Site icon The Bangladesh Chronicle

করোনায় স্বাস্থ্যখাত ও সুশাসন নিয়ে টিআইবি গভীরভাবে বিস্তৃত দুর্নীতি প্রকটভাবে উন্মোচিত

গভীরভাবে বিস্তৃত দুর্নীতি প্রকটভাবে উন্মোচিত – ছবি – সংগৃহীত

#সরকারের গৃহীত কার্যক্রমে সুশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি
#দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের রাাজনৈতিক বিবেচনায় আড়াল করা হচ্ছে
#পরীক্ষাগারের ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় সক্ষমতার ঘাটতি

করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ (দ্বিতীয় পর্ব) শীর্ষক গবেষণাপত্রে এসব উল্লেখ করা হয়। মঙ্গলবার ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়। পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করে অনলাইন ও টেলিফোন জরিপের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ, ত্রাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে এই গবেষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন মো. জুলকারনাইন ও মোরশেদা আক্তার।

টিআইবি বলছে, চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনিয়ম-দুর্নীতি, নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে হয়রানি, অনিয়ম ও দুর্নীতি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতি, সরকারি ক্রয়ে দুর্নীতি, করোনা সংক্রমণ সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশে ঘাটতি, কমিউনিটি পর্যায়ে সংক্রমণ বিস্তার রোধে কার্যকরতার ঘাটতি, হাসপাতালে মানসম্মত সুরক্ষা সামগ্রীর ঘাটতি, হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতার ঘাটতি, চিকিৎসা ব্যবস্থায় সক্ষমতার ঘাটতি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সাড়া প্রদানে ঘাটতি, প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বিতরণে বৈষম্য, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণে ঘাটতি গবেষণায় ধরা পড়েছে। সরকারি তথ্যমতে, সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার জন্য আইসিইউ শয্যার সংখ্যা মাত্র ৫৫০টি, ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ৪৮০। আর এই সুবিধার অধিকাংশ ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। ফলে প্রয়োজনের সময় আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট না পাওয়ার কারণে অনেক রোগীর জীবন হুমকির মুখে পড়ছে বলে সংস্থাটি বলছে। সারাদেশে করোনা পরীক্ষাগারের সংখ্যা বাড়লেও এখনো প্রতিবেদন পেতে এক থেকে পাঁচ দিনের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো ৩৪.৪শতাংশ সেবা গ্রহীতাকে তিন বা ততোধিক দিন প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি যারা প্রতিবেদন দেরিতে পাচ্ছেন, অপেক্ষার কয়েকদিন তাদের দ্বারা অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও জরিপে সেবাগ্রহীতাদের ৯.৯ শতাংশ নমুনা পরীক্ষায় ভুল প্রতিবেদন পাচ্ছেন। যাচাই না করার ফলে লাইসেন্সবিহীন এবং ভুয়া হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা পরীক্ষা করার চুক্তি সম্পাদন করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মাঠ পর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কোনো পরীক্ষা না করেই ১৫ হাজার ৪৬০ জনকে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়।

দুর্নীতির ব্যাপারে টিআইবি গবেষনা বলছে, জরুরি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ লঙ্ঘন করে বিভিন্ন প্রকল্পে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি ব্যবহার করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অনেক ক্ষেত্রে মৌখিক আদেশে ক্রয় করা হয়েছে, এবং কোনো ক্রয়ে ই-জিপি ব্যবহার করা হয় নি। কয়েকটি সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য খাতের সকল ধরনের ক্রয় নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে। এসব সিন্ডিকেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিএমএসডি, বিভিন্ন হাসপাতালের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দুদকের কিছু কর্মকর্তার সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগও পাওয়া যায়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মোকাবিলায় আক্রান্ত চিহ্নিতকরণ, কোভিড চিকিৎসা, কমিউনিটি পর্যায়ে সংক্রমণ রোধ, ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতীয় ও স্থানীয় উভয় পর্যায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতা চলমান রয়েছে। বিশেষকরে স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও প্রশাসন বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা সংক্রান্ত অর্ধশতাধিক কমিটি করা হলেও তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই, বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করা হয় না, জাতীয় কমিটির সাথে এসব কমিটির যোগাযোগ ও সমন্বয়ের ঘাটতি লক্ষ করা গেছে।

গবেষণায় টিআইবি বলছে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলার প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ মতামত উপেক্ষা করে এখনো আমলানির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা বিদ্যমান। শীত মৌসুমে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কার্যকর প্রস্তুতির অভাব। শহরকেন্দ্রিক ও বেসরকারি পর্যায়ের বাণিজ্যিক সেবা সম্প্রসারণ, পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এই সেবা থেকে বঞ্চিত করছে এবং হয়রানি ও অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। নমুনা পরীক্ষা, চিকিৎসা এবং করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় গৃহীত প্রণোদনা কর্মসূচির ক্ষেত্রেও সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত অংশের অনুক‚লে পক্ষপাত করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা সেবা ও প্রণোদনার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে এখনো পৌঁছেনি।

Exit mobile version