Site icon The Bangladesh Chronicle

চট্টগ্রাম বন্দরের তিন টার্মিনাল যাচ্ছে বিদেশি কোম্পানির হাতে, ডিসেম্বরেই চুক্তি

চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল, নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং প্যানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। আগামী ডিসেম্বরেই এসব পরিচালনা চুক্তি সই হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।

চট্টগ্রাম বন্দর

রবিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীতে ইকনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ওশানগোয়িং শিপিং ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে সরকার একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয় চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালনা কাঠামো সংস্কারের জন্য। ছয় মাস আগে তাদের রিপোর্ট হাতে এসেছে। সেই সুপারিশ অনুযায়ী বন্দর শুল্ক পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।

ইআরএফ সভাপতি দৌলত আখতার মালার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বাংলাদেশ ওশানগোয়িং শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাহিদি সাত্তারও বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ডলারে নির্ধারিত বন্দর শুল্ক প্রায় চার দশক পর বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা (আইএফসি) এর পরামর্শেই এই নতুন কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। আইএফসি, যা বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি অংশ, সরকারকে পতেঙ্গা ও লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালের জন্য কনসেশন চুক্তি প্রণয়নে সহযোগিতা করেছে।

তাদের পরামর্শে তৈরি কাঠামোতে বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ‘নিশ্চিত ট্যারিফ সংস্কার ও সময় নির্ধারিত শুল্ক বৃদ্ধি অপরিহার্য। এর ফলে নতুন শুল্ক কাঠামো মূলত আন্তর্জাতিক অপারেটরদের জন্যই বেশি লাভজনক বলে সমালোচকরা দাবি করছেন।

বর্তমানে সৌদি আরবভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) পরিচালনা করছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। ডিপি ওয়ার্ল্ড পাচ্ছে নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), যা একাই চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় ৪০% কনটেইনার পরিবহন পরিচালনা করে। আর ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ার্স্ক আগ্রহ দেখিয়েছে আইএফসি প্রণীত লালদিয়া টার্মিনালের কনসেশন প্রকল্পে।

নতুন শুল্ক কাঠামো বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিপিএ ও বিদেশি অপারেটর উভয়ই আয় বাড়ালেও সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি ঘটেছে সেইসব সেবায়, যেগুলোর আয় সরাসরি টার্মিনাল অপারেটরদের কাছে যায়।

যেমন- কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং, ক্রেন পরিচালনা, সংরক্ষণ (স্টোরেজ), রিফার প্লাগ-ইন এবং কনটেইনার স্থানান্তরের শুল্ক গড়ে ১৪৪% পর্যন্ত বেড়েছে। অপরদিকে, পাইলটেজ, ন্যাভিগেশন ও নদী ব্যবহারের মতো সিপিএ-নিয়ন্ত্রিত চার্জ বেড়েছে ৭০ শতাংশের মতো।

উদাহরণ হিসেবে, ২০ ফুট রিফার কনটেইনার প্লাগ-ইন চার্জ ৯ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ২০.৯৬ ডলার, যা সম্পূর্ণ টার্মিনাল অপারেটরের আয়ে যাবে।

অন্যদিকে, ১০ হাজার গ্রস রেজিস্টার টন ওজনের জাহাজের ন্যূনতম পাইলটেজ ফি ৩৫৭.৫০ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০০ ডলার, যা সিপিএ পাবে।

তবে বন্দরের অধিকাংশ আয় নির্ভর করে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও সংরক্ষণের ওপর। ফলে এই খাতে বেশি শুল্ক বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক অপারেটরদের রাজস্ব বাড়াবে অনেকগুণ, এমনকি রয়্যালটি প্রদানের পরও।

সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, বে-টার্মিনালের দুটি কনটেইনার বার্থ এবং মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরসহ আসন্ন সব নতুন টার্মিনাল বেসরকারি বিশেষত বিদেশি অপারেটরদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় একটি বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন আসছে, যেখানে সরকারি তত্ত্বাবধানে বিদেশি অংশীদারিত্বই হবে ভবিষ্যতের মূল ধারা।

Exit mobile version