ঢাকা
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আন্দোলন দমানো যাবে না।’
বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠানো হবে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আজ শুক্রবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন দেশে একটা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে, যখন মানুষ তাদের অধিকারের জন্যে আন্দোলন করছে, কথা বলছে, যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে—চাল, ডাল, তেল। গতকালকে আবার চিনিরও দাম বাড়িয়েছে ১৪ টাকা।
জ্বালানি, বিদ্যুৎ–সংকট—সব মিলিয়ে দেশে একটা যখন চরম অব্যবস্থাপনা এবং চরম অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেই সময়ে তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) এই ধরনের হুমকি; এটা তিনি যদি মনে করে থাকেন গণতন্ত্রের আন্দোলনকে ব্যাহত করবে বা দমন করবে, তাহলে তিনি সঠিক জায়গায় বাস করছেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, জনগণের এই আন্দোলনকে কেউ দমাতে সক্ষম হবে না। মানুষ তার অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। এখানে ওই হুমকি দিয়ে কোনো কাজ হবে না।’
প্রধানমন্ত্রীর উক্তির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) এই উক্তি (বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দেব) থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে তারা কত প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং তারা যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা যে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এই ধরনের উক্তি করেছেন তিনি এবং এমন সময় করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাড়াবাড়ির কথা বলেছেন উনি (প্রধানমন্ত্রী)। বাড়াবাড়ি তো করছে রাষ্ট্র, বাড়াবাড়ি করছে আওয়ামী লীগের এই সরকার। তারাই আজকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে এবং তারা পুরোপুরিভাবে আজকে এই বাড়াবাড়ির মাধ্যমে তাদের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে আমাদের যেটা সাংবিধানিক অধিকার, সমাবেশের অধিকার, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যে প্রোগ্রামগুলো করছি, সেই প্রোগ্রামগুলোতে তারা বাধা সৃষ্টি করছে, গ্রেপ্তার করছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জনগণ এবার জেগে উঠেছে, জনগণ এই সমস্ত যে প্রতারণামূলক যে কাজ, তা কিছুতেই হতে দেবে না। যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে তারা এবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে—এটাতে তারা বদ্ধপরিকর। সত্যিকার অর্থেই তারা জনগণের সরকার ও জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করবে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে। সে জন্য প্রথম যে শর্ত আমরা দিয়েছি যে প্রধানমন্ত্রীকে তার সরকারসহ পদত্যাগ করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার জনগণকে ভয় পাচ্ছে, মানুষকে ভয় পাচ্ছে। যেভাবে মানুষ জেগে উঠছে, এখানে গণ–অভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে। আমি বিশ্বাস করি, এখানে গণ–অভ্যুত্থান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তাদেরকে (আওয়ামী লীগ) সরে যেতে হবে।’
রেমিট্যান্স পাচারের অভিযোগ
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে যে সংকটগুলো তৈরি হয়েছে, এটা সম্পূর্ণভাবে তাদের দুর্নীতির কারণে তৈরি হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে, পদে পদে তারা দুর্নীতি করছে। আজকেও পত্রিকায় বেরিয়েছে, গত ১০ বছরে কানাডায় যাঁরা মাইগ্রেন্ট করেছেন, তাঁদের মধ্যে এক–তৃতীয়াংশ হচ্ছেন বাংলাদেশি। এগুলোর প্রমাণ পাবেন যেমন আপনার রেমিট্যান্স কমে গেছে। রেমিট্যান্স কমছে কিন্তু আপনার শ্রমিকের সংখ্যা কিন্তু কমেনি, আবার বেড়েছে।’
মির্জা ফখরুল প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে রেমিট্যান্সটা কোথায় যাচ্ছে? আমি আগের দিনও বলেছি যে এই রেমিট্যান্স বিদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই কাজটা করছেন সরকারি দলের সঙ্গে যাঁরা জড়িত আছেন, তাঁরাই এটাকে হুন্ডি করে পাচার করছেন। যে কারণে দেশে আজকে যে সংকটটা সৃষ্টি হয়েছে, ইট ইজ ওয়ান অব দ্য রিজনস।’