Site icon The Bangladesh Chronicle

কল্পনা আক্তার বিষয়ে ব্লিঙ্কেনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাইবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তারের ‘জীবননাশের হুমকি’ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন যে বক্তব্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার ব্যাখ্যা (ক্ল্যারিফিকেশন) চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কল্পনা আক্তার আমাদের কারণে বা অন্য কারও দ্বারা হুমকি পেয়েছিলেন মর্মে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী তাকে উদ্বৃত করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এই ক্ল্যারিফিকেশনটা আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চাইব। বিশ্বব্যাপী শ্রম অধিকার রক্ষায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সই করা স্মারকের আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় গত ১৬ই নভেম্বর কল্পনা আক্তারের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিঙ্কেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুমোদন করা নতুন শ্রমনীতিতে শ্রম অধিকার হরণ করে এমন কার্যক্রমের জন্য দেশে দেশে নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নেয়ার বিধান রয়েছে। মার্কিন শ্রমনীতি ঘোষণায় বাংলাদেশের শ্রম অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের উদাহরণ টেনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেন, বাংলাদেশি গার্মেন্টসকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট কল্পনা আক্তারের মতো ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াতে চাই আমরা; কল্পনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার পক্ষে ভূমিকা রাখার কারণে এখনো তিনি বেঁচে আছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার যদি ঠিক মনে থাকে, কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে একবারই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ২০১০ সালে। তিনি একা নন, তার সাথে আরও একাধিক শ্রমিক নেতা চাকরিরত অবস্থায় আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাদের মামলাটি তুলে নেয়া হয়। রানা প্লাজা ধসের পর আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কল্পনা আক্তারের গ্রেপ্তার হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শাহরিয়ার বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর পশ্চিমা দেশের কিছু ক্রেতা যখন সেই ফ্যাক্টরিগুলোকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করল, তখন কল্পনা আক্তার এবং আরও দুয়েকজন মিলে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বাংলাদেশে তার জীবনের হুমকির কথা কল্পনা আক্তার কখনই সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাননি দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশ পুলিশের রেকর্ড চেক করেছি। প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা তাকে গিয়ে যদি জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

কথাটি আদৌ তিনি বলেছেন কিনা? বলে থাকলে কিসের ভিত্তিতে বলেছেন? এটা খোঁজার দায়িত্ব আমার মনে হয় সাংবাদিক ভাইবোনদের। কিন্তু তিনি যে হুমকি বোধ করেছেন, এটা অতীতে তিনি কখনই বাংলাদেশের কাউকে জানাননি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই আমরা ‘হুমকি’র সত্যতা খোঁজার চেষ্টা করবো। কল্পনার কার্যক্রমের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, কল্পনা আক্তার খুব সফলতার সাথে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে তার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। শ্রম অধিকার হরণ করলে বাণিজ্যসহ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞার ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই এমন মন্তব্য করে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, এই কমেন্টস গার্মেন্টস কেন্দ্রিক ছিল না। অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের এই বক্তব্য ছিল অ্যাপেক সামিটে, এটা শুধুমাত্র গার্মেন্টস শিল্প বা টেক্সটাইল শিল্প বা বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক কোনো বৈঠকে নয়। এটা একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যার মাধ্যমে তারা তাদের দূতাবাসগুলোর রাষ্ট্রদূতদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব অ্যাসাইন করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা সাপেক্ষে একজন লেবার অ্যাটাশে নিয়োগ দিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি কোনোভাবেই এই পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার  যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। মার্কিন দূতাবাসে শ্রম বিষয়ক কর্মকর্তাকে গ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রতিযোগী দেশগুলো বা যাদের সাথে প্রতিযোগিতা, সেসব রাষ্ট্রের কোথাওই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতটা সুবিধা পায় না, বা কোথাও এতটা সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায় না, যেটা বাংলাদেশ করেছে।

মানব জমিন
Exit mobile version