Site icon The Bangladesh Chronicle

কাজ ফেলে শত শত ঠিকাদার লাপাত্তা, বন্ধ প্রকল্প চালু হয়নি

logo

প্রকাশ : বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ২০:৪৪

সারা দেশে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ফেলে পালিয়ে গেছেন ঠিকাদাররা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রায় সব ঠিকাদারই লাপাত্তা। প্রকল্পের কাজ পড়ে আছে। সরকারের অর্থের অপচয় হচ্ছে, বাড়ছে জনদুর্ভোগ। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক বছর পরও অন্তর্বর্তী সরকার প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করতে পারেনি।

পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ এবং রেলপথ- এই চারটি মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৬০টি প্রকল্পের ঠিকাদার ৫ আগস্টের পর গা ঢাকা দিয়েছেন। পলাতক শতাধিক ঠিকাদার তুলে নিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। অনেকে পাওনার চেয়েও বেশি অর্থ নিয়ে গেছেন। এদের সাহায্য করেছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা।

বন্ধ প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাজও। এটি সম্পন্ন হলে রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও বগুড়ায় কৃষিকাজে সেচসুবিধা সম্প্রসারণ করা যাবে। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া চার লেন সড়ক প্রকল্পের কাজও এক বছর ধরে বন্ধ। কারণ, ভারতীয় ঠিকাদার দেশে ফিরে গেছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে পত্রিকার খবরে বলা হয়, অনেক ঠিকাদারের মধ্যে কতজন কাজ ফেলে রেখেছেন; সে তথ্য তাদের কাছে নেই। সুতরাং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ যখন বলেন, প্রতিটি প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা তারা প্রতিপালন করছেন, তখন এর মধ্যে একটি ফাঁক দৃশ্যমান হয়। কতগুলো প্রকল্পের কাজ বন্ধ সেটিই যিনি জানেন না, তিনি প্রতিটি প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করবেন- এমন ধরে নেয়ার সুযোগ নেই।

দেশবাসী জানেন, স্বৈরাচারী সরকার সর্বশক্তি নিয়ে জনগণের সম্পদ লুটপাটে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। উন্নয়ন প্রকল্প ছিল লুটপাটের অন্যতম খাত। দলীয় নেতাকর্মীদের ঠিকাদারির কাজ দিয়ে লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া হয়। তারা সেটিই করেছে। তাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। জনগণের লাভ-ক্ষতির হিসাব নিয়ে তাদের ভাবনা ছিল না। যেমন- হাসিনা সরকারের আমলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকল্পের কাজ পেয়েছে হাতেগোনা চার-পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার, রেলপথ, আইসিটিসহ অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে ঠিকাদারি পেয়েছেন নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের অনেকে সরকারদলীয় রাজনীতিক। তারা কাজ পেয়ে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। অদক্ষ ও অযোগ্য অপেশাদার ব্যক্তিরা সরকারি আনুকূল্যে ঠিকাদার বনে যান। এ জন্যই গণমাধ্যমে গত দেড় দশকে এমন প্রচুর শিরোনাম দেখা গেছে যে- কাজ না করেই উধাও ঠিকাদার; বেশি বিল তুলে নিয়ে ঠিকাদার লাপাত্তা; বিল তুলে পলাতক ঠিকাদার, স্কুলে বসে মাদকের আড্ডা।

এসব অনৈতিক কাজের দায়ে শাস্তি দেয়া দূরের কথা; বরং সরকারি কর্মকর্তারা পাওনার চেয়েও বেশি টাকা তুলে দিয়েছেন এদের হাতে। এখন এসব অসাধু ঠিকাদার ও কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

দেশে এখন দেশী-বিদেশী অর্থায়নে লাখ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। এগুলোর বাস্তবায়ন যথাসময়ে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু কয়টি প্রকল্প চালু অথবা ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় কয়টি বন্ধ- সেই হিসাব এখনো করে উঠতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এদের কাছে দেশবাসীর ভরসার জায়গা সীমিতই।

Exit mobile version