেলেছে। তা ছাড়া কোটি কোটি টাকা দামের গাড়ি, মেশিন ও যন্ত্রপাতি নষ্ট করে ফেলেছে। আমাদের দুই লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। আমরা আবারও মামলা করেছি। আমরা এর বিচার চাই।’
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভরঞ্জন চাকমা বলেন, ‘চাঁদা দাবির অভিযোগে এ প্লাস গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সাসটেইনেবল অ্যাপারেলস লিমিটেডের কর্মকর্তারা মামলা দায়ের করেন। হামলাকারীরা আবার ক্ষিপ্ত হয়ে আবারও হামলা করেছে। ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি।’