কেন্দ্রীয় ব্যাংক
সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েকটি ব্যাংকের কারণে পুরো ব্যাংক খাতের এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। সাধারণত বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা বাড়লে তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংক খাত। এখন তেমন বিনিয়োগ চাহিদা না থাকায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের আশপাশেই রয়েছে। এরপরও ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট সৃষ্টির প্রধান কারণ বিভিন্ন জালিয়াতি ও আস্থাহীনতা। আস্থা না থাকায় অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিজের কাছে রেখে নিশ্চিন্ত থাকছেন কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহক। অনেকে ব্যাংকে টাকা না রেখে ডলার কিনে ঘরে রাখছেন। মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতাও কমেছে। আবার দীর্ঘদিন চলমান ডলার সংকট মেটাতে গিয়ে রিজার্ভ থেকে বিক্রি অব্যাহত আছে। এই অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৫৯০ কোটি ডলার বিক্রির বিপরীতে উঠে এসেছে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংকের একটি চলতি হিসাব রয়েছে। এ হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকগুলো বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) সংরক্ষণ এবং এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারিংসহ বিভিন্ন পরিশোধ নিষ্পত্তি করে। বর্তমানে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক সিআরআর ও বিধিবদ্ধ তারল্য (এসএলআর) সংরক্ষণ তো দূরে থাক, বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টই খালি করে ফেলেছে। উল্টো গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব ব্যাংকের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা পাওনা দাঁড়িয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সাধারণভাবে কোনো ব্যাংক এ অবস্থায় যাওয়ার পর ওই ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারিং বন্ধ থাকার কথা। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সুবিধায় চেক ক্লিয়ারিং অব্যাহত আছে। নতুন ঋণও দিচ্ছে এসব ব্যাংক। নানা কারণে এখন এ রকম হলেও একটি সময় শুধু ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের কাছে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকত। কেউ সংকটে পড়লে এদের থেকে ধার নিত।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবার আন্তঃব্যাংক কলমানিসহ বিভিন্ন মেয়াদে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ৪ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ধার নিয়েছে। এর মধ্যে এক দিন মেয়াদি কলমানিতে গড়ে ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ সুদে ধারের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। বাকি ধার নিয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে। সব মিলিয়ে ধারের স্থিতি ছিল ১৩ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে ট্রেজারি বিল, বন্ডের মতো বিভিন্ন উপকরণ বন্ধক রাখতে হয়। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো যেহেতু সুদভিত্তিক বিল ও বন্ড কিনতে পারে না, সে কারণে এসব ব্যাংকের হাতে ধার নেওয়ার মতো উপকরণ থাকে কম। সংকটে পড়া পাঁচ ব্যাংকের জন্য যেটুকু ছিল, তা বেশ আগেই শেষ হয়েছে। ফলে এখন বিশেষ উপায় ছাড়া আর ধার পাচ্ছে না।