বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ভয়াবহ সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য কার্যত সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে আছে সবাই। অনেকেই আশা করছেন এর মাধ্যমেই সহিংসতা ক্রমশ ম্রিয়মাণ হয়ে আসবে।
রোববার সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্টে কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ইঙ্গিত দিয়ে বলা হচ্ছে আপিল বিভাগের কাছে তারা শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী কোটা সংস্কারের পক্ষেই তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন।
যদিও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের তিন জন আইনমন্ত্রীসহ তিন মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবি জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু সেই বৈঠক নিয়ে নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধের কথাও জানা যাচ্ছে। আগে শুধু কোটা সংস্কারে বিষয়ে তাদের দাবি থাকলেও তার সঙ্গে এখন আরো বেশ কিছু দাবি যোগ হয়েছে।
সে কারণে আদালত শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে রায় দিলেও তাতে পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হবে বা সহিংসতার আশঙ্কা কাটবে কি না তা এখনো অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম এম আমিন উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তারা হাইকোর্টের রায় বাতিলের জন্য আবেদন করবেন।
প্রসঙ্গত, গত পাঁচই জুন হাইকোর্ট কোটার বিষয়ে সরকারের ২০১৮সালের জারি করা পরিপত্র বাতিল করে দিয়েছিলো। সে বছর তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার চাকরিতে কোট বাতিল করে ওই পরিপত্র জারি করেছিলো।
পরে এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষ থেকে রিট করা হলে হাইকোর্ট ওই পরিপত্র বাতিল করলে আবারো ছাত্র আন্দোলনের সূচনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে সেটি সারা দেশে ছড়িয়ে যায়।
এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে সারাদেশে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও আছে।
সহিংসতার সময়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বহু ভবন ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় আক্রমণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করেছেন, এখন আর শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে জড়িত নেই, একটা গোষ্ঠী রাজনৈতিক স্বার্থে আন্দোলনকে ব্যবহার করছে।
ব্যাপক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করেছে সরকার, যা রবিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত বলবৎ থাকার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যেই শুনানির নির্ধারিত তারিখ থেকে এগিয়ে এনে রবিবার সকাল দশটায় আপিল বিভাগে কোটার বিষয়টি নিয়ে শুনানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদালত।
এর আগে রবিবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের পর তীব্র আকার ধারণ করা আন্দোলনের রাশ টানতে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা একাধিকবার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আপিল বিভাগে শিক্ষার্থীদের দাবি পক্ষেই সরকার পক্ষ অবস্থান নেবে।
বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়াভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শিক্ষার্থীদের হতাশ হতে হবে না বলেই তিনি মনে করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সাতই অগাস্ট যে শুনানির কথা ছিলো, প্রধানমন্ত্রী সেটি এগিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেছেন।
“আমরা বিশদভাবে পর্যালোচনা করেছি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দাবিতে সরকার রাজি হয়েছে। আমার মনে হয় তাদের আর আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। তারা যখনই আলোচনায় বসতে চায়, আমরা বসতে রাজি,” বলছিলেন মি. হক।
ওদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন জনজীবন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রবিবার সর্বোচ্চ আদালতের নিদের্শনা বিষয়টির মীমাংসা হবে।
সরকারপক্ষ আশা করছে আদালতে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হলে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। যদিও এ দাবি পূরণ হলেও বাকী দাবিগুলোর বিষয়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থান কেমন হয় তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তাও আছে।
ওদিকে বিরোধী দল বিএনপি চাইছে যে এ আন্দোলন অব্যাহত থাকুক। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
Source: BBC Bangla