Site icon The Bangladesh Chronicle

এ নির্বাচন সরকারের ‘স্পেশাল ইলেকশন অপারেশন’

এ নির্বাচন সরকারের ‘স্পেশাল ইলেকশন অপারেশন’কোলাজ

সরকারের তরফ থেকে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার সব চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে একাধিক দলের অংশগ্রহণ, প্রার্থী সংখ্যাসহ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এবারের ভোটকে সরকারের ‘স্পেশাল ইলেকশন অপারেশন (বিশেষ নির্বাচনী কার্যক্রম)’ হিসেবে দেখছেন পশ্চিমা কূটনীতিকরা। নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ নির্বাচনী কার্যক্রম চলমান বলে নিজ নিজ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে পশ্চিমা বলয়ের দেশগুলো। কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা থেকে দূতাবাসগুলোর পাঠানো প্রতিবেদনে গত ১৭ ডিসেম্বর একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারে আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপি নেতাদের কারাগার থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে বিএনপি সেই প্রস্তাবে সায় দেয়নি। দেশে অস্থিতিশীলতা এড়াতে বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক রাখা ছাড়া সরকারের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না বলেও আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন।

এদিকে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন ঘিরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এবং শরিকদের অসন্তোষের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অসন্তোষের কারণ হিসেবে বর্তমান ৭০ সংসদ সদস্যের (এমপি) মনোনয়ন না পাওয়া, বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের পরিচিত মুখের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়া, ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মাত্র ছয়টি আসন দেওয়া, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ‘ডামি প্রার্থীর’ সমর্থনে দলটির বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের মতো বিষয়গুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ দলীয় জোট শরিকদের জন্য আওয়ামী লীগ মনোনীতরা পরে আসন ছেড়ে দিলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখনও নির্বাচনী দৌড়ে রয়েছেন। ফলে শরিকরা জয় নিয়ে সংশয়ে আছে। সেই সঙ্গে বিশাল সংখ্যক আওয়ামী লীগ প্রার্থী ক্ষুব্ধ। কারণ, তাদের নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চাপে পড়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও ওই সব আসনে  আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবেন জাপা নেতারা। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতে বিশ্বাসযোগ্যতায় আরও ফাটল তৈরি করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ঢাকায় থাকা পশ্চিমা বলয়ের বেশির ভাগ দূতাবাস এ প্রতিবেদন নিজ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। প্রতিবেদনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য কোনো দেশ জানাতে চায়নি। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে পশ্চিমা এক রাষ্ট্রদূত সমকালকে বলেন, হেডকোয়ার্টারে প্রতিবেদন পাঠানো আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ। এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কোনো সংযোগ নেই। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

জানা গেছে, প্রতিবেদনে ১৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আহূত হরতালের প্রসঙ্গটিও এসেছে। নির্বাচন ঘিরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে দমন এবং বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের বিষয়গুলোও তাদের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের অন্তত ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গাদাগাদি করে জেলে আটক রাখা, কারাবন্দি অবস্থায় নির্যাতনের বিষয়টিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচন ঘিরে যেসব সহিংসতা হচ্ছে, তা নিয়ে নিজেদের মূল্যায়ন তুলে ধরেছে ঢাকার দূতাবাসগুলো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন যেসব সহিংস ঘটনা ঘটে চলেছে, তা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই চালাচ্ছে না। দুই রাজনৈতিক শিবিরের সদস্যরাই নিজেদের শক্তিমত্তা দেখানোর জন্য বলপ্রয়োগ করে চলছে। ১৯ ডিসেম্বর ঢাকামুখী একটি ট্রেনে আগুন দেওয়ায় চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। বিয়োগান্ত ওই ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি একে অন্যকে দোষারোপ করলেও প্রকৃত অপরাধী এখনও আড়ালেই থেকে গেছে।

এদিকে গতকাল রোববার সকালে জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন অবাধ হতে হবে। দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সবার মিলিত প্রচেষ্টা ও দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। দেশে ও বহির্বিশ্বে এ নির্বাচন প্রশংসিত হবে, জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে।

নির্বাচন কমিশন বা কোনো মন্ত্রী সনদ দিলে নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হয়ে যাবে না জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের প্রতিনিধিরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বারবার দেখা করেছেন, তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা আশা করেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

একই অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য না হলে বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। আমরা শুধু আমাদের দৃষ্টিতেই এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করলে হবে না। আমাদের দিকে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। আমরা যদি নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য করতে না পারি; তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বাংলাদেশের সব বিষয়; বিশেষ করে আর্থিক, সামাজিক, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু থমকে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।

সমকাল

Exit mobile version