Site icon The Bangladesh Chronicle

কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে না ব্যক্তি বিচারের মুখোমুখি হবে

কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে না  ব্যক্তি বিচারের মুখোমুখি হবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল-মাসুদ। তিনি বলেন, ১৭টি শাখা থেকে ৪৫টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এখানে এমন সব ঘটনা ঘটেছে, ৪০ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শেষে এসে নিজেকে শিশু মনে হচ্ছে। ফরেনসিক অডিট শেষ হলে ঋণ জালিয়াতি, নিয়োগ-পদোন্নতিতে অনিয়মসহ সব তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এস আলম তো আর চুনোপুঁটি নয়, বড় রুই। তাকে ধরতে আটঘাট বেঁধে নামতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য চারটি অডিট ফার্ম দিয়ে ফরেনসিক অডিট করানো হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য প্রত্যেক আমানতকারীর স্বার্থ দেখা।  সব ব্যাংক রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। তাই বলে আগের মতো ঢালাওভাবে টাকা দেওয়া হবে না। দায়বদ্ধ করে এরপর সহায়তা দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিশ্চিত করতে চায়, ঋণের অপব্যবহার হবে না। তবে প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হতে দেওয়া হবে না। প্রতিষ্ঠান মেরে ফেলা খুব সহজ, গড়া অনেক কঠিন। আবার আগে চাকরি পেয়েছে বলে একজন ব্যক্তি খারাপ, তাও  ঠিক নয়। ব্যক্তির বিচার করতে হবে তার যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততা দিয়ে। তা না হলে তো রাষ্ট্রই চলবে না। তাই বলে অযোগ্য ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানে রাখা যাবে না।

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরও বলেন, এস আলম ও নাবিল গ্রুপ ব্যাংকের ৫০ শতাংশ ঋণ নিয়ে গেছে। আবার এলসির বিপরীতে তারা দায় শোধ না করায় ব্যাংক থেকে পরিশোধ করা হয়েছে। এতে করে আমানতের চেয়ে ঋণ ২০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। এখন এস আলমের  নামে-বেনামে থাকা শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো আদায় হবে। শেয়ার ইস্যু করে আরও বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করা হবে। ঋণ আদায়ের জন্য এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রুপ শুধু এস আলম চালায় না। প্রতিষ্ঠানে অন্যরা আছেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। শতভাগ মার্জিন নিয়ে তাদের এলসিও খোলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকে সৌদি আরবের আল-রাজি গ্রুপের ২৯ শতাংশ শেয়ার ছিল। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৬ থেকে ৭ শতাংশের মতো। তারা যাতে আবার শেয়ার কেনে, তার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে। পাশাপাশি আইএফসিকেও আনার চেষ্টা চলছে। তবে নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক যাবে না। চেয়ারম্যান বলেন, ইসলামী ব্যাংকের ইতিবাচক বিষয় হলো, এক ছাতার নিচে এত সৎ ও যোগ্য আর কোথাও নেই। এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকার সময় সেখানেও নানাভাবে থাবা বসানো হয়েছে। আবার এস আলম  শুধু টাকা নিয়ে গেছে তা নয়, বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে করেসপন্ডেন্ট সম্পর্ক একেবারে নাজুক করে দিয়ে গেছে।

গভর্নর বলেন, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর ইতোমধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে। বেড়ে তিন-চারগুণও হতে পারে। ভালো ব্যবসায়ী গ্রুপ যারা আগ্রহ দেখাবে, তারা এখানে আসতে পারে। তবে পরিচালনায় এমন কোনো বিনিয়োগকারী ঢুকতে পারবে না, যাদের তহবিলের উৎস নিয়ে প্রশ্ন আছে কিংবা যাদের আগের  কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ঋণের নামে ৮০ হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়ার বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলো কখনও সব খারাপ সম্পদ ভালো সম্পদে রূপান্তর করতে পারে না। ৮০ হাজার কোটি টাকার সব হয়তো পাওয়া যাবে না। একটি অংশ পাওয়া যাবে। আর গ্রাহকের আস্থা বাড়ানোর মাধ্যমে আমানত বাড়ানো, নতুন বিনিয়োগ বাড়ানো এবং খেলাপি ঋণ ধীরে ধীরে নামিয়ে আনার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এসব হয়তো এক-দুই বছরে হবে না।

samakal

Exit mobile version