প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ ২৮ অক্টোবরের (শনিবার) মহাসমাবেশের অনুমতি তখনো বিএনপি পায়নি। তবে অনুমতির অপেক্ষা না করে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে সমাবেশের পূর্বঘোষিত স্থান রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে বাড়ছিল তাঁদের উপস্থিতিও। সন্ধ্যায় খণ্ড খণ্ড মিছিল আর কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর স্লোগানে অনেকটাই সরগরম হয়ে ওঠে এ এলাকা।
এই নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের কেউ তিন থেকে চার দিন আগেই ঢাকায় চলে এসেছেন। কেউ এসেছেন পুলিশের তল্লাশিচৌকি ফাঁকি দিয়ে।
নয়াপল্টনে বিএনপি বড় কোনো কর্মসূচির ঘোষণা দিলে আগের দিন সকাল থেকেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় করতে দেখা যায়। কিন্তু গতকালের চিত্র ছিল ভিন্ন। এদিন দুপুর পর্যন্ত নয়াপল্টনের চিত্র ছিল অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক।
সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল জুমার নামাজের পর বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। এ সময় দলের পক্ষ থেকে তাঁদের চলে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে পরদিন (আজ) আসতে বলা হয়। বেলা তিনটা পর্যন্ত মাইকিং করে এমন অনুরোধ জানানো হলেও উপস্থিত নেতা-কর্মীরা সরেননি। পরে নেতা-কর্মীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
বেলা দুইটা থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিছিল-স্লোগান চলার সময় শতাধিক রিকশাচালককেও সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়। বিকেল চারটার দিকে তাঁরাও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন। সোয়া চারটার দিকে এই রিকশাচালকেরা রিকশা চালিয়ে মিছিল বের করেন। যাত্রী হিসেবে তাঁদের রিকশায় চড়ে বসেন নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পল্টন মডেল থানা পর্যন্ত দুপাশে ঘণ্টাখানেক রিকশা চালিয়ে সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন রিকশাচালকেরা। রাত সাড়ে আটটার দিকে আবারও রিকশাচালকেরা নয়াপল্টনে মিছিল বের করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
বিএনপির মহাসমাবেশকে সামনে রেখে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসানো হচ্ছে, এমন খবরে অনেক নেতা-কর্মী তিন-চার দিন আগে ঢাকায় চলে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ এসেছেন পুলিশের তল্লাশিচৌকি ফাঁকি দিয়ে।
সড়কপথে ঢাকায় আসা এমন নেতা-কর্মীদের কয়েকজন বলেন, তাঁদের কেউ কেউ এসেছেন গত মঙ্গলবার ভোররাতে। কেউ বুধবার ভোররাতে। ভোররাতকেই নিরাপদ সময় হিসেবে ধরে ঢাকায় এসেছেন তাঁরা। এতে তল্লাশিচৌকির মুখে তেমনটা পড়তে হয়নি। আর লঞ্চ ও ট্রেনে করে আসা কয়েকজন বলেন, রাজধানীর কমলাপুর ও সদরঘাটে তল্লাশিচৌকি না থাকায় তাঁরা বাধার মুখে পড়েননি।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে নয়াপল্টনে আসা একটি ইউনিয়ন শ্রমিক দলের নেতা মোহাম্মদ ফরিদ বলেন, তাঁরা তিনজন একসঙ্গে বাসে করে এসেছেন। যাত্রাবাড়ী এসে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে পড়েন। পুলিশ তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’ জবাবে তাঁরা বলেছেন, কাজে এসেছেন। তাঁদের মুঠোফোন তল্লাশি করতে চেয়েছিল পুলিশ। কিন্তু তাঁরা কেউ সঙ্গে মুঠোফোন আনেননি। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিএনপির কর্মীদের সরানোর চেষ্টা পুলিশের
বেলা দুইটার দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যখন রাস্তায় অবস্থান নিচ্ছিলেন, তখন থেকেই তাঁদের রাস্তা ছেড়ে দিতে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল পুলিশ। কিন্তু তাঁরা শোনেননি। বিকেল পাঁচটার দিকে নয়াপল্টনে পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হয়। ইতিমধ্যে নেতা-কর্মীদের সংখ্যা বেড়ে যায় অনেকটাই। সন্ধ্যায়ও বাঁশি বাজিয়ে ও হ্যান্ডমাইকে তাঁদের রাস্তা ছেড়ে দিতে পুলিশ অনুরোধ জানাচ্ছিল। তবে নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ের সামনে থেকে সরেননি।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে জলকামান ও রায়টকার আনা হলে কিছু নেতা-কর্মীকে চলে যেতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনিও নেতা-কর্মীদের ঘরে ফিরে আজ মহাসমাবেশে আসার অনুরোধ জানান। অবশ্য নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ের সামনেই ছিলেন।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা) হাজারের বেশি নেতা-কর্মী নয়াপল্টনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন সেখানে। তখনো মহাসমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়নি।