সুচিত্রা সেন একটা বয়সের পর আর জনসমক্ষে আসেননি। মহানায়িকা হয়তো চাননি ভক্তদের বার্ধক্যের চেহারা দেখাতে। তেমনি বিচক্ষণ ক্রীড়াবিদদেরও দেখা যায় ফর্ম থাকতেই বিদায় নিতে। ভক্তদের হৃদয়ে চিরসজীব থাকতেই এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তারা। বিশ্ব ক্রিকেটে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা তেমন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দুই ক্রীড়াবিদ। শনিবার বিশ্বকাপ জিতেই কোহলি ঘোষণা দেন– ‘নতুনদের জন্য আমাকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।’ পূর্ণতা নিয়ে আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে অবসরের ঘোষণা দেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা ও রবীন্দ্র জাদেজা। অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার তো আগেই বলে রেখেছেন, এ বিশ্বকাপই তাঁর শেষ। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ফর্মে থেকে খেলোয়াড়দের অবসরের হাজারটা ঘটনা থাকলেও বাংলাদেশে একটিও নেই। যাঁকে নিয়ে আশা করা হয়েছিল সেই সাকিব আল হাসান তো আরও একটি বিশ্বকাপ খেলার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। অবসর নেওয়ার ব্যাপারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও নীরব। ‘শেষ’ বলতে বড্ড অনীহা তাদের।
পরিস্থিতির চাপে কেউ কেউ আন্তর্জাতিক টি২০ ছাড়লেও সেখানে আবেগ ছিল না। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কায় শেষ টি২০ খেলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও বিসিবি কর্মকর্তাদের চাপের মুখে সেদিন অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল তাঁকে। টি২০ ছাড়লেও টেস্ট, ওয়ানডে থেকে মাশরাফির আনুষ্ঠানিক বিদায়ের কথা শোনা যায়নি। সে হিসেবে সাবেক এ অধিনায়ক জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমের বিদায়টাও সুখকর নয়। তারাও যে পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে আন্তর্জাতিক টি২০ ছেড়েছেন, তা বোঝা যায় ফেসবুকে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার ঘটনায়। একই পরিণতি বরণ করতে হতে পারে মাহমুদউল্লাহ-সাকিবকেও। কাল বিসিবির বোর্ড সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ইঙ্গিত রয়েছে।
সাকিব-মাহমুদউল্লাহ অবসর নেন বা নাই নেন, জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেলের সুনজরে নেই বর্ষীয়ান এ দুই ক্রিকেটার। বিসিবির নির্বাচক প্যানেল নতুনদের নিয়ে এগোতে চায়। ২০২৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপ মাথায় রেখে দল গোছানোর পরিকল্পনা করছেন তারা। সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও মনে করেন, দেশের স্বার্থে কিছু সিদ্ধান্ত বর্তমান নির্বাচক প্যানেলকেই নিতে হবে। ‘অবসরের ব্যাপারে দুই সিনিয়র ক্রিকেটার কিছুই বলেনি। কথা হচ্ছে, টি২০ দলে তাদের প্রয়োজন আছে কিনা, নির্বাচক প্যানেলকেই তা ঠিক করতে হবে। ভবিষ্যৎ দলের কথা ভেবে থাকলে নির্বাচকরা তাদের পরিকল্পনা দুই খেলোয়াড়কে জানিয়ে দিলে ভালো করবেন।’
এ দেশের ক্রিকেটে মাঠ থেকে খেলোয়াড়দের বিদায় নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। কারণ বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই ক্যারিয়ার লম্বা করতে চান। মাহমুদউল্লাহ টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অবসরে গেছেন। ওয়ানডেতে ফিরে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে খেলেছেন। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাকিব-মাহমুদউল্লাহর অবসর নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্যকার বীরেন্দ্র শেবাগ টি২০ বিশ্বকাপ চলাকালেই সাকিবকে অবসরের পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের ক্রিকেট পরামর্শক নাজমুল আবেদীন ফাহিমও মনে করেন, সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা অবসর নিয়ে ভাবতে পারেন। ‘এই বিশ্বকাপে দুই সিনিয়রের কাছে অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। তারা সে দাবি মেটাতে পারেনি। তারা যাতে দলের বোঝা হয়ে না ওঠে; আমি মনে করি ফর্মে থাকতেই ক্রিকেটারদের অবসর নেওয়া উচিত। এখন নির্বাচকরা ভেবে দেখবেন দলে দুই সিনিয়রের প্রয়োজন কতটা। যদি প্রয়োজন না থাকে; ভবিষ্যতের চিন্তা করে দল গোছায়, তাহলে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান হতে পারে। আমি অন্তত সেটাই আশা করব।’ জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার চেয়ে বিদায় বলে দেওয়াকে সমীচীন মনে করেন সাবেক ক্রিকেটাররা।
samakal