চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কঠোর হাতে দমন করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সূত্র বলছে, আন্দোলনে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে আদালতের রায়ের ওপরেই ছেড়ে দিচ্ছে। সরকার কেবল আদালতের রায় বাস্তবায়ন করবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর সংক্ষিপ্ত করে গত বুধবার রাতে দেশে ফেরেন। এর পর দিন বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ চড়াও হয়। আবার আজ শনিবার (১৩ জুলাই) আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ।
অপরদিকে শনিবার কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে কথা বলেছেন সরকারের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ময়মনসিংহে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পৃথিবীর সব জায়গাতেই কোটা রয়েছে। যেমন আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য কিছু কোটা রয়েছে এবং সংবিধানেও সেটি বলা আছে। এই নৃগোষ্ঠীদের কোটা যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে এরা কোনো দিন মূল স্রোতে একত্রিত হতে পারবে না। রাস্তাঘাট বন্ধ না করে তারা কোর্টে এসে তাদের কথা বলুক। রাস্তাঘাট বন্ধ করলে লাভ কী হবে আমি জানি না। দুর্ভোগ বাড়বে জনগণের। আমি মনে করি আপনারা প্রধান বিচারপতির পরামর্শ মতো আদালতে এসে আপনাদের কথা বলুন।
বগুড়ায় এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র হাছান মাহমুদও কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি এই আন্দোলনের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন রয়েছে অভিযোগ তুলে বলেছেন, বিএনপির সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। তাই এখন তারা কোটার আন্দোলনকারীদের সমর্থন দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কোটার বিষয়টি উচ্চ আদালতে আছে, এ বিষয়ে আদালত রায় দেবেন, সরকারের কিছুই করার নেই। তবু বুঝেও তারা (বিএনপি) না বোঝার মতো ভান করছে।’
তবে কোটা সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন খোদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেলক হক। একটি অনলাইন গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, বিদ্যমান কোটার সংস্কার তিনিও চান। তবে এজন্য শিক্ষার্থীদের অধৈর্য হলে চলবে না। সরকারকে সময় দিতে হবে। যেহেতু বিষয়টি একটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, তাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এসময় তিনি দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকে ভুয়া সনদধারী রয়েছেন বলেও স্বীকার করেন।
এদিকে কোটা আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে বরাবরই শক্ত অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান হাবিবুর রহমান থেকে শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুন অর রশীদও কোটা আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ার করেন।
আজ শনিবার ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, কেউ যদি আদালতের আদেশ না মানে, পুলিশের কথা না মানে, আন্দোলনের নামে জানমালের ক্ষতি করে, সড়ক অবরোধ করে তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে যৌক্তিক কাজ সেটাই করা হবে।
কোটা শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক দেশেই প্রচলন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোটার বিরোধিতা করে কিছু লোক, কিছু শিক্ষার্থী রাস্তায় আন্দোলন করছে। ইতোমধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সুপ্রিম কোর্ট সবার ভরসাস্থল। আদালতের নির্দেশনা সবার মেনে চলা উচিত। কিন্তু কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাসে না গিয়ে বিভিন্ন সড়কে বসে সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। অনেক জায়গায় গাড়িতে তারা হাত দিচ্ছে এবং একটি মামলাও হয়েছে।
এসব বিষয় পর্যালোচনা করে অনেকেই বলছেন বলছেন, সরকার আন্দোলনের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে।
এদিকে চীন সফরসহ সমসাময়িক ইস্যুতে রবিবার সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই সম্মেলন থেকে শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা ও শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আসতে পারে। তার ওপর এ দুটি আন্দোলনেরই অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Bangla Outlook