Site icon The Bangladesh Chronicle

করোনা মোকাবেলায় সুজনের ৩ প্রস্তাব, মৃতের সংখ্যার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার – ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের সংক্রামণ সারা বিশ্বে মহামারি আকার ধারন করেছে। বাংলাদেশেও এর দ্রুত বিস্তার ঘটছে। সরকারি হিসাব মতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ভাইরাসের কারণে ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, যদিও এ সংখ্যার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে বলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মনে করছে।

শনিাবর গণমাধমে দেয়া এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করেন সুজন সভাপতি ও তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম. হাফিজউদ্দিন খান ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। এমনি পরিস্থিতিতে নীতি নির্ধারকদের কছে তিন দফা দাবি পেশ করেছেন।

সুজনের তিন দফা দাবিতে বলা হয়েছে,

(১) করোনাভাইরাসের থাবায় বেকার হওয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দূরীকরণের লক্ষ্যে অবিলম্বে জোরালো কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করুন। এর জন্য প্রয়োজন হবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্নিত বিকেন্দ্রীভূত উদ্যোগ। আমরা আরো মনে করি, খাদ্য নিরাপত্তা দূর করার জন্য উত্তম ব্যবস্থা হবে খাবারের পরিবর্তে বিকাশ কিংবা রকেট এর মাধ্যমে বেকার হওয়া ব্যক্তিওদেরকে সরাসরি অর্থ প্রদান।

(২) সৃষ্ট পরিস্থিতি একটি জাতীয় দুর্যোগ। যা দ্বারা দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ঝুঁকিগ্রস্থ। আর এ দুর্যোগ অন্যান্য প্রকৃতিক দুর্যোগ থেকে ভিন্ন এবং এ ব্যাপরে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বহুমুখী বিশেষজ্ঞ জ্ঞান আবশ্যক। তাই রাজনীতিক ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি সর্বদলীয় জাতীয় কমিটি অবলম্বে গঠন করুন।

(৩) আমাদের নীতি নির্ধারণকে তথ্যভিত্তিক করার লক্ষ্যে করোনাভাইরাস সংক্রামণেরর ব্যপ্তি জানতে সরাদেশে ব্যাপকভাবে পরীক্ষার আয়োজন করুন।

সুজন নেতৃদ্বয় বিবৃতিতে বলেন, আমরা আসলে ভাল নেই। করোনাভাইরাসের কারণে অসংখ্য মানুষের শুধু জীবনের ঝুঁকিই সৃষ্টি হচ্ছে না, বেসরকারি খাতে বেকারত্বও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ বেকারত্বের বিরাট অংশেরই উৎস অপ্রতিষ্ঠানিক খাত। এদের অধিকাংশই দ্রুত ব্যবসায়ী, দিনমজুর, যারা মূলত দিন আনে দিনে খায়। এদের সঞ্চয় বলতে নেই বললেই চলে। তাই এদের বেকারত্ব ভয়াবহ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। ফলে করোনাভাইরাস একদিকে যেমন তাদের জন্য জীবনের ঝুঁকি তৈরি করছে, তেমনিভাবে তাদের বেকারত্বের কারণে সৃষ্ট খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাও তাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ দরিদ্র্য মানুষের জন্য করোনাভাইরাস মরার ওপর খাঁড়ার ঘার মত আবির্ভূত হয়েছে।

তারা বলেন, এমনি পরিস্থিতিতে দরিদ্র্য মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা এখন সবচেয়ে জরুরি। কারণ করোনাভাইরাসে না মরলেও অনাহারে তারা এবং তাদের পরিবার মৃত্যুবরণ করতে পারে। আমাদের অপ্রতুল, দুর্নীতিগ্রস্থ ও অদক্ষভাবে পরিচালিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী হঠাৎ বেকার হয়ে যাওয়া বিরাট জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না। প্রসঙ্গত, ১০ টাকা দমে প্রদত্ত চাল, তা পাওয়া গেলেও, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট নয়।

সুজন বলছে, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ভয়াবহ সমাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। ‘হাঙ্গরি ম্যান ইজ এংগ্রি ম্যান,’ যারা সহজেই সহিংস হয়ে উঠতে পারে এবং এদরকে সহজে দমন করা যাবে না। এরই মধ্যে আমরা ক্ষুধার্তদেরকে কিছু কিছু জায়গায় প্রতিবাদী হয়ে উঠতে দেখেছি। যেমন, নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় ত্রাণের দাবিতে একদল মানুষ কয়েক দিন আগে চেয়ারম্যানের বাড়ী ঘেরাও করছে। লকডাউন অব্যাহত থাকলে এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দ্রুত দূর করা না গেলে এ ধরনের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ব্যাপক আকার ধারন করতে পারে। তাই করোভাইরাসের কারণে বেকার হওয়া বিরাট জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা অবিলম্বে দূর করা জরুরি।

বিৃবতিতে তারা বলেন, এখানে নীতি নির্ধারকদের জন্য একটি বিরাট ডাইলেমা বা ধাঁধা। একদিকে দ্রুত লকডাউনের অবসান করোনাভাইরাসের সংক্রামণের বিস্তারের কারণে আনেক মানুষের মৃত্যু ঘটাবে। আবার সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করার জন্য লকডাউন বেশিদিন অব্যাহত রাখলে দরিদ্র্য মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে মারা যেতে পারে এবং এ থেকে সমাজে হানাহনি সৃষ্টি হতে পারে। তাই লকডাউনের সিদ্ধান্তটি একটি দূরূহ সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তের সাথে বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক, মানবিক ও রাজনৈতিক বিবেচনা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।

Exit mobile version