Site icon The Bangladesh Chronicle

কার্ডে ডলার খরচ পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

 

বিদেশে যাওয়ার পর ক্রেডিট কার্ডে ডলার খরচ বাড়ছে বাংলাদেশিদের। গত বছরের ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকরা বিদেশে গিয়ে ৯২৯ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ২৪৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সে অনুযায়ী পাঁচ বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২৭৬ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সাল থেকে কার্ডের লেনদেনের তথ্য রয়েছে। তা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া যায়।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে ডলার সংকট শুরু হলে নগদ ডলারের হাহাকার শুরু হয়। তখন মানুষ বিদেশ ভ্রমণের জন্য ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়। ফলে ওই সময় থেকেই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে ডলার খরচ বাড়তে শুরু করে। এছাড়া এখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতির দিকে, তারও একটি প্রভাব রয়েছে।

জানা যায়, দেশে ২০২২ সালের মে মাস থেকে ডলার সংকট শুরু হয়। এর পর থেকে বিদেশ ভ্রমণে আগের তুলনায় ক্রেডিট কার্ডে ডলার খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিলের আগ পর্যন্ত প্রতিমাসে ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে লেনদেন হয়েছিল ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে। তবে মে মাসে প্রথমবারের মতো লেনদেন হয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এরপর ধারাবাহিকভাবে তা বাড়তে থাকে। আগস্টে ৫২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। অক্টোবরে গিয়ে তা ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে তা ৭০০ কোটি টাকা ছাড়ায়। একই বছরের অক্টোবরে তা আরও বেড়ে ৮০০ কোটি টাকা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক শেয়ার বিজকে বলেন, দেশে ডলারের ক্রাইসিস শুরু হলে নগদ ডলারের সংকট দেখা দেয়। তাই ওই সময় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণে বৈদেশিক মুদ্রা খরচে উৎসাহিত করা হয়। ফলে ক্রেডিট কার্ডে ডলার খরচ বেড়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে দেশে ও বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে ৪৫ হাজার ৮০ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা নভেম্বরের তুলনায় ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। নভেম্বরে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা।

ডিসেম্বরে কার্ডের মাধ্যমে দেশে ৪৪ হাজার ৪২২ কোটি টাকার লেনদেন হয়। বিদেশে গিয়ে গ্রাহক লেনদেন করে ৯২৯ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। নভেম্বরে ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে গিয়ে ডলার খরচ হয় ৭৯৮ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে ২০২৩ সালে বিদেশে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে মোট খরচ হয় আট হাজার ১৮৩ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন শেয়ার বিজকে বলেন, কভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর বৈশ্বিকভাবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো হচ্ছে। আমাদের দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। মানুষের আয় বাড়ছে। সবমিলিয়ে মানুষের বিদেশ ভ্রমণ আগের চেয়ে বাড়ছে। সবাই এখন বিদেশ ভ্রমণে কার্ডের মাধ্যমে ডলার নিয়ে যাচ্ছে। তাই ধারাবাহিকভাবে কার্ডে ডলার খরচ বাড়ছে।

এদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে। ওই মাসে এ সেবা ব্যবহার করে মোট লেনদেন হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ফলে এ মাসে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ১৭ কোটি টাকার বেশি। এর আগে ঈদুল ফিতরের মাস এপ্রিলে দৈনিক লেনদেন চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। আর ঈদুল আজহার মাস জুনে তা চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠানোসহ বিভিন্ন সুবিধার কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ব্যাংকিং। ফলে প্রতিদিনই এ সেবায় হাজার হাজার গ্রাহক যুক্ত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে।

বাংলাদেশে ২০১১ সালের মার্চে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার (এমএফএস) যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত নভেম্বরে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকসংখ্যা প্রথমবারের মতো ২২ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ওই মাসে গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়ায় ২২ কোটি ৪৬ হাজারে। সর্বশেষ ডিসেম্বরে সেটি বেড়ে হয়েছে ২২ কোটি চার লাখ ৫৭ হাজার। এই হিসাবে ডিসেম্বরে নতুন গ্রাহক বেড়েছে প্রায় চার লাখ ১১ হাজার। যদিও মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহকদের অর্ধেকেরই বেশি নিষ্ক্রিয়। গত ডিসেম্বর শেষে নিষ্ক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ আট হাজারে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোনো ধরনের লেনদেন না হলে তা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেই তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোনো অনিয়ম না পাওয়া গেলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক।

sharebiz

Exit mobile version