Site icon The Bangladesh Chronicle

ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট : শিখ নেতা পান্নুন হত্যাচেষ্টায় ‘র’ জড়িত

খালিস্তানপন্থি আন্দোলনের অন্যতম নেতা গুরপাতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্র করেছিল ভারতের রিসার্স অ্যান্ড এনালাইসিস উইং বা ‘র’।  যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে এমন খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। এ বিষয়ে তারা নয়াদিল্লি, ওয়াশিংটন, অটোয়া, লন্ডন, প্রাগ এবং  বার্লিনে কয়েক ডজন কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ এবং টার্গেটেড ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এসব কিছুর ওপর ভিত্তি করে দীর্ঘ ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি।

এতে বলা হয়, চীনের বিরুদ্ধে বড় অংশীদার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে গত বছর ব্যতিক্রম স্বাগত জানায় হোয়াইট হাউস। এর সাউথ লন সাজানো হয়েছিল ফুটন্ত পদ্ম দিয়ে। এটি মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতীক। তাকে ভেজিটারিয়ান মেনু উপহার দেয়ার জন্য ক্যালিফোর্নিয়া থেকে উড়িয়ে নেয়া হয় একজন শেফকে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে অভিন্ন সম্পর্কের কথা বলেন। কিন্তু ভারতীয় এই নেতা যখন ২২শে জুন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে মোদির সবচেয়ে কট্টর সমালোচকদের একজনকে হত্যা করতে একটি টিম ভাড়া করার চূড়ান্ত নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্স অ্যান্ড এনালাইসিস উইংয়ের একজন কর্মকর্তা বিক্রম যাদব লিখেছেন, এখন অগ্রাধিকার হলো হত্যাকা-। ওয়াশিংটন পোস্ট আরও লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রে এবং কানাডায় ভিন্নমতাবলম্বী, যারা অন্য দেশগুলোতে সুরক্ষা চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে বিস্তৃতভাবে হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র সাজায় ভারত। এসব মানুষের জন্মভূমির সরকার ক্রমবর্ধমানহারে তাদের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে। সীমান্তের বাইরে রাজনৈতিক শত্রুদের বশে আনতে পাঠানো হয় এজেন্টদের।

ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, কর্মকর্তারা এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি অভিযোগ অনুযায়ী, নিউ ইয়র্কে ভাষণ দেয়া সহ শিখ নেতা গুরপাতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে টার্গেট করতে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিক্রম যাদব। এই বিক্রম যাদবের পরিচয় ও সংশ্লিষ্টতা আগে থেকে রিপোর্ট করা হয়নি। তবে পরে তা প্রকাশ হওয়ায় এই হত্যাচেষ্টায় এখন পর্যন্ত এটাই হলো সবচেয়ে বড় প্রমাণ। তবে এই পরিকল্পনা ভ-ুল করে দেয় মার্কিন কর্তৃপক্ষ। পশ্চিমা বর্তমান ও সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, হত্যার ষড়যন্ত্রে র-এর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা জড়িত। এসব তথ্য জানা গেছে সিআইএ, এফবিআই ও অন্য এজেন্সিগুলোর তদন্তে। মার্কিন সরকার, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা মূল্যায়ন করে দেখেছে যে, পান্নুনকে টার্গেট করা মিশনের অনুমোদন দিয়েছিলেন ওই সময়ে র-এর প্রধান সামন্ত গোয়েল। এই অপারেশন সম্পর্কে জানেন ভারতের এমন একজন সাবেক সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা এর আগে ওয়াশিংটন পোস্টকে যেসব তথ্য দিয়েছেন তার সঙ্গে এই মূল্যায়ন সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ওই কর্মকর্তা বলেছেন, বিদেশে কথিত শিখ উগ্রপন্থিদের হুমকিকে নির্মূল করে দিতে চরম চাপে ছিলেন সামন্ত গোয়েল। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো মূল্যায়ন করে বলেছে, শিখ নেতাদের হত্যা পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্ভবত জানতেন মোদির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। কিন্তু কর্মকর্তারা বলেছেন, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে অজিত দোভাল এবং সামন্ত গোয়েলকে ফোন ও টেক্স মেসেজ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। কিন্তু দু’জনের একজনও সাড়া দেননি। উত্তর আমেরিকায় ভারতীয় গুপ্তচর হত্যা ষড়যন্ত্র এবং র-এর ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী বৈশ্বিক ভঙ্গির এই ধারাটি পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কানাডা, বৃটেন, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ার তিন ডজনেরও বেশি বর্তমান ও সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারে। বিষয়টিতে নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং স্পর্শকাতরতা থাকায় তাদের বেশির ভাগই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। উত্তর আমেরিকায় এমন প্রাণঘাতী অপারেশন ভারত যে চালাবে, তাতে পশ্চিমা নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিস্মিত। এর মধ্য দিয়ে ভূরাজনৈতিক বড় পরিবর্তনকেই ফুটিয়ে তোলে। ভারত এখন নিজেকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার নতুন যুগে একটি উদীয়মান শক্তি হিসেবে দেখছে।

ভারত কেন যুক্তরাষ্ট্রের মতো জায়গায় হত্যা পরিকল্পনার ঝুঁকি নিতে যাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে পশ্চিমা নিরাপত্তা বিষয়ক একজন কর্মকর্তা বলেন, এর কারণ হলো তারা মনে করেছিল এ থেকে পার পেয়ে যাবে। কর্মকর্তারা বলছেন, এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় ভারতীয় যেসব প্রবাসী থাকেন তাদের বিরুদ্ধে র-এর আগ্রাসী তৎপরতার অংশ ছিল ওই ব্যর্থ হত্যাচেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রে এই হত্যাপ্রচেষ্টা চালানো হয় কানাডার ভ্যানকোভারে শিখ অধিকারকর্মী হরদিপ সিং নিজারকে হত্যার প্রায় কাছাকাছি সময়ে। ১৮ই জুন ভ্যানকোভারে সারে এলাকায় একটি শিখ উপাসনালয়ের বাইরে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয। পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, এর সঙ্গেও যোগ ছিল যাদবের। পাকিস্তানে যখন সহিংসতার একটা ঢেউ চলছিল, তখনই এ দুটি হত্যা বা হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। নির্বাসনে থাকা ১১ জন শিখ বা কাশ্মীরিকে হত্যা করা হয় গত দু’বছরে। মোদি সরকার তাদেরকে সন্ত্রাসীর লেবেল লাগিয়ে দিয়েছিল।

ভূরাজনৈতিক শক্তির পরিবর্তনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য পশ্চিমা সরকারগুলো নিষ্পেষণের এই ধারা টেনে ধরতে লড়াই করছে। ভিন্নমতাবলম্বী গ্রুপের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য খুব কমই পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়েছে ভারতকে। এর কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য মিত্ররা চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতার নতুন এক যুগে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায়। সীমান্তের বাইরে এই নিষ্পেষণ চালানো হয় বিভিন্ন ভাবে। এর মধ্যে আছে সহিংসতা, হয়রানি এবং নজরদারি। গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের ক্ষেত্রে চীনকে টপকে যায় ভারত। তারাও কয়েক ডজন অন্য দেশের মতো এমন একই কৌশল অবলম্বন করছে। ফলে প্রায় প্রতিটি মহাদেশেই ভিন্নমতাবলম্বীদের জন্য স্থান সংকুচিত হয়ে আসছে।

manabzamin

Exit mobile version