Site icon The Bangladesh Chronicle

কেউ যাতে জিয়া পরিবার ও বিএনপির নাম ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে

logo

মুদ্রিত সংস্করণ
কিশোরগঞ্জে বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান : নয়া দিগন্ত

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

দলের কেউ যাতে জিয়া পরিবার ও বিএনপির নাম ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার না করেন এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘শহীদ জিয়া এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রত্যেক সৈনিককেই অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে, কেউ যেন আমাদের নাম ব্যবহার করে, বিএনপির নাম ব্যবহার করে তাদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে না পারে। কেউ যেন আমাদের নাম ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে আমাদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, এই ব্যাপারে আপনাদের প্রত্যেককে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে, আপনাদের প্রত্যেককে কর্তব্য পালন করতে হবে, যাতে করে দলের সম্পর্কে জনগণের মাঝে কোনো বিভ্রান্তি কেউ ছড়াতে না পারে।’

গতকাল বিকেলে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে ৯ বছর পর কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতনের পর এখন দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছে। এই প্রস্তাবগুলোর প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ প্রস্তাবনা বিএনপি আরো আড়াই বছর আগে মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন বিষয়ে মতামত উপস্থাপন করেছে, বিএনপি তার মতামত দিয়েছে, কোনো কোনো বিষয় হয়তো কারো সাথে আমাদের মতপার্থক্য আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার এবং বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের প্রশ্নে বিএনপির কারো সাথে কোনো আপত্তি নেই, দ্বিমত নেই।’

বিএনপি ভবিষ্যতে ভোটে জিতে সরকার গঠন করলেও অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে, ৫ আগস্ট এর কয়েক দিন পর আমি বলেছিলাম যে, স্বৈরাচার তো বিদায় হয়ে গিয়েছে, পালিয়ে গিয়েছে, কিন্তু অদৃশ্য শক্তি ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এই কথাটি আমি বিভিন্ন সময়ে বলেছি, আজকে থেকে প্রায় এক বছর আগে বলেছিলাম। আজ আমার এক বছর আগের কথা কিন্তু ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আজকে যদি দেশের স্বার্থের কথা আমরা বিবেচনা করি, দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার যদি প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, আমাদের আর বসে থাকার সময় নেই।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমি জানি বিশাল দল আমাদের, এত সংখ্যক নেতাকর্মী আমাদের। বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিভিন্ন মতামত থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলের যখন একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে যাবে, আমাদের কাজ হচ্ছে দলের সিদ্ধান্তের পিছে এসে দাঁড়ানো। যারা আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করি, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হবে সেই সিদ্ধান্তকে যেকোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করা। আমরা যদি আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রত্যেকটি নেতাকর্মী ইস্পাতের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি, তবে ইনশা আল্লাহ আমরা একটি সফল জনরায় আমাদের পক্ষে আনতে সক্ষম হবো।’

এ সম্মেলনের উদ্বোধন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে একটি বিশেষ মহল থেকে। এই মহলটি চায় বিএনপি যেন রাষ্ট্র পরিচালনায় না আসতে পারে।’ তিনি বলেন ‘আজকে যে সুযোগ আসছে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া, সে দায়িত্ব পালন করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে আজ অনেকেই বলে, রাজনৈতিক দলগুলো বলে, যাদের কালকে জন্ম হয়েছে তারাও বলে, যারা ১৯৭১ সালে ভিন্ন অবস্থানে ছিল, তারাও বলে। তাদের জানা উচিত, বিএনপি হচ্ছে সেই দল, যেই দল ফিনিক্স পাখির মতো। বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য, বিএনপিকে ভেঙে ফেলবার জন্য বহুবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি কেউ ভাঙতে পারেননি। যারা অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে, গুম করেছে, হত্যা করেছে, তারাই শেষ হয়ে গেছে, তারাই পালিয়ে গেছে।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, কিশোরগঞ্জকে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। ডিসি, এসপি, ওসি, এমন কোনো কর্মকর্তা ছিল না, যাদেরকে মাথায় করে কিশোরগঞ্জে আনা হয়নি, যাতে এখানে বিরোধীরা কোনো আন্দোলন করতে না পারে। তার পরেও আন্দোলন হয়েছে। এখন সময় হয়েছে আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলার। কিশোরগঞ্জের সব ক’টি আসন তারেক রহমানের হাতে আমরা উপহার দিতে চাই। এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য দলে ঐক্য থাকতে হবে।

সম্মেলনের প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। তিনি বলেন, লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশে যে নির্বাচনী ব্যবস্থা এনেছিলাম, সেই টোটাল নির্বাচনী ব্যবস্থাকে শেখ হাসিনা ধ্বংস করে দিয়েছেন। এই জন্য হলেও উনার কমপক্ষে এক হাজার বছরের সাজা হওয়া উচিত।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের পরিচালনায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কোষাধ্যক্ষ এম রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো: ওয়ারেস আলী মামুন ও আবু ওয়াহাব আকন্দ, সদস্য লায়লা বেগম ও শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল। জেলার নেতাদের মধ্যে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু, জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, রুহুল হোসাইন, অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস, অ্যাডভোকেট মো: শরীফুল ইসলাম, আজিজুল ইসলাম দুলাল, ইসমাইল হোসেন মধু, জেলা গণ-অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোখলেছুর রহমান উজ্জ্বল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক জেলা আহ্বায়ক মো: ইকরাম হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এই সম্মেলনে জেলার ১৩টি উপজেলা কমিটি ও আটটি পৌর কমিটির ২ হাজার ৯০ জন কাউন্সিলরের ভোটে নির্বাচিত হবে নতুন নেতৃত্ব। শীর্ষে দুই পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

Exit mobile version