আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যাংকের সুদহার কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনুসর। তিনি জানিয়েছেন, দেশে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে কিছুটা সফল হয়েছে বর্তমান সরকার। আশা করা হচ্ছে শিগগিরই মূল্যস্ফীতি আরো কয়েক শতাংশ কমবে। এই হার তিন শতাংশের ঘরে নামার সম্ভাবনাও দেখছেন তিনি। গতকাল বুধবার আমার দেশকে এসব কথা বলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
এদিকে এই আশাবাদ থেকে ব্যাংকের সুদহার কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে গভর্নর এটাও বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের মধ্যে নামলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি বর্তমানে সাড়ে ৮ শতাংশ। আজ বৃহস্পতিবার চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতির অনুষ্ঠানে এমন ঘোষণা আসবে বলেও জানান গভর্নর।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে দুটি দিক থেকেই পলিসি নিতে হয়। একটি হলো সরবরাহের দিক থেকে; অন্যটি চাহিদার দিক থেকে। আমরা প্রথমে চাহিদার দিকটি নিয়ে কাজ করেছি। চাহিদাকে সংকুচিত করার জন্য সুদহার বাড়াতে হয়েছে। সুদহার বাড়ানোর কারণে ব্যাংক ঋণ ও তারল্য ব্যবস্থা সংকুচিত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে চাহিদাকেও সংকুচিত করা হয়। আবার চাহিদার দিক থেকে সরকারও বাজেট সংকুচিত করেছে।
অপরদিকে সরবরাহের দিক থেকে গত বছরের এই সময়ে চরম ডলার সংকট ছিল। পাশাপাশি ডলার সংকট থাকলেও এলএনজি, সার ও বিদ্যুতের মতো কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে আমদানিতে সংকট হতে দিইনি। যাদের কাছে বেশি ডলার ছিল, আমরা তাদের থেকে নিয়ে অন্যদের দিয়ে সরবরাহ চাহিদা পূরণ করেছি। আবার ডলার মার্কেটও স্থিতিশীল রাখা হয়েছে। ডলারের রেট প্রথমে ব্যাংকগুলোকে ১২২ টাকায় রাখতে বলেছি। পরবর্তীতে মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। অনেকে ভেবেছেন মার্কেটের ওপর ছাড়লে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা হয়ে যাবে। তবে আমাদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মার্কেটে ডলার রেট নির্ধারণ হচ্ছে। ডলার বাজার স্থিতিশীল থাকাটাও মূল্যস্ফীতি কমাতে ভূমিকা রেখেছে।
তবে মূল্যস্ফীতি যে পরিমাণ কমেছে, তা নিয়ে খুশি নন জানিয়ে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে—এতে আমি খুশি নই, আরো কমাতে হবে। আমার লক্ষ্য, এটা তিন শতাংশে নিয়ে যাওয়া। দায়িত্ব নিয়ে মূল্যস্ফীতি ১২ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশে নিয়ে এসেছি। এখানে ৪ শতাংশ কমেছে। আর ৪ শতাংশ কমলেই তিন শতাংশে নেমে আসবে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন ৩ শতাংশে রাখতে পারলে আমরা কেন পারব না। আমাদেরও তা হতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন শতাংশে নামিয়ে আনার জন্যও কাজ করছে।
ঋণের সুদহার কমানোর বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূলস্ফীতি যখন পলিসি রেট বা নীতি সুদহার থেকে তিন শতাংশ নিচে থাকবে, তখনই সুদহার কমানো হবে। এখন পলিসি রেট ১০ শতাংশে আছে; অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে এলেই সুদহার কমিয়ে আনা হবে।
সুদহার কিছুটা কমা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার গত কয়েক মাসে ১২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে পলিসিতে কোনো হস্তক্ষেপ করা হয়নি। তবে একটি জায়গায় করেছি, যেটি হলো ওভার নাইট রেট। যেটা আগে সাড়ে ৮ শতাংশ ছিল, তা এখন ৮ শতাংশ করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা রেখে ব্যাংকগুলো যাতে মুনাফা করতে না পারে। বিনিয়োগ করেই ব্যাংকগুলোকে মুনাফা করতে হবে। এই রেট ভবিষ্যতে আরো কমানো হবে।