চট্টগ্রামে দিনে ৫ থেকে ৭ বার লোডশেডিং

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দফায় দফায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে দৈনিক যে বিদ্যুতের চাহিদা তার চেয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।

বিদ্যুতের এ পরিস্থিতির কারণে জেনারেটর, আইপিএসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে অনেক গ্রাহককে। আবার যাঁদের সে সামর্থ্য নেই, তাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছাড়া থাকতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড় এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পাঁচবার লোডশেডিং হয়। এই ১০ ঘণ্টার মধ্যে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। অফিস শুরুর পর সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে প্রথমবার বিদ্যুৎ যায়। আসে এক ঘণ্টা পর। এরপরে যতবার বিদ্যুৎ গেছে, ততবার বিদ্যুৎ এসেছে পৌনে এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর। শুরুতে জেনারেটর দিয়ে কোনোরকমে অফিসের কার্যক্রম চালানো হয়। তবে টানা বিদ্যুৎ না থাকায় একপর্যায়ে জেনারেটর বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফা বিদ্যুৎ যায় বেলা ১১টা ৬ মিনিটে, আসে দুপুর ১২টা ২৯ মিনিটে। তৃতীয় দফায় বেলা পৌনে ১টায় গিয়ে আসে ১টা ৫৬ মিনিটে। চতুর্থ দফায় বেলা ২টা ১৩ মিনিটে যাওয়ার পর আসে ১ ঘণ্টা ৩ মিনিট পর। পঞ্চম দফা ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের লোডশেডিং হয়। বেলা ৩টা ৫৪ মিনিটে আবার যায়। দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না আসায় বিকেল পাঁচটায় জেনারেটর বন্ধ করে দিতে হয়। বিদ্যুৎ আসে ৫টা ১৪ মিনিটে। এই ১৪ মিনিট একরকম অন্ধকারেই থাকতে হয়েছে।

একই ধরনের ভোগান্তির কথা জানালেন নগরের আতুরার ডিপো এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে গরমের তীব্রতা বেড়েছে। গরমে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন বিদ্যুতের ভেলকিও বেড়ে গেছে। দিন ও রাত সব সময়ই বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এক–দেড় ঘণ্টা পর এলেও ২০ থেকে ৩০ মিনিট বিদ্যুৎ থাকে। আবার যায়। রাতে দুই থেকে তিনবার বিদ্যুৎ যাবেই যাবে। এতে বাচ্চাদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। গরমে ঘুম হচ্ছে না। কী যে বাজে অবস্থা, বর্ণনা করা যাবে না।

দিনে–রাতে বিদ্যুৎ না থাকা নিয়ে একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন নগরের উত্তর আগ্রাবাদ, বড়পুল, উত্তর কাট্টলী, ফিরোজশাহ, অক্সিজেন, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, পাথরঘাটা ও জামালখান এলাকার বাসিন্দারা। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বিদ্যুৎ যাওয়ার সময়সূচি থাকলেও তা মানা হয় না। সূচির বাইরেও একাধিকবার লোডশেডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের।

দিনের অনেকটা সময় বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন পিডিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৭৫০ থেকে সাড়ে ৮০০ মেগাওয়াট। তাই তিন দিন ধরে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।