Site icon The Bangladesh Chronicle

করোনা মোকাবেলার হাতিয়ার হতে পারে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য

করোনা মোকাবেলার হাতিয়ার হতে পারে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য – নয়া দিগন্ত

আমি অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অস্বাস্থ্যকর বিনিয়োগের বিষয়ে কথা বলছি। অনেক লেখালেখিও করেছি। এক কথা বারবার শুনতে অনেকের হয়তো খারাপ লাগে। যখন কেউ একটি বিষ বোঝেন না তাকে বোঝানোর জন্য সেটি বারবার বলার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলোÑ এরপরও যারা দেশ পরিচালনা করছেন তারা স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কতটা ভেবেছেন সেই প্রশ্ন ওঠে। আজ যখন দেশ করোনাভাইরাসের মতো মহামারীর কবলে তখন স্বাস্থ্য খাতের অস্বাস্থ্যকর চিত্রটি অত্যন্ত প্রকটভাবে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। স্বাস্থ্য খাত যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অন্যান্য খাতের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে উৎপাদন যে ব্যাহত হবে। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে দক্ষ ও মানসম্মত শ্রমশক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। আমরা যখন স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের কথা ভাবি, তখন এর বিশাল অর্থনৈতিক দিকটি খতিয়ে দেখি না। অথচ স্বাস্থ্য খাতে যথাযথ বিনিয়োগ ও দূরদর্শী নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে এটি আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারত।

অসুস্থ ব্যক্তিকে ঘরের বাইরে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার উদ্যোগ অটোম্যান সাম্রাজ্য তথা তুরস্কে প্রথম সূচনা হয়েছিল। তখন হাসপাতালে চিকিৎসা করাকে সেবার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো, পণ্য হিসেবে নয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যসেবা একটি অস্বাস্থ্যকর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে, যা সেবা না হয়ে হয়েছে শোষণের হাতিয়ার। অহেতুক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে দিয়ে রোগীদের হয়রানি করার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। চিকিৎসা চালানো প্রায়ই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিষেধক অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম- কথাটি আমাদের হাসপাতালগুলো যেন প্রায় ভুলেই গেছে। চিকিৎসার নামে অনেক বিদেশী মালিকানাধীন হাসপাতাল এখানে রীতিমতো শোষণ চালাচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তারা হয়তো কিছুটা উন্নত কিন্তু তাই বলে তাদের কাছে সবকিছুর সমাধান আছে তা নয়। করোনাভাইরাস আজকে পশ্চিমা চিকিৎসাব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে দিয়েছে।

আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের দিকে তাকালে দেখা যায়, এটা কোনো সুস্থ বিনিয়োগ নয়। আর্ত মানবতার সেবায় জীবন উৎসর্গ করেছেনÑ এমন চিকিৎসকের উদাহরণ আমাদের দেশে কম নেই। পাশাপাশি, আরেক দল চিকিৎসকের প্রসঙ্গ উঠলে তাদের নামের পাশে নানা নেতিবাচক বিশেষণ যোগ করা হয়। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে যে সুষ্ঠু বিনিয়োগ হয় না, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশে হাসপাতাল নির্মাণের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। অথচ সেই হাসপাতালে না আছে পর্যাপ্ত ডাক্তার, না আছে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসামগ্রী। হাসপাতালে ড্রাইভারবিহীন অ্যাম্বুলেন্স ও অ্যাম্বুলেন্সবিহীন ড্রাইভার খুবই সাধারণ ঘটনা। সরকারি খাতে চিকিৎসার সুযোগ সীমিত হওয়ায় বেসরকারি খাতে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া খারাপ কিছু ছিল না; কিন্তু আদৌ কি তা হয়েছে। এগুলো তো আদতে সামাজিক শোষণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

আমরা ছেলেবেলায় দেখেছি, ডাক্তাররা রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেই অনেক রোগ নির্ণয় করতে পারতেন। তখন ডাক্তররা বেশি মেধাবী ছিলেন সে কথা বলা যাবে না। তারা ছিলেন আন্তরিক এবং সেবার ব্রত নিয়ে তারা চিকিৎসা করতেন। যা আজ কদাচিৎ দেখা যায়। আজ রোগ নিরাময় নয়, বরং রোগ জিইয়ে রেখে ব্যবসায়িক মুনাফা অর্জনই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ আমাদের বড় বড় ডিগ্রিওয়ালা ডাক্তারদের কাছে কেউ গেলে রোগী দেখার আগেই একগাদা টেস্ট লিখে দেন। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমি অনেক দিন ধরে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছি। শুধু নিয়ন্ত্রণে আনলেই হবে না, সরকারকে বিকল্পও দিতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে এখনো ঔপনিবেশিক মনোভাব প্রকট। কেউ একজন প্রশাসনের কাছে কোনো কিছুর অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। প্রশাসনের পছন্দ না হলে সে অনুমতি পাবে না। কেন অনুমতি দেয়া হচ্ছে না সে কথাও বলা হবে না। কী করলে অনুমতি পাওয়া যাবে সেটি বলবে না।

সম্প্রতি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তৈরি করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট নিয়ে যেসব কাহিনী পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে তাতে এটা সহজেই বোঝা যায়। করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যে কিট তৈরি করেছে তার কার্যকারিতা পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা করা হচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী। তার নিঃস্বার্থ দেশসেবা এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আজীবনের সাধনা সম্পর্কেও কেউ অনবহিত নয়। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে তার সম্পৃক্ততার কথাও আমরা জানি। তিনি সরকারের কাজের সমালোচনা করে সাম্প্রতিক অতীত পর্যন্ত অনেক বক্তব্য দিয়েছেন।

কিন্তু আমি মনে করি, দেশের এই ক্রান্তিকালে সরকার যদি তার প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে আমাদের জাতীয় ঐক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। আর সেটি হলো ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ বা ‘ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি’। এই দেশের ১৭ কোটি মানুষের চিন্তাধারা এক হবে না। তাদের লালিত বিশ্বাসের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকাটাই স্বাভাবিক। ফলে ড. জাফরুল্লাহর উদ্ভাবিত কিট কি গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূচনাবিন্দু হতে পারে না? এই দুঃসময়ে তার কাজটিকে সাধুবাদ দেয়া উচিত। ভিন্নমতের হওয়ার পরও তিনি করোনা টেস্ট কিট তৈরি করে সরকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি তো এমনটা ভেবে বসে থাকেননি যে, দেশ করোনামুক্ত হলে তার কৃতিত্ব সরকার নিয়ে যাবে। আমরা সাধারণভাবে দেখি যে, কারো বিপদের সময় তার কোনো শত্রু যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে তাদের মধ্যে যে হৃদ্যতার পরিবেশ সৃষ্টি হয় তা চিরকাল অটুট থাকে। অথচ প্রতিপক্ষকে জয় করার এই সামাজিক কৌশলটি গ্রহণ করতে পারেনি আমাদের সরকার। বৈশ্বিক মহামারীর সময়টিতে মহানুভবতা দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে জয় করার সুযোগ ছিল।

কেউ মহানুভবতা দেখালে সে খাটো হয় না। দয়া, ভালোবাসা বা প্রেম দেখালে মানুষ খাটো হয় না। মানুষ খাটো হয় বরং হিংসা দেখালে। সরকার তো পারত গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিটগুলো পরীক্ষা করে দেখতেÑ আসলেই এগুলো কার্যকর কি না। যেহেতু সরকার আইনি সংস্থা, পাশাপাশি সরকারের হাতে পরীক্ষা করার উন্নত যন্ত্রপাতি, বিশেষজ্ঞ জনবল রয়েছে তাই সরকারের এটা করা উচিত ছিল। সত্যিই যদি তার কিটগুলো কার্যকর কিছু হয় তাহলে সরকারের উচিত হবে সেগুলো গ্রহণ করা। কারণ এখন ঐক্য দেখানোর সময়। করোনাভাইরাস তো কোনো দল-মত, ধর্ম দেখে আক্রমণ করছে না। সবাইকে আক্রমণ করছে। ফলে একে মোকাবেলা করতে হবে দল-মত নির্বিশেষে। এখন সময় এসেছে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উদ্যোগটি নিতে পারেন। সাধারণ মানুষ তো এমন দুর্যোগের সময় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে অপেক্ষা করেই আছে। কয়েক দিন আগে আমরা দেখেছিলাম, নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় এক কমিশনার নিজে মুসলমান হয়ে করোনায় মারা যাওয়া সনাতন ধর্মের এক ব্যক্তির সৎকারের ব্যবস্থা করেছেন নিজে উপস্থিত থেকে। এটাই মানবতার সত্যিকারের উদাহরণ। এতে বোঝা যায়, আমাদের মন থেকে মানবতাবোধ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, দরদ উবে যায়নি। ছোট দয়া দেখাতে গেলে মানুষ ভাবে সে ধান্দাবাজ। কিন্তু বড় দয়া দেখালে তা ভাবে না, মনে করে মহানুভবতা।

করোনা পরিস্থিতি আমাদের সামনে বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতিগুলো উজ্জীবিত করার তাগিদও দিচ্ছে। হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডের মানুষ ভেষজ, কবিরাজি, ইউনানি চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল ছিল। এসব চিকিৎসাব্যবস্থার সাথে যারা জড়িত তাদের কাছ থেকেও মতামত নেয়া যেতে পারে কিভাবে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটির মোকাবেলা করা যায়। তাদের অভিজ্ঞতা সরকার কাজে লাগাতে পারে। বর্তমান অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা চালুর আগে তো এই ব্যবস্থাই আমাদের সমাজে প্রচলিত ছিল। ফলে এই খাতের মেধাবীদের গবেষণার কাজে লাগানোর এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ এখন যারা গবেষণা করবে তারা অনুপ্রাণিত হয়ে করবে। প্রধানমন্ত্রী যদি এমন কোনো উদ্যোগের ডাক দেন তাহলে আমার বিশ্বাস, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।

চিকিৎসা প্রসঙ্গ এলে আমরা সবসময় নিরাময়যোগ্য (কিউরেটিভ) প্রতিষেধক নিয়ে আলোচনা করি; প্রতিরোধমূলক (প্রিভেনটিভ) ব্যবস্থা নিয়ে তেমন আলোচনা করা হয় না। শুধু উপদেশ বা কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দিয়ে আমরা যে অনেককে বহু জটিল ও কঠিন রোগ থেকে বাঁচাতে পারি, সে কথা খুব কমই ভেবে থাকি। কিউবা সরকার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্বাস্থ্যসেবায় অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে। এর মাধ্যমে সেখানে স্বাস্থ্যসেবার যে উন্নতি হয়েছে, তাতে ৪০০ ডলারে যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, তা পেতে শক্তিধর ও উন্নত প্রতিবেশী দেশ আমেরিকায় ২২ গুণ বেশি অর্থ, অর্থাৎ ৯ হাজার ডলার খরচ করতে হয়।

হিসাব করে দেখা গেছে, রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগের প্রতিরোধ শতকরা ২০০ ভাগ বেশি সাশ্রয়ী। কারো যক্ষ্মা হলে তার চিকিৎসা করা হয়; কিন্তু তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের যাতে এই রোগ না হয়, সে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। আমরা সহজেই এমন হাসপাতালের কথা ভাবতে পারি যেখানে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার ওপর জোর দেয়া হবে। যে এলাকায় যে রোগের প্রকোপ বেশি, সে এলাকায় সে ধরনের প্রতিরোধমূলক হাসপাতাল স্থাপন করা গেলে সংশ্লিষ্ট রোগের প্রকোপ কমে আসবে। আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থায় বিষয়টি থাকলেও তা এত বেশি অবহেলিত ও অনুল্লেখযোগ্য অবস্থায় রয়েছে, যা না থাকারই নামান্তর। আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থায় আরো যে বিষয়টির অভাব তা হলো হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ বা সার্বিক চিকিৎসাব্যবস্থা। যেমন- কেউ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা যেন এই রোগে আক্রান্ত না হয়, সে ধরনের ফলোআপ চিকিৎসার ব্যবস্থা হলো হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ।

এরই অংশ হিসেবে মানুষকে স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন করতে নিজ জেলা সিরাজগঞ্জে আমার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা রয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলোÑ প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, নিরাময়মূলক স্বাস্থ্যসেবা নয়। আবার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যেও ভাগ আছে। আমি স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। শুনতে হাস্যকর মনে হলেও মানুষকে হাসপাতাল থেকে দূরে রাখা আমার লক্ষ্য। এর মানে হলো মানুষ যেন রোগী হয়ে হাসপাতালে না আসে এবং হাসপাতালে মানুষকে আসতে না হয় সেই ব্যবস্থা করা। সুস্থ মানুষকে পরীক্ষা করে দেখা যে সে আসলে নিজের অজান্তে কোনো রোগ বহন করছে কি না। আমরা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছি যেন সে নিজেকে পরীক্ষা করিয়ে নেয়। এ জন্য বিনামূল্যে মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করা হচ্ছে। আমরা দেখেছি, অনেকেই জানেন না যে তিনি অসুস্থ। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা বছর এই কর্মসূচি চালিয়ে চাওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জের হাসপাতালটিতে এই কার্যক্রম শুরু হয় করোনাভাইরাস সংক্রমণের অনেক আগে। কিন্তু এখন তা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। এটাও আমার একটি সামাজিক পরীক্ষণ। পরিশেষে দেখা হবে, যে এলাকার মানুষ সচেতন হয়েছে তাদের তুলনায় অন্যান্য এলাকার মানুষ চিকিৎসার জন্য কত বেশি বা কম সংখ্যায় হাসপাতালে যাচ্ছে। আমি মনে করি, এ ধরনের যেকোনো উদ্যোগে সহায়তা করতে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। সরকার নিজেই এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে অথবা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।

মানুষ যদি স্বাস্থ্যসচেতন হতো তাহলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় আমাদের কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র থেকে মানুষজন পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনতে হতো না। অথবা কেউ কোয়ারেন্টিনে থাকলে তাকে দেখার জন্য লোকজন ভিড় করত না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সরকারকে এত প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হতো না। মানুষ সচেতন হলে তারা নিজেদের থেকেই এসব বিধান পালন করত।

করোনাভাইরাসের বিস্তার আমাদের অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি থেকে শুরু করে প্রতিটি ব্যবস্থাকে যেভাবে নাড়া দিয়েছে তখনই আমি মনে করি আমাদের বাতিল, অকার্যকর ও পশ্চিমাদের থেকে ধার করা, ঔপনিবেশিক ধ্যানধারণাগুলো ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সব কিছু নতুন করে সাজানোর সময় এসেছে। যাকে বলা হয় প্যারাডাইস চেঞ্জ বা আমূল পরিবর্তন।

লেখক : ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ।

Exit mobile version