Site icon The Bangladesh Chronicle

ক্রিকেটের বিশ্ব মানচিত্রে ফেরার জয় শ্রীলঙ্কার

শিরোপা জয়ের পর ল্যাপ অব অনার শ্রীলঙ্কা নারী দলের
শিরোপা জয়ের পর ল্যাপ অব অনার শ্রীলঙ্কা নারী দলেরএশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল

‘বিশ্ব মানচিত্রে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটকে ফিরিয়ে আনলেন মেয়েরা।’

শ্রীলঙ্কার পত্রিকা দ্য আইল্যান্ডের শিরোনামের অর্থ করলে দাঁড়ায় এমন। সেটি যে বাড়িয়ে বলা হয়েছে, তা নয়। মাঝে ২০২২ সালের এশিয়া কাপ বাদ দিলে ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার সর্বশেষ বড় কোনো ট্রফি জয় সেই ২০১৪ সালে—বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে যে এরপর বড় একটা পালাবদল ঘটে গেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তো প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে তাদের পুরুষ দল। এশিয়ার মঞ্চেও এখন ঠিক সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায়ই গড়তে পারে না দলটি।

মাঝে বেশ কয়েকটি বড় টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলেও শিরোপা না জেতা পুরুষ দল সফল হয়েছিল ২০১৪ সালে গিয়ে। মেয়েদের ক্ষেত্রে সে অপেক্ষা আরও দীর্ঘ। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এর আগে আটবার হয়েছে মেয়েদের এশিয়া কাপ। পাঁচটিতেই খেলেছিল শ্রীলঙ্কা। পাঁচবারই তারা হেরেছিল ভারতের কাছে।

নারী এশিয়া কাপে ভারতের দাপটও এমনই। আগের আটবারের সাতবারের চ্যাম্পিয়ন তারা, একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ২০১৮ সালে বাংলাদেশের শিরোপা জেতা। ভারতকে টলানো একরকম অসম্ভবের পর্যায়েই পড়ে এশিয়া কাপে! এবারও ফাইনালে পরিষ্কার ফেবারিট ছিল হারমানপ্রীত কৌরের দলই।

জয়সূচক ছক্কার পর কাভিশা দিলহারি
জয়সূচক ছক্কার পর কাভিশা দিলহারিএশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল

ডাম্বুলায় ফিল্ডিংয়ে খারাপ একটি দিন কাটানোর পর ১৬৬ রানের লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কাকে দারুণভাবে লড়াইয়ে রেখেছিলেন অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তু। তবে ১২তম ওভারে তিনি আউট হয়ে যাওয়ার পরই যেন শেষ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার আশার অনেকটুকুই।

সেটিও অবশ্য স্বাভাবিক। আতাপাত্তু আউট হওয়ার একটু পর টেলিভিশনে ভেসে ওঠা গ্রাফিকসে দেখা গেল, এবারের এশিয়া কাপে অধিনায়কের রান ৩০৪ আর শ্রীলঙ্কার বাকি সব ব্যাটারের মিলিত রান ৩০৭! আউট হয়ে ফিরে টেনশনে ডাগআউটে বসতেও পারছিলেন না আতাপাত্তু। ১৫ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। এবারও শিরোপা হাতছানি দিয়ে যে দূরে সরে যাচ্ছিল তখন তাঁর কাছ থেকে!

মেয়েদের ক্রিকেটের কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে এত বেশি রান তাড়া করে এর আগে জেতেনি কোনো দল, সেখানে আতাপাত্তু মাঝপথেই ফিরে গেলে কাজটি তো বেশ কঠিনই। হর্ষিতা সামারাবিক্রমা অবশ্য ভিন্ন কিছুই ভেবে রেখেছিলেন। ৪৫ রানে তাঁর সহজ ক্যাচ ফেললেন হারমানপ্রীত কৌর, সামারাবিক্রমা এরপর থামেননি আর। কাভিশা দিলহারির সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতেই নিশ্চিত করেছেন মেয়েদের ক্রিকেটের শ্রীলঙ্কার প্রথম বড় কোনো শিরোপা।

অবশেষে একটি শিরোপার স্বাদ পেলেন চামারি আতাপাত্তুশ্রীলঙ্কা ক্রিকেট

১৬ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার রাঙ্গিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়াম কাল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। উপস্থিত দর্শকেরা পেয়েছেন মনে রাখার মতো একটি দিনই। ম্যাচ শেষে আলাদা করে তাদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন আতাপাত্তু, ‘এমন দর্শক কখনো দেখিনি, ফলে খেলা দেখতে আসা শ্রীলঙ্কান মানুষদের বিশেষ ধন্যবাদ।’

বিজয়ী দলের জন্য ১ লাখ মার্কিন ডলার আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। এমন জয়ের পর ম্যাচ ফি, স্পনসরও বাড়ার কথা। তবে সেসবের চেয়েও বড় কথা, এমন জয় অনুপ্রেরণা জোগাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। আতাপাত্তুও বলেছেন সেটিই, ‘এ জয় শুধু এ দলের জন্য নয় বরং পুরো শ্রীলঙ্কার। কারণ, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাতে হবে। আমাকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিতে হতো, কারণ সেটি আমার দেশের জন্য আমার দায়িত্ব।’

এমনিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আতাপাত্তুর অবসরের গুঞ্জন ভাসছে। অবশ্য গতকাল তিনি বলেছেন, আগামী বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যেতে চান। তার আগে আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সামনের অক্টোবরে যেটি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে। আপাতত আতাপাত্তুর চোখ সেদিকে, ‘আমাদের পরের লক্ষ্য বিশ্বকাপ। কিন্তু আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই।’

আতাপাত্তুর শ্রীলঙ্কা তো এরই মধ্যে এগিয়েছে অনেকটাই।

prothom alo

Exit mobile version